Ajker Patrika

‘নো’

সম্পাদকীয়
‘নো’

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগুলো তখন প্রকাশিত হচ্ছে। ‘চৈতালী-ঘূর্ণি’, ‘পাষাণপুরী’, ছলনাময়ী’, রাইকমল’ তত দিনে বেরিয়ে গেছে। গল্পগুলোর প্রশংসাও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা আসেনি একেবারেই। তিনি তখন কলকাতার কালীঘাট-বালিগঞ্জের ঠিক মাঝখানে একটি বস্তির পাশে থাকেন। টিনে ছাওয়া পাকা মেঝে, পাকা দেয়ালের ঘর। ষষ্ঠীচরণ দাস নামে এক লোক দিনান্তে একবার কল থেকে পানি নিয়ে আসে, ঘরদোর পরিষ্কার করে দেয়।

তারাশঙ্কর তখন খান পাইস হোটেলে। কালীঘাট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পথের মধ্যে যখন যে পাইস হোটেল পেয়ে যান, তাতেই বসে পড়েন খেতে। খরচ মাসে তিরিশ টাকার মতো। যে মাসে টাকা ফুরিয়ে যায়, সেই মাসে তিন টাকা হাতে নিয়ে চলে যান লাভপুরে। সেখানে গিয়ে লেখালেখি করে কোনোভাবে দশ টাকা জোগাড় করে ফিরে আসেন কলকাতায়। পত্রিকা অফিসে অফিসে সেই গল্প বিক্রি করে বেঁচে থাকেন।

 ‘বঙ্গশ্রী’ আর ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলে টাকা পাওয়া যেত। সে সময় দেশ পত্রিকার সম্পাদক বঙ্কিম সেন দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় অফিসে আসতেন না। মাখন সেনের ডান হাত বলে খ্যাত এক ব্যক্তির তখন সমগ্র আনন্দবাজারে দারুণ প্রতাপ। দেশ পত্রিকার পূজা সংখ্যায় ‘নাগ নাগিনী’ নামে তারাশঙ্করের যে গল্পটি বের হয়, সেটি ফরাসি গল্পের সমকক্ষ—এ কথা বলে তিনি দশ টাকা দক্ষিণা দিয়েছিলেন। সাধারণ সংখ্যায় গল্প লিখে পাওয়া যেত পাঁচ টাকা। এই ভদ্রলোকের মর্জির ওপর নির্ভর করত টাকা পাওয়া না-পাওয়া। একবার খুব টাকার দরকার তারাশঙ্করের। তিনি ‘মুসাফিরখানা’ গল্পটি নিয়ে গেলেন দেশ পত্রিকার অফিসে। অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখার পর জানানো হলো, পরদিন আসতে হবে। তারাশঙ্কর আরজি জানালেন, আজই যদি একটা ব্যবস্থা করে দেন। বসতে বলা হলো তাঁকে। আধঘণ্টা পর গল্পটি হাতে নিয়ে ভদ্রলোক এলেন। মুখে ‘নো’ উচ্চারণ করে চলে গেলেন।

সেদিন শীতের সন্ধ্যায় টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে বর্মণ স্ট্রিট থেকে মনোহর পুকুর সেকেন্ড লেন পর্যন্ত হেঁটে পাড়ি দিয়েছিলেন তারাশঙ্কর। 

সূত্র: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার সাহিত্য-জীবন, পৃষ্ঠা ১৫৩-১৫৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত