Ajker Patrika

‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’

সম্পাদকীয়
‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘ধর্মে আছো জিরাফেও আছো’। অনেকে এ শিরোনামটিকে প্রবাদ হিসেবে ব্যবহার করে।  কেন করে, এর গভীর অর্থ  কিংবা উৎপত্তি কী—জানতে চাইলে অন্তর্জাল আপনাকে একটি গল্প দেখাবে। সেটির সত্যতা কতটুকু, এ বিষয়ে আলাপ না করে চলুন, গল্পটা জানা যাক।

জয়পুরের মহারাজ একবার তাঁর চিড়িয়াখানার জন্য আফ্রিকা থেকে একটি জিরাফ আনান। এমন ‘অদ্ভুত’ প্রাণী জয়পুর ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষ আগে কখনো দেখেনি, এর সম্পর্কে কিছু শোনা তো দূরের ব্যাপার। লোকজন শুরুতে এই প্রাণী দেখতে ভিড় করে। কিন্তু অন্য রাজারা ঈর্ষান্বিত হয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে রটিয়ে দিল—এই অদ্ভুত দর্শন জন্তুর কথা হিন্দু, মুসলমান বা ঈসায়ী ধর্মগ্রন্থে কোথাও উল্লেখ নেই; তাই এটি ঈশ্বরের নয়, শয়তানের সৃষ্টি; একে দেখা পাপ; দেখলে নরকে যেতে হবে! এই ফতোয়া শুনে জিরাফের দর্শকসংখ্যা কমে গেলেও একে নিয়ে মানুষের কৌতূহল কমল না। তখন জয়পুরের রাজা চালাকি করে রাতের বেলায়ও অনেকক্ষণ চিড়িয়াখানা খোলা রাখলেন। দেখা গেল, দিনে যারা ধর্মের ফতোয়া দিয়ে জিরাফ দেখা থেকে বিরত থাকতে বলত, তারাই গত রাতের অন্ধকারে চুপিসারে চিড়িয়াখানায় যেত! ঘটনা জানতে পেরে মানুষ তাদের বলা শুরু করে—এই ব্যাটারা ধর্মে আছে, জিরাফেও আছে।

সোমবার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর পড়ে এ রকম কিছুই মনে হতে পারে। খবরটি এমন—এইচএসসি ও সমমানের বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে পেয়ে কশিগাড়ী জামে মসজিদে বসে সেটির উত্তর তৈরি করা হচ্ছিল। মসজিদের পাশেই রামেশ্বরপুর ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা চলছিল। উত্তরপত্র তৈরি হলে সরবরাহ করা হতো সেখানে। গোপন সংবাদ পেয়ে মসজিদে গিয়ে দুই মাদ্রাসাশিক্ষককে হাতেনাতে ধরেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ঘটনাটি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের কশিগাড়ী জামে মসজিদ থেকে আটক করা হয় কৃষ্ণরামপুর ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ সুলতান হোসেন এবং দেওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিমকে। এ সময় থানার পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করে ৯টি মোটরসাইকেল ও ৪টি মোবাইল ফোন। অভিযান হচ্ছে বুঝতে পেরে সেখানে থাকা আরও কয়েকজন শিক্ষক কৌশলে পালিয়ে যান।

এই শিক্ষক যাঁরা চৌর্যবৃত্তির সাহায্যে তাঁদের সন্তানসম শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন, তাঁরা দিনে ধর্মের ফতোয়া দিয়ে রাতে জিরাফ দেখতে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার মতো মৌলবাদী নন কি? তাঁরা একদিকে সুশিক্ষাদানের মতো মহান কাজ করছেন এবং অপরদিকে কুশিক্ষার কাজও সারছেন।

এটা ভাবতেও এখন আর অবাক লাগে না যে মাদ্রাসাশিক্ষক হয়ে নিজেদেরই ধর্মীয় উপাসনালয়ে বসে তাঁরা অন্যায় বা অপরাধ করতে পারেন। কেননা ধর্ম, বিজ্ঞান কিংবা সামাজিক অবস্থান কোনো কিছুই মানুষের নীতিকে নির্ধারণ করে দিতে পারে না, যতক্ষণ ব্যক্তি নিজের ভেতরে অন্ধকারকে জিইয়ে রাখে—তা তিনি রাজা, মন্ত্রী, কোটাল যে-ই হোন না কেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত