Ajker Patrika

বাংলার পতাকা হাতে রাজপথে মিছিলের স্রোত

এ আর চন্দন, ঢাকা
Thumbnail image

একাত্তরের এই দিনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অজুহাত হিসেবে পাকিস্তানের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র লিখিত ঘোষণায় বলেন, ‘দেশের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলগুলীর মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট উভয় অংশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আগামী ২৫শে মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবী রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি শীঘ্রই জাতির উদ্দেশ্যে একটি ঘোষণা প্রচার করবেন।’ (দৈনিক পাকিস্তান, ২৩ মার্চ ১৯৭১)

এর আগে রমনায় প্রেসিডেন্ট হাউসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠকে মিলিত হন। সেটি ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ দফা বৈঠক। প্রায় সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশে গুরুতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনগণের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’ (পূর্বদেশ, ২৩ মার্চ ১৯৭১)

দুপুরে প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতারা প্রেসিডেন্ট হাউসে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগপ্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে সেই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না। পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রধান শিরোনামের নিচে এ-সংক্রান্ত খবর ছাপা হয় দুই কলামজুড়ে। শিরোনাম ছিল ‘মুজিব-ইয়াহিয়া সমঝোতা পরীক্ষা করে দেখছিঃ ভুট্টো’।

১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম দিনটিতেও বাংলার রাজপথ ছিল মিছিলে মিছিলে উত্তাল। একাত্তরের ২২ মার্চ ঢাকার রাজপথের চিত্র তুলে ধরা হয় পরদিন সংবাদপত্রের পাতায়। ‘রাজপথে উত্তাল গণমিছিল’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের গতকাল (সোমবার) ২১তম দিবস অতিবাহিত হয়। গতকাল বিক্ষুব্ধ মানুষের সভা-শোভাযাত্রা এবং গগনবিদারী ধ্বনিতে ঢাকা নগরী পুনরায় প্রকম্পিত হইয়া উঠে। গতকাল সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাটি দিনভর রাজধানীর রাজপথে ছিল অবিচ্ছিন্ন মিছিলের স্রোত আর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ শপথের বজ্র নির্ঘোষ ধ্বনি।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘মিছিলকারীদের অধিকাংশের হাতে ছিল কালচে সবুজ রংবিশিষ্ট কাপড়ের মাঝখানে লাল গোলাকার বৃত্ত। উহার মাঝখানে মুদ্রিত সোনালী রংয়ের বাংলার মানচিত্র শোভিত পতাকা। শান্তিপূর্ণ এবং এক অভূতপূর্ব সৃশৃংখলে মিছিলগুলির স্রোত প্রবাহিত হয় বঙ্গবন্ধুর ধানমণ্ডীস্থ বাসভবনের দিকে।’

পূর্বদেশ পত্রিকায় ভেতরের দুই পাতায় ছাপা হয় সারা দেশে আন্দোলনের সচিত্র সংবাদ। তিনের পাতায় সাত কলাম শিরোনাম ছিল ‘শহরে গ্রামে নগরে বন্দরে আন্দোলনমুখী মানুষের দৃপ্ত পদচারণা’। দৈনিক সংবাদেও তিনের পাতায় সাত কলাম শিরোনাম ছিল ‘গ্রামে-গঞ্জে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার দীপ্ত শপথ’।

ইত্তেফাক ও সংবাদে প্রথম পাতায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পরিকল্পিত বাংলাদেশের পতাকার ছবি ও বিবরণ প্রকাশ করা হয়।

এদিন পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকেরা এক সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে প্রাক্তন সৈনিকেরা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না। পরদিন ইত্তেফাকে প্রথম পাতায় এ-সংক্রান্ত খবর ছাপা হয় ‘আজ থেকে আমরা আর প্রাক্তন নই—’ শিরোনামে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত