Ajker Patrika

দলীয় কোন্দলেই হারছে নৌকা

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ১১
দলীয় কোন্দলেই হারছে নৌকা

বগুড়ায় নানা পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এর ফলে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার ভরাডুবি হচ্ছে। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের ঝান্ডা ধরে রাখেন দলটির প্রভাবশালী নেতা মমতাজ উদ্দিন। তাঁর মৃত্যুর পর জেলা আওয়ামী লীগে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দেয়। জেলায় এখন আওয়ামী লীগের তিনটি প্রধান পক্ষ রয়েছে। এর একটি রয়েছে সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর নিয়ন্ত্রণে। অপর দুটি সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নিয়ন্ত্রণে। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ হলো আসাদুর রহমান দুলু এবং মমতাজের ছেলে মাসুদুর রহমান মিলন ও তাঁর অনুসারীরা।

তবে মোটাদাগে জেলা আওয়ামী লীগকে দুই পক্ষে ফেলা যায়। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে পক্ষ দুটি সক্রিয়। নেতা-কর্মীরা বলছেন, দুই পক্ষের আনুগত্য প্রকাশ না করলে দলীয় কোনো পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয় না। জেলার প্রতিটি ইউনিট গঠনে আলাদাভাবে এই দুই পক্ষের লোক থাকতে হবে—এটাই অলিখিত নিয়ম।

দলীয় কোন্দলের প্রভাব পড়েছে সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনে। নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। চার ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৮২ ইউপির মাত্র ৩৩টিতে জয় পেয়েছেন নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী। বাকি ৪৯ ইউপির ১২টিতে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ এবং ৩৭টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন; যাঁদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে দুপচাঁচিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউপিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

কাহালু উপজেলার আটটি ইউনিয়নের দুটিতে জয়ী হয় নৌকা। এই উপজেলার কালাই ইউপিতে ১১২ ভোট পেয়ে জামানত হারান নৌকার প্রার্থী আজাহার আলী। উপজেলাটিতে নৌকা এবং নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থীর সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হন। এ ছাড়া সব উপজেলাতেই নৌকা এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে কম-বেশি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, নিজ নিজ সমর্থকদের জিতিয়ে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং টাকার বিনিময়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার ফলে নৌকার ভরাডুবি হচ্ছে। এ ছাড়া দলের চেয়ে ব্যক্তিগত বলয় তৈরির প্রবণতা বেড়ে গেছে।

আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বগুড়ার বিভিন্ন থানায় অন্তত ৪৭টি হত্যা মামলা হয়। এর ভুক্তভোগী ও আসামি আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিরাজমান। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতাদের (সভাপতি-সম্পাদক) মতের অমিল হয়। এ দুজনের সমন্বয়হীনতার জন্য দলের ঐক্য ও সুনাম বিনষ্ট হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজের সমর্থক তৈরির চেষ্টা থাকে। কিন্তু সেটা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রূপ না নেয়, সেদিকেই নজর রাখা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়ায় অন্তঃকোন্দলে সহিংসতার ঘটনা আগে ঘটত। কিন্তু আমাদের কমিটি গঠনের পর তেমন কিছুই ঘটেনি। যে কটি খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ব্যক্তিগত বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য হয়েছে।’

সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, ‘আমাদের জেলা আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপিং বা অন্তঃকোন্দল নেই। আমরা মিলেমিশে সবাই কাজ করছি। মনোনয়নে কোনো টাকা নেওয়া হয় না।’ ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের পরাজয়ের বিষয়ে বলেন, ‘সারা দেশেই নৌকার পরাজয়ের ঘটনা ঘটছে। সে তুলনায় বগুড়ায় ভুল প্রার্থী মনোনয়নের ঘটনা এক শতাংশ বলা চলে। আমরা তৃণমূল থেকেই প্রার্থীর মনোনয়ন দিচ্ছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত