Ajker Patrika

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে স্বাস্থ্যসেবা

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১১: ৪১
Thumbnail image

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সংস্কার ও নজরদারির অভাবে ১৬টিই নানা সমস্যায় জর্জরিত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা। অনেক ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। কিছু ক্লিনিকে রয়েছে ওষুধের সংকট। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। নিয়মিত পানির সরবরাহ নেই। কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট।

জানা যায়, এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে নাগরিকেরা টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা পেয়ে থাকে। তবে সংস্কার না হওয়ায় এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। অনেক ভবনের দরজা-জানালা খুলে গেছে, ছাদে ফাটল ধরেছে এবং পলেস্তারা খসে পড়েছে। এই অবস্থায় রোগীদের ঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। ফলে আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকে নারী, শিশুসহ গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন রোগী আসে সেবা নিতে। তবে বেহাল ভবনের কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সেবা নিতে আসা নিলুফা ইয়াছমিন ও আছমা আক্তার নামের দুজন রোগী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে এখান থেকে তাঁদের সেবা নিতে হয়। তবে সব সময় ওষুধ পান না এখানে। এটা যদি আধুনিক করা হয়, তাহলে তাঁদের ভোগান্তির অবসান হবে।

এ বিষয়ে কাফাইয়াকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ওমর ফারুক জানান, তিনি এ কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০১১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ভবনের অবস্থা খুব খারাপ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। এর ফলে অনেক চিকিৎসাসামগ্রী ও আসবাব নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সোনারগাঁয়ে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে আমার এই কমিউনিটি ক্লিনিক বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় এটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ না পাওয়ায় রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে বাধ্য হই।’

জামপুর ইউনিয়নের মুন্দিরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি হালিমা খাতুন চম্পা বলেন, ‘এই ক্লিনিকের সামনের জায়গাটি নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। ফলে এই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা রোগীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হন।’

এদিকে আধভাঙা ভবনে চলছে পিরোজপুর ইউনিয়নের জৈনপুর ও দুধঘাটা কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। একই অবস্থা সনমান্দি ইউনিয়নের চরভুলুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকেরও। ক্লিনিকের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেই পানি ও বিদ্যুৎ। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। এমন দুর্ভোগের মধ্যে সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এ ছাড়া হামছাদী, দামোদরদী ও বুরুসদী কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপত্তাবেষ্টিত দেয়াল না থাকায় যেকোনো সময় চিকিৎসাসামগ্রী চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সনমান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকে দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো নষ্ট, নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাবরিনা হক বলেন, ‘এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের অধীনে। আমাদের চিকিৎসকেরা ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করলেও সংস্কারের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পালন করে থাকে। যেসব কমিউনিটি ক্লিনিকের সংস্কার করা দরকার, তার একটি তালিকা আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়েছি। আশা করছি এ বছরের মধ্যেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির কাজ শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত