Ajker Patrika

নিধিপাগলা

সম্পাদকীয়
নিধিপাগলা

দেবেশ রায়ের লেখা যাঁরা পড়েছেন, তাঁদের অনেকেই জানেন তাঁর আত্মস্মৃতির যে বইটি আছে, তার নাম ‘জলের মিনার জাগাও’। কীভাবে এ নামটি তিনি পেলেন, সে কথা শুনতে খারাপ লাগবে না।

নিধি বলে একজন মানুষ ছিলেন তাঁদের গ্রামে। সবাই তাঁকে নিধিপাগলা নামেই ডাকত। কখনো কখনো ‘বায়ুর প্রকোপে’ নিধি বেমনা হয়ে যেতেন। সে সময় দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। ফিরে এসে গল্প বলতেন।

দেবেশ রায় তখন একেবারেই ছোট। তাঁর দাদুর ছিল প্রবল ব্যক্তিত্ব। দাদুর সঙ্গে কথা বলার সময় বাঘা বাঘা লোকের গলা কাঁপত, কিন্তু নিধি দাদুর সঙ্গে দাদুর ভাষাতেই টক্কর দিতেন। ছোট দেবেশকে বলত, ‘ছোটবাবু, তুমি কত্তার পায়ের কাছে, গায়ে গা লাগাইয়া থাহো। আমি তো পাগল-ছাগল মানুষ। তোমার ছোঁয়া না পায়্যা কত্তাবাবুর দুশ্চিন্তা হইব। তুমি বইসো, আমি ভিতরবাড়িতে বধূমাতার কাছ থিক্যা মুড়কি নিয়া আসি। তারপর তোমারে দেশান্তরের গল্প শোনাই।’

নিধির বউ দেবেশদের বাড়িতেই কাজ করতেন। সে কারণেই নিধি ভেতরবাড়িতে যেতেন সদর দরজা দিয়েই, খিড়কির দরজা দিয়ে নয়। ফলে বাড়ির কাজের লোকেরাও তাঁকে ঈর্ষা করত।
নিধি দেবেশকে নদীর গল্প বলতেন, বড় বড় নৌকার গল্প বলতেন, হাটের গল্প বলতেন। আর তাতে থাকত মানুষের গল্প।

গল্প বলতে বলতেই গান গেয়ে উঠতেন নিধি। হেঁড়ে গলায় যেমন গাইতেন, তেমনি নিচু গলাতেও গাইতেন। ‘বারোমাস’ পত্রের শারদীয় সংখ্যায় যখন আত্মস্মৃতি লিখতে শুরু করেছিলেন দেবেশ, তখন ‘জলের মিনার’ শব্দ দুটি তিনি নিয়েছিলেন নিধিপাগলার কাছে শোনা একটি গান থেকে। কী এক আত্মবিলাপের মতো তাঁর কণ্ঠ থেকে ভেসে আসত সুর। ‘আওর আমার হইল বিস্মরণ, মালেক হে, আমার জলের মিনার জাগান হইল না।’

‘বারোমাস’-এর প্রথম লেখাটিতে দেবেশ লিখেছিলেন, ‘খুবই শৈশবে শোনা নিধিপাগলার গানের আবছা স্মৃতি থেকে।’ 

সূত্র: দেবেশ রায়, জলের মিনার জাগাও, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত