Ajker Patrika

হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে

সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারপরেও অনেক গ্রাহকের মনে ‘আস্থার ঘাটতি’ রয়েই গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ ব্যাংকে টাকা রাখা নিয়ে রীতিমতো দোটানায় পড়েছেন। কোনো কোনো গ্রাহক এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করছেন। বিশেষ করে শরিয়াহ আইনে পরিচালিত ব্যাংকের গ্রাহকেরা টাকা তুলে সরকারি কিংবা বিদেশি ব্যাংকে রাখছেন। আর নেহাত যাঁদের ব্যাংকের ওপর আস্থা কম, তাঁরা টাকা তুলে হাতে রাখছেন। যার ফলে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে তারল্য-সুবিধাসহ নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাস শেষে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের অক্টোবর মাসে ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মানুষের হাতে রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ হাজার ২১৯ কোটি বা ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর চলতি বছরের অক্টোবর মাস শেষে মানুষের হাতে থাকা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা, যা গত জুন মাসে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৮ টাকা। সেই হিসাবে গত চার মাসে মানুষের হাতে রাখা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন আরও বলছে, ২০২১ সালের জুন মাসে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, যা ২০২২ সালের জুনে এসে হয়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং সেই প্রবৃদ্ধি অক্টোবর মাসে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংকটের সময়ে মানুষ সঞ্চয় কমাবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার সরকার ঋণ করছে, ব্যাংকগুলোও ডলার কিনছে। ফলে টাকায় কিছুটা টান পড়বেই। এই মুহূর্তে সুদহার বাড়িয়ে দিলে আমানত আবার বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার-সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে মার্কেট থেকে টাকা উঠে আসছে। তবে হঠাৎ করে বেশি টাকা উত্তোলন করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ টাকার চাপে রয়েছে।

সূত্র জানায়, একটি বিশেষ গ্রুপের তিনটি ইসলামী ব্যাংক থেকে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে গ্রাহকেরা। এতে ব্যাংকগুলোতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। তবে শরিয়াহ আইনে পরিচালিত ব্যাংকের অনিয়ম ও পাচার নিয়ে খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে প্রচলনে থাকা ফিজিক্যাল মুদ্রা বা নগদ আকারে ছিল রেকর্ড ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। গত ৪৫ দিনে বেড়েছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। মানুষের হাতে টাকা ধরে রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে ফিজিক্যাল মুদ্রা বেড়ে গেছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত