Ajker Patrika

অস্ত্রোপচারে নিন্মমানের সুতাসহ অবহেলার অভিযোগ

নড়াইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১২: ৫৫
Thumbnail image

অস্ত্রোপচারের সময় নিম্নমানের সুতা ব্যবহার ও হেলাফেলা করার অভিযোগ এনে নড়াইল সদর হাসপাতালের কনসালট্যান্ট মো. আকরাম হোসেন এবং ইমন ক্লিনিকের মালিক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলার ডিজিটাল লাইব্রেরির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। পরে মানববন্ধন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর স্বামী খন্দকার মাহফুজ নূর রিপন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার স্ত্রী ঝুমা বেগমের সিজারের জন্য ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে ইমন ক্লিনিকে ভর্তি করি। ওই দিন রাত ৮টায় ঝুমার সিজার করার কথা থাকলেও ক্লিনিকের মালিক মো. সরোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পি বেগম তড়িঘড়ি করে বিকেল ৩টায় নড়াইল সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. আকরাম হোসেনকে দিয়ে সিজার করান। আমি সংবাদ পেয়ে ক্লিনিকে আসার আগেই সিজার শেষ হয়। স্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারি অপারেশনের সময় ক্লিনিকের মালিকের সরোয়ারের স্ত্রী শিল্পি বেগম নার্স হিসেবে চিকিৎসককে সহায়তা করেছেন।’

মাহফুজ অভিযোগ করেন, ‘সিজার করার পর পরপরই আমার স্ত্রীর তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেলেও আমরা ডা. আকরাম হোসেনের কোনো পরামর্শ পায়নি। ১৮ ডিসেম্বর ঝুমাকে ইমন ক্লিনিক থেকে জোর করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়িতে নেবার পর ঝুমার তলপেটের সেলাই খুলে রক্ত এবং প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরতে থাকে। ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে পড়লে সেখান থেকে তাঁকে খুলনার গাইনী বিশেষজ্ঞ শামছুন্নাহার লাকীর ভিক্টোরী নার্সিং সেন্টারে ভর্তি করি। ডা. লাকী নানা ধরনের পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানান, নিম্নমানের সুতা এবং অপারেশনের পরে পেটের ভেতরে থাকা রক্ত পরিষ্কার না করায় এমনটি হয়েছে। তা ছাড়া জরায়ুতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। পরে প্রায় ৪ ঘণ্টা অপারেশনের মাধ্যমে ডা. লাকী অপারেশনের মাধ্যমে আমার অসুস্থ স্ত্রী জরায়ু ফেলে দেন। এই অপারেশনের পর আমার স্ত্রী মানসিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মাহফুজ আরও বলেন, ‘এক বছর পরও সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ঝুমাকে নিয়ে ভারতের কলকাতা নিয়ে যাই। সেখানে সিএমআরআই হাসপাতালে তাঁর আরও দুটি অপারেশন হয়। একটি উল্টা–পাল্টা অপারেশনের জন্য পরবর্তীতে ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন করেও আমার স্ত্রীকে এখন পর্যন্ত সুস্থ করতে পারিনি। সে ঠিকমতো বসতে পারে না, শুতে পারে না, নিজ সন্তানকে কোলে তুলে বুকের দুধ ও খাওয়াতে পারে না। দিনের অধিকাংশ সময় মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করে। ইতিমধ্যে চিকিৎসার জন্য আমার ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে।

পরবর্তীকালে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি আমি ক্লিনিক মালিক, তার স্ত্রী ও চিকিৎসকের নামে নড়াইলের নালিশি আদালতে মামলা করি। ইমন ক্লিনিকে অপারেশনে নিম্নমানের সুতা এবং সামগ্রী ব্যবহার করায় এই ভুল চিকিৎসায় ওই চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকেরা সরাসরি যুক্ত। এরপরও সিভিল সার্জন কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

ক্লিনিকের মালিক মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি চক্র আমার ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। আমরা চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি করিনি।’ ডা. মো. আকরাম হোসেনের বদলি হওয়ায় এবং মোবাইল নম্বর জোগাড় করতে না পারায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে এসেছে। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত