Ajker Patrika

চালকলের ছাই-বর্জ্যে দূষণ নওগাঁর পরিবেশ

নওগাঁ প্রতিনিধি
চালকলের ছাই-বর্জ্যে দূষণ নওগাঁর পরিবেশ

অটো রাইস মিল ও চাতালের বিষাক্ত ধোঁয়া, বর্জ্য ও তুষ-ছাই উড়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। বিষাক্ত ধোঁয়া ও ছাইয়ের কারণে চোখের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চাল উৎপাদনে বড় জেলা নওগাঁর বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার চালকলের সেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

জেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৮৫০টি রাইস মিল আছে। এগুলোর মধ্যে অটো রাইস মিলের সংখ্যা ৫৬। 
তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় ৫৩টি অটো রাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বন্ধ। বাকি ৪৭টির ছাড়পত্র থাকলেও বেশির ভাগের নিবন্ধন নবায়ন করা নেই।

গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের এক রেস্তোরাঁয় অটো রাইস মিল পরিচালনায় সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় এবং নওগাঁ জেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতি এই সভার আয়োজন করে। সভায় বক্তাদের আলোচনায়ও চালকলের কারণে পরিবেশ নষ্টের তথ্য উঠে আসে। তবে মিলমালিকরাও পরিবেশদূষণ রোধে অধিদপ্তরকে সহযোগিতার কথা জানান। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংকটের কথা জানিয়েছেন মিলমালিকেরা।

অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ জেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুল হক কমল। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সুফিয়া নাজিম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মেজ-বাবুল আলম, জেলার সহকারী পরিচালক মো. মকবুল হোসেন, নওগাঁ অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

সভায় অটো রাইস মিলের কয়েকজন মালিক ও তাঁদের প্রতিনিধিরা বলেন, মিল পরিচালনা করতে গিয়ে পরিবেশদূষণ ঠেকাতে আগের তুলনায় মিলাররা অনেক সচেতন হয়েছেন। এখন পরিবেশদূষণ রোধে চালকলগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। তবে সব মিলার এটা করতে পারেন না। কারণ, সবার সামর্থ্য এক নয়। এটির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা।

মিলাররা তাঁদের বক্তব্যে আরও বলেন, মিল পরিচালনা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় পুড়ে যাওয়া ছাই নিয়ে। এটি পরিবেশদূষণের বড় কারণ। তাঁরা বলছেন, জমি কিনে ছাই ফেললে আবাদি জমি কমে যাবে। এটিও সমস্যা। তাহলে পুড়ে যাওয়া ছাইগুলো তাঁরা কী করবেন? কোথায় ফেলবেন। তাই ছাই পুনর্ব্যবহার করে কোনো কিছু করা যায় কি না, এ জন্য সরকারকে উদ্যোক্তা তৈরির পরামর্শ দেন তাঁরা।

মেজ-বাবুল আলম বলেন, আগে এসব বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হয়নি। এখন দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন বিধিবিধান আরোপ করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মিলের ডাস্ট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে যে ছাই হয়, সেগুলো আকাশে যেন উড়তে না পারে, সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে। ধানের ভেজানো বা বয়েলিংয়ের কারণে যে পানি তৈরি হয়, সেই পানি নিজস্ব সীমানার মধ্যে পুকুর খনন করে রাখতে হবে, মিলে আধার তৈরি করে ছাই সংরক্ষণ করতে হবে এবং সেই ছাইয়ে পানি স্প্রে করতে হবে, যাতে সেটি পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে।

প্রধান অতিথি সুফিয়া নাজিম বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার করে হোক কিংবা অন্য কোনোভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। এ জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের যে ধরনের সহযোগিতা করার প্রয়োজন, নিয়ম অনুযায়ী সব সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত