Ajker Patrika

কাটেন চুল, পান চাল

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১৭: ০৯
Thumbnail image

নওগাঁর নিয়ামতপুরে সারা দিন হেঁটে হেঁটে গ্রাম ঘুরে চুল, দাড়ি কাটেন বুধু সরদার (৮৫)। মজুরি কম নেওয়ায় অনেকেই সেলুনে না গিয়ে যান তাঁর কাছে। পারিশ্রমিক হিসেবে অনেকে টাকার বদলে চালও দেন। এভাবে ৭০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল, দাড়ি কাটছেন তিনি।

বুধু সরদার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ঢিকাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। আয় করেন ১০০ বা তার কম টাকা। প্রতিদিন যা আয় হয় এবং একমাত্র ছেলের আয় দিয়ে কোনো রকম চলে সংসার। জমিজমা না থাকায় সরকারি জায়গায় কোনো রকমে ঘর করে থাকেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রসুলপুর ইউনিয়নের মানপুরা গ্রামের একজনের চুল, দাঁড়ি কাটছেন তিনি। সেখানে কথা হলে বুধু সরদার বলেন, ১৪ বছর বয়স থেকেই তিনি নরসুন্দর পেশায় নিয়োজিত। আগে এত সেলুন ছিল না। প্রতিদিন চুল, দাড়ি কেটে ২০-২৫ কেজি চাল পেতেন তিনি। সেটা দিয়েই সন্তানদের মানুষ করেন তিনি। এখন বয়স হয়েছে, কাজও কমে গেছে। একমাত্র ছেলে সেলুনের দোকান করেছিল, ছেড়ে দিয়ে এখন কৃষিকাজ করে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।

মানপিরা গ্রামের বাসিন্দা সূর্য সরদার বলেন, ৭০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল, দাঁড়ি কাটছেন বুধু সরদার। তিনি যত দিন থেকে তাঁকে দেখছেন নিতান্তই একজন ভালো মানুষ হিসেবেই তাঁকে জানেন।

বুধু সরদারের ছেলে নিরঞ্জন সরদার বলেন, ‘বাবার পেশায় অনেক দিন ছিলাম। সেলুনের দোকানঘর নিয়ে ঘর মালিকের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় সেলুন ছেড়ে এখন কৃষি শ্রমিকের কাজ করছি। সংসারে অভাবের কারণে বাবা এই বয়সেও পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করছেন।’

বুধু সরদার আরও বলেন, যত দিন বেঁচে আছেন এই কাজ করে যেতে চান তিনি। মাঝেমধ্যে অসুস্থ হলে নিজেকে অসহায় মনে হয়। একটু সুস্থ হলে পরিবারের আয়ের কথা চিন্তা করে আবার নেমে পড়তে হয় এই কাজে। কেউ যখন চুল কাটার প্রশংসা করে তখন মনে হয় ফেলে আসা ৭০ বছরের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।

রসুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোত্তালিব হোসেন বাবর বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বুধু সরদারকে তিনি চেনেন। খুব অসহায় একজন মানুষ। সরকারিভাবে যেকোনো অনুদান এলে তাঁকে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত