Ajker Patrika

সোনালুর হলদে মায়া

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
সোনালুর হলদে মায়া

‘এই যে অমলতাস, গাছ, পাখি ছেড়ে মাটিতে নেমে এসো তো বাবা। এখন সংখ্যাকে একটু ভালোবাসো দেখি।’ এভাবে শুরু হয়েছিল পূর্বিতা পুরকায়স্থর গল্প ‘অমলতাস’। একটু খটকা লেগেছিল বটে শব্দটি দেখে—অমলতাস! গুগল জানাল, এটি আসলে আমাদের অতিপরিচিত সোনালু ফুলের নাম। বানরলাঠি বা সোনালু ফুলের এ নাম রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

সেই থেকে শব্দটি মাথায় গেড়ে বসেছে। কারণ, মানিকগঞ্জের যে প্রান্তেই যান না কেন, এই গ্রীষ্মে দেখা মিলবে অমলতাস ওরফে সোনালু কিংবা বানরলাঠি অথবা সোনাইল নামের হলুদবরণ ফুলটির। এ ফুলের আরেক নাম কর্ণিকা। কিন্তু  কর্ণিকা শব্দটি মনে এলে মাথায় ঘুরতে থাকে বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটের কথা, যেখানে খুলে পড়েছিল পৌরাণিক দেবী সতীর কর্ণকুণ্ডল বা কানের দুল। তাই বলে, কর্ণিকা মানে কানের গয়নাবিশেষ।

এই গ্রীষ্মে মানিকগঞ্জের পথেপ্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা সোনালুগাছে ফুল দেখলে আপনার হঠাৎ মনে হতে পারে, কিসের সঙ্গে যেন এর মিল আছে! এরপর খেয়াল করলেই দেখবেন, সোনালু বা অমলতাস ফুল কানের দুলের মতো। অথবা এর আকৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করা হয়েছিল বিশেষ ধরনের কানের গয়না। ছে ধরা থোকা থোকা সোনালু দেখে মনে হবে, অসংখ্য কানের দুল ঝুলে আছে কোনো নারীর কানে!

অমলতাস ফুল নিয়ে আলাপে বারবার মানিকগঞ্জের কথা আসছে। এর কারণ, ঘিওর উপজেলাসহ প্রায় পুরো মানিকগঞ্জে এখন দৃষ্টি মেললেই হলুদবরণ সোনালু বা অমলতাস ফুলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বলা যায়, মানিকগঞ্জে এখন হলুদের সমারোহ। তবে গাছপালায় ভরপুর ঘিওরের প্রতি সোনালুর পক্ষপাতিত্ব যেন একটু বেশি। ঘিওর থানার মোড় থেকে বরঙ্গাইল সড়ক, উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে কালিয়াজুরি, কেল্লাই-নালী, রাথুরা-তরা সড়ক, জাবরা-বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, তেরশ্রী সড়ক, পঞ্চরাস্তা মোড়, বরটিয়া-টেপড়া সড়কের দুই পাশে, মহাসড়কের জোকা-পুখুরিয়া-বাষ্টিয়া সড়ক, পয়লা সড়ক, আশাপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার পথেপ্রান্তরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা হাটবাজার, পুকুরের ধারে সোনালু যেন হলুদের পসরা সাজিয়ে বসেছে।

ঘিওর উপজেলার জোকা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি সোনালুগাছ। সেসব গাছ ভর্তি ফুলে। মাটিতে পড়ে আছে অজস্র হলুদ পাপড়ি। সেখানে ছবি তুলছেন বেশ কয়েকজন। তাঁদের একজন সরকারি কর্মকর্তা সানজিদা নুসরাত। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন তিনি। দূর থেকে গাছভরা ফুল দেখে আর লোভ সামলাতে পারেননি। নুসরাত বললেন, ‘আমার সন্তানেরা বেশ খুশি। অনেকগুলো ছবি ও ভিডিও তুলে প্রকৃতির কারুকাজের স্মৃতি রেখে দিলাম।’ হলুদের মায়ায় অমলতাস বা সোনালু এমন আচ্ছন্ন করে রাখে সবাইকে। গ্রীষ্মের সোনালি রঙের সূর্যালোক সোনালুর হলুদে যেন ম্লান হয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত