Ajker Patrika

চট্টগ্রাম মহানগর: যানবাহনে চাঁদা আদায়ের নেপথ্যে শ্রমিকনেতারা

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৪৪
চট্টগ্রাম মহানগর: যানবাহনে চাঁদা আদায়ের নেপথ্যে শ্রমিকনেতারা

চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচল করা বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। অবৈধ এসব চাঁদাবাজির নেপথ্যে আছেন কয়েকজন শ্রমিকনেতা। তাঁদের কেউ কেউ আবার হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিও।

৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন, পাহাড়তলী, এ কে খান মোড়ে যানবাহনের চারটি স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে সরাসরি চাঁদা আদায়ে যুক্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে।

ওই অভিযানের বিষয়ে র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে মাসে ৪০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। ওই এলাকায় প্রতিদিন চা-নাশতার খরচ বাবদ সরাসরি চাঁদা উত্তোলনকারীদের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। অভিযানে ওই এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। পাহাড়তলী থানাধীন হোটেল মেরিনের সামনে, অক্সিজেন মোড় এবং এ কে খান মোড়েও বাস-মিনিবাস ও অটোটেম্পো থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে বলেও জানায় র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে জানান, এসব চাঁদার টাকা কয়েকজন ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই কয়েকজন শ্রমিক সংগঠনের নেতা। মূলত তাঁরাই এসব চাঁদা আদায় নিয়ন্ত্রণ করেন। 

কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় আবুল হোসেন ও সাহেদ রানা নামের দুজনের নাম উঠে এসেছে। আবুল হোসেন হলেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন (১৪৪১) নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের কাপ্তাই রাস্তার মাথা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, চুরিসহ ১১টি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও মোহরা এলাকায় মা ও ছেলেকে অস্ত্র, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান আবুল হোসেন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় যানবাহনে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সাহেদ রানা হলেন একই সংগঠনের আরেক নেতা। 

র‍্যাব আরও জানায়, পাহাড়তলী এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা চাঁদার টাকা যায় শ্রমিকনেতা খলিলুর রহমানের কাছে। তিনি সীতাকুণ্ড অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে রয়েছেন। অক্সিজেন মোড়ে নূরুল হক পুতু নামের এক ব্যক্তির হাতে চাঁদার টাকা জমা হয়। তিনি হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে আছেন। এ কে খান মোড় এলাকায় চাঁদার টাকা জমা হচ্ছে সমু নামের এক ব্যক্তির হাতে। সমু হলেন লুসাই পরিবহন বাসের মালিক ও শ্রমিকনেতা। সব কটি সংগঠনই ফেডারেশনভুক্ত। 

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা ওয়েবিলের নামে নিজেদের সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন চালক-মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছেন। পুলিশসহ স্থানীয় ক্যাডারদের ম্যানেজ করে এসব নেতাই মূলত যানবাহনে চাঁদা-বাণিজ্য ধরে রেখেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের জন্য ৩০ টাকা ও মালিকেরা ৩০ টাকা করে চাঁদা নিতে পারবে। এসব টাকা পরে কোনো শ্রমিক মারা গেলে বা অসুস্থ হলে অনুদান দেওয়া হয়। সাধারণত স্টার্টিং ও লোডিং টাইমে এই চাঁদা নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারের নিয়মের বাইরে আমাদের ফেডারেশন অতিরিক্ত কোনো চাঁদা উত্তোলন করে না।’

বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ওয়েবিলের নামে মূলত অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে। এসব চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য কমাতে র‍্যাব সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। 

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, ‘আসামিদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত