Ajker Patrika

লোভের বলি জমির উর্বরতা

মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ২৭
লোভের বলি জমির উর্বরতা

নীতিমালার তোয়াক্কা না করে নরসিংদীর মনোহরদীতে ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে শত শত বিঘা জমি উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হচ্ছে। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন।

স্থানীয়দের অনেকেই মনে করছেন, দ্রুতই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ফসলি জমি হুমকিতে পড়বে। আর তাতে ভবিষ্যতে খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটার মালিকেরা কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে ইটভাটার মালিকেরা মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে অনেকটাই নীরব ভূমিকা পালন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ২৭টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেই। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। আর ফসলি জমির মাটি ইট দিয়ে তৈরি করা সুবিধাজনক। কিন্তু জমির ওপরের অংশের মাটি ইটভাটায় যাওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।

গতকাল রোববার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভেকু মেশিন দিয়ে সরিষাখেত ও বোরো ধানের জমির মাটি প্রায় ৬ ফুট গভীর করে কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে পাশের জমির মালিকদের ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।

এ বিষয়ে মাটি ব্যবসায়ী নূর হোসেন নূরু এবং দ্বীন ইসলাম ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভূমি অফিসের অনুমতি নিয়ে আমরা মাটি কাটছি।’

মনমারা গ্রামের কৃষক কাশেম, রবিসহ অনেকেই বলেন, ইটভাটা থেকে লোকজন এসে কৃষকদের মাটি বিক্রয়ের বিষয়ে অনুনয়-বিনয় করেন। এতে করে অনেক কৃষক লোভে পড়েই মাটি বিক্রি করেন।

কৃষক রতন মিয়া জানান, বেশি টাকা পাওয়ায় তিনি দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে ওই জমিতে আগের মতো আর ফসল হবে কি-না সে সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই।

মূলত ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে করে দেড় থেকে দুই বছর ওই জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট ও পটাসসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করা হলে পূর্বের মতোই আবাদ হয়ে থাকে।

মনোহরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, মাটির উপরিভাগের ১০ থেকে ১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। এ ছাড়া মাটির এই অংশে যে কোনো ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ রোপণের পর এই অংশ থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে ফসল ফলে। এটাকে টপ সয়েল বলা হয়। এই টপ সয়েল একবার কেটে নিলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না। তাই মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার উর্বরতা ফিরে আসতে সময় লাগে।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ফরিদ বলেন, ‘যেসব এলাকায় নদীর মাটি আছে সেই এলাকার ইটভাটাগুলোতে এবার ফসলি জমির মাটা কাটা হচ্ছে না। তবে কোনো এলাকায় ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে তা আমার জানা নেই।’

কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আকন্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত সাড়ে চার বছরে অনেক কষ্ট করে এই রাস্তাগুলোর কাজ করিয়েছি। মাটির ব্যবসায়ীদের কারণে রাস্তাগুলো সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে অবহিত করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএসএম কাসেম বলেন, বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত