Ajker Patrika

পলায়ন

কিশোর কুমার
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ১৮
পলায়ন

গান করার আগে কড়ায়-গন্ডায় পাওনা মিটিয়ে না দিলে নানা ছুতোয় রেকর্ডিং স্টুডিওতে যেতেন না কিশোর কুমার। যদি কোনো কারণে হাজির হতেই হতো, তাহলে গান শেষ করার আগেই কোনো এক কথা বলে পালিয়ে যেতেন স্টুডিও থেকে। টাকা দিলেও এক বৈঠকে দুটো গান করে ফেলা কিশোরের জন্য ছিল বিরল ব্যাপার।

তাঁর প্রিয়ভাজন আবদুলই রাখতেন টাকাপয়সার হিসাব। গান শুরু করার আগে কিশোর তাকাতেন আবদুলের দিকে। আবদুল যদি বুড়ো আঙুল দেখাতেন, মানে থামস আপ করতেন, তখনই গানে ঢুকতেন কিশোর। তার আগে নয়।

গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বহু গবেষণা করে কিশোরের এই আচরণগুলো জেনেছিলেন। এক দিনে যে কিশোর কুমারকে দিয়ে দুটো গান করানো কঠিন ব্যাপার, সেটা তিনি জানতেন। তাই দুটো গান আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন কিশোরকে। কিন্তু কিশোর তা ছুঁয়েও দেখেননি। স্টুডিওতে এসে হিন্দি অক্ষরে লেখা বাংলা গান রপ্ত করছেন। ‘প্রতিশোধ’ ছবির প্রযোজক ছিলেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। সেই ছবির জন্যই ‘হয়তো আমি কে কারো জানা নেই, আর ‘আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ’ গান দুটোর রেকর্ডিং ছিল।

পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় রত্না চ্যাটার্জিকে বললেন, ‘একটা গান হওয়ার পরই কিশোর কুমার স্টুডিও থেকে পালানোর চেষ্টা করবেন। এখান থেকে বের হওয়ার দুটো সিঁড়ি। 
আমি একটা পথে থাকব, আপনি আরেকটায়। ও যেন পালাতে না পারে।’

‘হয়তো আমি কে কারো জানা নেই’ হয়ে গেল। পুলক আর রত্না কথামতো দুদিকের দুই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিশোর কুমার কিন্তু পুলকের দিকের সিঁড়িতে এলেন না। পুলক ভাবলেন, যাক! পালাচ্ছিলেন না তাহলে! কিন্তু রেকর্ডিং থিয়েটারে ঢুকতেই দেখলেন, রত্না হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছেন। কী ব্যাপার? রত্না জানালেন, তার দিক দিয়েই পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। অগত্যা পলায়ন সম্ভব হয়নি। ফলে দ্বিতীয় গানটিও গাইতে হলো তাঁকে।

সূত্র: পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, কথায় কথায় রাত হয়ে যায়, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ