Ajker Patrika

আন্দোলন করে সরকার পতনের সক্ষমতা বিএনপির নেই

আপডেট : ২১ মে ২০২৩, ১০: ২৫
আন্দোলন করে সরকার পতনের সক্ষমতা বিএনপির নেই

মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। তিনি ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকারমাসুদ রানার সঙ্গে।

আজকের পত্রিকা: বিএনপি ও তার মিত্ররা দাবি তুলেছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। তারা নির্বাচনে না গেলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: প্রথমত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এ প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীন। তাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেই মূল ভূমিকা পালন করবে। আর নির্বাচনকালীন সরকার তাদের সহায়তা করবে।

আমরা সব রাজনৈতিক দলকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে যদি কোনো দলের ভালো পরামর্শ থাকে, তারা তা দিতে পারে। একটি বিষয় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকেই হবে। এর বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। আর তারা একটা অযৌক্তিক দাবি তুলেছে, তারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলেছি, সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমাদের করার কিছু নেই।

যেকোনো দলের পরামর্শ বা দাবি-দাওয়া হওয়া উচিত সংবিধানের আলোকে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কেউ যদি অযৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলন করে, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত নই।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নেওয়া যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, না নেওয়াও তেমনি গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশেষ করে, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং যাদের নির্বাচনে জয়লাভের সক্ষমতা কম, তারা নির্বাচনে অংশ না-ও নিতে পারে।

নির্দিষ্ট একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না নিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না—সেটা কোনো সংবিধানসম্মত কিংবা যৌক্তিক কথাও হতে পারে না। অনেক নিবন্ধিত দল আছে, তার মধ্যে দু-একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না-ও করতে পারে। তবে আমি আশাবাদী, যেসব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সক্ষমতা আছে, তারা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে শেষ পর্যন্ত।

আজকের পত্রিকা: বিএনপি বলেছে, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে তিন মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটাবে। এই বক্তব্যটাকে কীভাবে দেখছেন? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন ২০১২ সাল থেকে করে আসছে। বিশেষ করে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা যখন শুরু হলো, তখন থেকে তারা আন্দোলন করছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য তারা আন্দোলন করেছে। তারা ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৫ সালে আগুন-সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি।

হুমকি-ধমকির রাজনীতি তারা বহু দিন থেকে করে আসছে। এসব আন্দোলন এ দেশের মানুষ দেখেছে এবং এসবে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আর যে আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকে না, সেটা কোনোভাবেই সফলতা লাভ করে না।

আওয়ামী লীগ হলো রাজপথের দল। বিএনপি হলো প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের দল। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকার পতনের সক্ষমতা এ দলের নেই। বিএনপির এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। তারা তাদের

বিদেশি প্রভু, বিশেষ করে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল যারা, তাদের কাছে গিয়ে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।এভাবে সরকারের পতন হবে না। সেটা তারাও জানে। জানে বলেই তারা ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে। 

আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে কোনো সংকটের আশঙ্কা আছে কী? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটা কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিন্তু তা থাকবে না। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীক ব্যবহারটাই আমাদের দেশের মানুষের কাছে নতুন বিষয় ছিল। আগে আমরা দেখতাম স্থানীয় নির্বাচনে যাঁদের সামাজিক, পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা, প্রভাব আছে, তাঁরাই ৫-১০ ধরে নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করে তারপর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দলীয় প্রতীক দেওয়ার পর থেকে দেখা গেছে, যাঁরা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে, তাঁরাই দলের মনোনয়ন পান। এ কারণে দেখা গেছে, যাঁরা নিজেদের প্রস্তুত করেছেন, কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাননি, তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান থাকবে না। যদি কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে তিনি দল বা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেন না। এ কারণে তাঁর আর আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই। 

আজকের পত্রিকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, দলে তাঁর প্রয়োজন আছে। আপনি কী মনে করেন? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহৎ একটি দল। এ দলে হাজার হাজার, লাখ লাখ নেতা-কর্মী আছে। বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন করার মতো আমাদের অসংখ্য যোগ্য প্রার্থী আছে। বিভিন্ন নেতা-কর্মীর চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিভিন্ন রকম আছে। একজন ব্যক্তি তাঁর জ্ঞানের আলোকে কিছু কথা বলতেই পারেন। যখন কেউ বলেন, আওয়ামী লীগে তাঁর প্রয়োজন আছে, তখন বুঝতে হবে তাঁর রাজনৈতিক জ্ঞানের মাত্রাটা কোন পর্যায়ের। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ একটি নদীর মতো প্রবহমান দল। এ দলে একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নন। কেউ যদি মনে করেন, এ দলে তাঁর প্রয়োজন আছে, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক অজ্ঞতাটা প্রকট।

আজকের পত্রিকা: বরিশাল সিটি করপোরেশনে বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মীয়কে নিয়ে তৈরি সংকট সমাধান হবে বলে আপনি মনে করেন? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: অবশ্যই হবে। স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব হয়। কারণ, যখন কেউ অনেক দিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে মনোনয়ন পান না, তখন তাঁর মধ্যে কষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যই মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন। 

আজকের পত্রিকা: নির্বাচন সামনে রেখে জোটকে আরও সম্প্রসারিত কথার কথা শোনা যাচ্ছে। ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে মৈত্রী হলে ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে সংকট দেখা দেবে কী? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমরা তো বলেছি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেটাকে বিশ্বাস করে—এ রকম মানসিকতার ব্যক্তি বা দল যদি আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্য করতে চায়, তাদের জন্য অবশ্যই আমাদের দরজা খোলা থাকবে। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে না বা জাতির পিতাকে স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ঐক্য হওয়ার সুযোগ নেই।

আজকের পত্রিকা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দুর্বলতা দেখেন? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: আমার মতে, আওয়ামী লীগের দুর্বলতা হলো, প্রচারের দুর্বলতা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, এই উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের খবরগুলো আমরা জনগণের কাছে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারছি না বা পারিনি। পাশাপাশি আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার, অপপ্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, সেসবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নেতা-কর্মীরা উদাসীন। এটাই আওয়ামী লীগের বড় দুর্বলতা বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া আমাদের তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। দেশের মানুষের আস্থা, ভরসা আছে আমাদের নেত্রীর প্রতি। স্বাভাবিক হিসেবে এ দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারক হিসেবে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে আবারও দেশের জনগণ ম্যান্ডেট দেবে বলে আমার বিশ্বাস। 

আজকের পত্রিকা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সম্প্রতি একজন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে কিছু বলবেন? 
মাহবুব উল আলম হানিফ: করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে সারা পৃথিবী একটা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যখন সবকিছু স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, সেই সময়ে কিন্তু শেখ হাসিনা সব পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমেরিকা, ইউরোপের দেশসমূহে মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটেছে। সম্প্রতি তুরস্ক, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ প্রায় সব জায়গায় মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। নানা বাস্তব কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বৈশ্বিক প্রভাবে বাংলাদেশেও জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।

আর আমাদের দেশের বড় সমস্যা হলো, মানুষের মধ্যে নীতিনৈতিকতা ও সততার বড় অভাব। আমরা সুযোগ পেলেই বাড়তি মুনাফার জন্য মানুষকে ঠকাই। বাড়তি মুনাফার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাই। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে বড়দিন উপলক্ষে বেশির ভাগ পণ্যে ৭০ শতাংশের বেশি ছাড় দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশে আমরা কী করি? রমজান মাসে আমরা পুরো বছরের মুনাফা উঠিয়ে নেওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নামি। সব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিই। এসব কারণেই কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম হ্রাস পেলেও কোনো কারণ ছাড়াই এ দেশে দাম বাড়ানো হয়। ভয়াবহ, আমাদের মানসিকতার দৈন্য আছে। এ ক্ষেত্রে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। 

আজকের পত্রিকা: আপনাকে ধন্যবাদ। 
মাহবুব উল আলম হানিফ: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত