Ajker Patrika

পাবনার সাদুল্লাপুর: রাস্তা-খালে ১০ গ্রামে ভিন্ন রূপ

শাহীন রহমান, পাবনা 
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৮: ৩৯
Thumbnail image

একটি সড়কের অভাবে দুর্ভোগের সীমা ছিল না পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুল-কলেজে যেতে পারত না। বর্ষাকালে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়া ছিল রীতিমতো দুঃসাধ্য। রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে।জলাবদ্ধতার কারণে ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারতেন না কৃষক। এবার সেখানে পাকা সড়ক ও সেচের জন্য খাল নির্মাণ করায় শেষ হয়েছে এ দুর্ভোগ। বদলে গেছে আর্থসামাজিক চিত্র।

সরেজমিন দেখা গেছে, লোহাগড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে আরসিসি গোপাট সড়ক চলে গেছে আতাইকুলা-সুজানগর পর্যন্ত। সেই সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে সেচখাল।রাস্তাটির দুই পাশে কয়েক শ বিঘা ফসলি জমি। স্থানীয় বাসিন্দারা আজকের পত্রিকাকে জানান, রাস্তাটি কাঁচা ছিল। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা তাঁদের জন্য কষ্টকর ছিল। এদিকে সেচখাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতায় একটির বেশি ফসলের আবাদ করতে পারতেন না কৃষকেরা। তবে এবার শেষ হয়েছে সব দুর্ভোগ আর কষ্ট। একটি সড়ক আর সেচখাল পাল্টে দিয়েছে চোমড়পুর, লোহাগাড়া, স্বরূপপুর, শ্রীকোল, দড়ি শ্রীকোল, হাপানিয়া, লীকোল, চরপাড়া ও চর হাপানিয়াসহ ১০টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষের জীবনমান।

বিএডিসি পানাসি পাবনা প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার সেচখাল পুনঃখনন করা হয়েছে। অন্যদিকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার আরসিসি গোপাট সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ দুটি বাস্তবায়ন করেছে বিএডিসি পাবনার সেচ বিভাগ। গত জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে মে মাসে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ।

লোহাগড়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মোল্লা বলেন, ‘কাদার মধ্যে লুঙ্গি মালকাছা দিয়েও এই সড়কে চলাফেরা করা যেত না। মহিষের গাড়িও যেতে পারত না। এখন রাস্তা হওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। আমাদের কৃষিপণ্য খুব সহজে বাজারে নিয়ে যেতে পারি। ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি। ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে।’

চমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই রাস্তা হওয়ায় কমপক্ষে ১২-১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। এক ও দুই ফসলি জমি হয়েছে তিন ফসলি। খালে পানি থাকলে ধান-পাটের আবাদ হয়। আর পানি নেমে গেলে পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ হয়।

দড়ি শ্রীকোল গ্রামের ভ্যানচালক ছলিম হোসেন জানান, আগে লোহাগড়া থেকে আতাইকুলা বাজারে যেতে ২৫-৩০ মিনিট লাগত। এই রাস্তা হওয়ায় এখন ১২-১৫ মিনিট লাগে। এতে সময় অপচয় কম হয়। মানুষও দ্রুত যাতায়াত করতে পারেন।

পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী বলেন, এই এলাকার মানুষদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার উপায় ছিল না। অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মারা গেছেন। কৃষকেরা একটির বেশি ফসল আবাদ করতে পারতেন না। বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের অধীনে একটি পাকা সড়ক আর সেচখাল পুনঃখনন করায় এলাকার বাসিন্দাদের অনেক উপকার হয়েছে।

বিএডিসি পাবনা কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, বিএডিসি এই অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় লোহাগড়া বিলের পরিত্যক্ত সেচখাল পুনঃখনন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিলের ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরসিসি গোপাট সড়ক। সড়ক ও সেচখাল এই এলাকার কৃষি, অর্থনীতি, পরিবহনসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত