Ajker Patrika

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মনগড়া ‌ভিসি’ ছিদ্দিকুল

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ২৩: ৪৮
Thumbnail image

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে ডিন কাউন্সিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্যের (ভিসি) অনুপস্থিতিকালীন মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক, ভেটেরিনারি অ্যানিমেল ও বায়োমেডিকেল সায়েন্স অনুষদের ডিন ও বিএনপিপন্থী সাদা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। 

ডিন হিসেবে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়ে ছিদ্দিকুল ইসলাম শুরু করছেন ‘ভিসিগিরি’। দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক ও প্রশাসনিক পদে বসিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের। শেখ হাসিনা সরকারের নিয়োগকৃত ভিসির পদায়ন করা সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সরিয়ে দিয়েছেন প্রথম দিনেই। ছোটখাটো দায়িত্বে এখনো যাঁরা আছেন, তাঁদের কাউকে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না কর্মস্থলে। বিধিবহির্ভূতভাবে আজ বুধবার ডেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভাও। 

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা জানান, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরদিন সিকৃবি ভিসি মো. জামাল উদ্দিন ভূঞাকে পদত্যাগের চাপ দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপে পদত্যাগে রাজি না হলে ভিসিকে জোরপূর্বক ১০ দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে যান। 

ছুটি শেষ হলে তাঁকে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন জামাল উদ্দিন ভূঞা। একই দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে ‌‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলরের অনুপস্থিতিকালীন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলে আলোচনাক্রমে একজন ডিনকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো।’ ওই দিনই ডিন কাউন্সিল মো. ছিদ্দিকুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়। 

সাময়িক আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে ছিদ্দিকুল ইসলাম বসে যান ভিসির চেয়ারে। আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে বসিয়ে দেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের। এমনকি চিঠিপত্রে নিজেকে ভিসি হিসেবে উল্লেখ করছেন। অথচ তাঁকে কোনো কর্তৃপক্ষ ভিসি পদে নিয়োগ দেয়নি। ২২ আগস্ট ভিসির ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বদরুল ইসলামকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সংযুক্ত করেন। পাশাপাশি কৌলীতত্ত্ব ও প্রাণী প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমানকে রেজিস্ট্রারের (অ. দা.) দায়িত্ব দেন। এই আদেশে লেখা হয়, ‘ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম, ভাইস চ্যান্সেলর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।’

একইভাবে একই দিন পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা) অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) অধ্যাপক ড. এ টি এম মাহবুব-ই-ইলাহী, পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল, সহযোগী পরিচালক (গবেষণা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার, পরিচালক (আইকিউএসি) অধ্যাপক ড. এম রাশেদ হাসনাত, পরিচালক (ফার্ম) অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ, পরিচালক (পরিবহন শাখা) অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক, পরিচালক (প্রফেসর মছলেহ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল) অধ্যাপক ড. মো. মুক্তার হোসেন, আব্দুস সামাদ আজাদ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা, হজরত শাহপরাণ (র.) হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আজিজ, সুহাসিনী দাস হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহানা বেগম, অডিটরিয়াম ইনচার্জ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পিএস টু ভিসি মোহাম্মদ নেয়ামত উল্যাহ, নিরাপত্তা কর্মকর্তা (অ. দা.) আশফাক আহমেদ দায়িত্ব দেন।

তাঁদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মাহবুব-ই-ইলাহী ও অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ শুধু জামায়াতপন্থী। তাঁরা দুজনই আবার একই বিভাগের। বাকি সবাই বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষক। নেয়ামত ও আশফাক দুজনই বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা। 

অধ্যাপক মো. ছিদ্দিকুল ইসলামের অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘উনাকে তো ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আর যেসব পদে লোক আছে, সেগুলোতে সাদা দলের সবাইকে ঢালাওভাবে দায়িত্ব দেওয়ার কী যুক্তি আছে? একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে চলতে পারে না। আশা করব, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্রুত নজর দেবেন।’

ডিন কাউন্সিলের সদস্য ও বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকারী একজন অধ্যাপক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‌‘জরুরি পরিস্থিতিতে শুধু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জরুরি সিন্ডিকেট ডাকতে পারে। তবে এখানে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত বা আলোচনার সুযোগ নাই। আর “ভিসি” লেখার বিষয়ে উনি ভালো বলতে পারবেন। উনাকে তো এই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এখনো বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসেনি। ঢালাওভাবে বিএনপির সবাইকে দায়িত্ব দেওয়ার মানে হয় না। ক্ষমতায় এলেই কী এভাবে করতে হবে?’

জানতে চাইলে পদাধিকারবলে সিকৃবি সিন্ডিকেট সদস্য ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবু আহমদ ছিদ্দীকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উনি আমাকে বলেছেন, উনাকে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভার্চুয়ালি (সভায়) যোগ দেব বলে জানিয়েছিলাম। ভালো হয়েছে আপনি আমাকে অবগত করায়।’ 

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফোন করলে অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুল ইসলাম প্রতিবেদকের পরিচয় জেনেই কল কেটে নম্বরটি ব্লক করে দেন। এরপর মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠিতে স্পষ্ট পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ভিসির দায়িত্ব নয়, একজন ডিন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুপস্থিতিকালীন আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেওয়া হয়।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত