জাহীদ রেজা নূর

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত। তারা রবীন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিত নজরুলকে। বিতর্ক করত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে। বলা হতো, নজরুলই তো নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রুদ্ধবাক করে (আরেক ভার্সন, পাগল বানিয়ে) রবীন্দ্রনাথ সেই পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন।
এখন এই রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত মতলববাজ মানুষ। তারা যেকোনো মূল্যে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়। এই রবীন্দ্রবিরোধিতার পুরোটাই রাজনৈতিক। আরও সোজা কথায়, এই মতলববাজদের মনের কথা হলো, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কেন একজন ভিন্নধর্মী মানুষকে তাদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এতটা মূল্য দেবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এই রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে। যে কেউ তথ্যের উৎস হিসেবে এমন কিছু ব্যবহার করছে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি শুধু রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা, তা নয়; ভাবনার এ ধরনটির মধ্যে উগ্র ধর্মান্ধতা, পরধর্মবিদ্বেষ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাজের সূত্র ধরে এ প্রসঙ্গগুলো এগোয় না। এগোয় তিনি যা করেননি, তা কেন করেননি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে।
২. প্রথমেই বলে রাখি, রবীন্দ্রনাথকে পয়গম্বর বানানোর কোনো ইচ্ছে থেকে এই লেখা নয়; কিংবা অন্ধভাবে রবীন্দ্রনাথের সব কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার ইচ্ছেও আমার নেই। রবীন্দ্র-ভক্ত একটা গোঁড়া সম্প্রদায় আছে, যারা মনে করে, জগতের সব প্রশ্নের উত্তর রবীন্দ্রনাথে আছে—আমি সেই দলের নই। আজকের আলোচনায় সেই দিকগুলো আনারও দরকার নেই। একেবারে অপ্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে। আরও একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ব্রিটিশ রাজের প্রশংসা হিসেবে উল্লেখ করে। এই দুটি বিষয়েই তথ্য-প্রমাণসহ দেখানো হয়েছে যে দুটি অভিযোগই নির্জলা মিথ্যা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথের নৃশংসতা নিয়েও যেসব গল্পকাহিনি ফাঁদা হয়েছে, সেগুলোও রবীন্দ্রনাথ পাঠেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রজাদের সঙ্গে জমিদারের সম্পর্ক বিষয়টি তাঁর লেখাতেই স্পষ্ট হয়ে আছে। নতুন পণ্ডিতদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কিছু আসে-যায় না।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কে আর এ সময় রবীন্দ্রনাথ পড়তে যায়? তিনি কী লিখেছেন, তাঁর ভাবনার পরিবর্তন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়া ইত্যাদির নিবিড় পাঠ ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে ইচ্ছে হলেই খারিজ করে দেওয়া যায় না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে না পড়েই তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক বন্ধন মলিন করে দিতে পারে। সেটাই যা চিন্তার।
৩. ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলার অধিবাসী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দেশ ভাঙলেও রবীন্দ্রনাথকে ভাগ করে নেওয়া যাবে না—এই সহজ সত্যটি যে কারণে রাজনীতিবিদেরা মাথায় নিলেন না তা হলো, রবীন্দ্রনাথের ধর্ম পরিচয়। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ যে নিরাকার ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন, সে কথা বারবার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলে গেছেন। আরও অনেকেই তখন আমাদের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সরকারি প্রচারণার কারণে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতায় কতটা দেশ ও প্রকৃতি মিশে আছে, সে প্রশ্ন মুখ্য না হয়ে মুখ্য হলো, মুসলমান সমাজে রবীন্দ্রনাথের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি। এ বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তা সেই সময়কার পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
রাষ্ট্রভাষার ওপর আঘাত এলেই কেবল দ্বিধান্বিত বাঙালি সমাজ নিজ সংস্কৃতির প্রতি বিপুলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ম্লান করে দিয়ে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে চালিকাশক্তি। আর সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন বাঁচার এক বড় অবলম্বন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। সরকারি পক্ষ নেন অনেক বুদ্ধিজীবী। কিন্তু সরকারি পক্ষ অবলম্বনকারী বুদ্ধিজীবীদের খোঁড়া যুক্তিতে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেনি।
ফলে সে সময় রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভূরূপে প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছিল। ভুললে চলবে না, আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলই ছিলেন মূল সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তি। রবীন্দ্রনাথের গান তাই আমাদের জাতীয় সংগীত। নজরুলের গান আমাদের রণসংগীত।
৪. তাহলে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথকে ‘পরদেশি’ করার কথা ভাবল কারা? একটি দলের কথা তো শুরুতেই উল্লেখ করেছি, যারা ধর্মীয়ভাবে সাহিত্য বা সমাজের বিভাজন চায়। আরেকটি হলো ফুকো-দেরিদা পড়া প্রাজ্ঞ মহাজনের দল। প্রত্যক্ষভাবে তারা রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতাগুলো নিয়ে গল্প ফাঁদে; কিন্তু তাদের পরোক্ষ বা মূল উদ্দেশ্য হলো রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত করা, রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির মন থেকে সরিয়ে নেওয়া। তৃতীয় আরেকটি দল আছে, যারা নেতিবাচক কোনো স্থূল বাক্য লিখে উসকে দেয় পাঠককে। আর সেই সুযোগে উগ্র মতবাদ ধারণ করা মানুষ তাদের রোষ ঢেলে দিতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
উদাহরণ দিয়ে আমার মতামত প্রতিষ্ঠিত করব না। কারণ, যারা রবীন্দ্রনাথের পেছনে লেগেছে, তারা এই লেখা পড়বে না কিংবা পড়লেও তারা যুক্তিকে গ্রহণ করবে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, অন্ধভাবে রবীন্দ্রবিরোধিতা করা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচারগুলোর জবাব দেওয়াও জরুরি।
কৃষক বা শ্রমিকশ্রেণি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, ধর্ম প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করলেই সত্যিকার রবীন্দ্রনাথ উঠে আসবেন। কিন্তু সেই পরিশ্রমটুকু কে করবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিও-ভিজ্যুয়াল বয়ানে কিংবা লেখায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে প্রলুব্ধ হবেই সাধারণ মানুষ। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে সত্য উদ্ঘাটন করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
৫. কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করলে কার লাভ? কেন লাভ?
এখানেই রয়েছে রাজনীতি। বাঙালি মুসলমানকে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো গেলে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’ ভাঙার একটা জবাব দেওয়া যাবে, এটা একটা দিক। কিন্তু গভীরে গেলে দেখা যাবে, আমাদের সামাজিক গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেভাবে সালাফি মনোভাব ঢুকে গেছে, তাতে নতুন যুগের মানুষের পক্ষে মানবিক হয়ে কোনো কিছুর সন্ধান লাভ কঠিন হয়ে পড়বে। উগ্র ধর্মান্ধতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা যুক্ত হওয়ায় এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন প্রচার পাওয়ায় রবীন্দ্রনাথকে তো প্রশ্নবিদ্ধ করাই গেছে। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা যাবে সমাজে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
পোশাক-আশাকে, ভাবনায়-চিন্তায় দেশের মাটিকে শ্রদ্ধা না করে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব সমাজে একধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই এখন এমন সব প্রশ্ন তুলছেন, যে প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সেই সময়কার স্পিরিটের কোনো সংযোগ নেই। ফলে ‘কার লাভ’ প্রশ্নটির একটা উত্তর হয়তো হতে পারে এমন: পরাজিত ধর্মব্যবসায়ীদের লাভ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকারীদের লাভ।
এ কথা বলার সময় সচেতনভাবেই মনে রাখছি, কোনো জাতীয়তাবাদই দীর্ঘ সময়ের জন্য মুখ্য হয়ে থাকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের মধ্যে যে নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা আছে, সেটা ভয়ংকর। একই রকমভাবে নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলার মধ্যেও রয়েছে সেই ভয়ংকর প্রবণতা। এই সংকট মনে রেখেই ধীর পায়ে সামনের দিকে এগোনো উচিত।
৬. রবীন্দ্রনাথের সব রচনাই এখনকার পাঠককে আকৃষ্ট করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর বহু কবিতা পড়ে এখন হয়তোবা রস আস্বাদন করা যাবে না। কোনো কোনো রচনা হারিয়েছে তার সময়োপযোগিতা। কিন্তু সমাজ-ভাবনা, রাষ্ট্র-ভাবনা, সমবায়-ভাবনা, ভাষা-ভাবনা ইত্যাদিতে তাঁর যে বক্তব্য আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে উঠে আসবেন সেই রবীন্দ্রনাথ, যিনি অবিনশ্বর হয়ে উঠবেন।
হোমার, ভার্জিল, দান্তে, সারভান্তেস, শেক্সপিয়ার, পুশকিনেরও সমালোচনা হয়। সমালোচনা তো হবেই। নদীর স্রোত থাকলেই তো সজীব হয়ে ওঠে আশপাশের প্রান্তর। সে স্রোতেই তো ভাসিয়ে দিতে হয় জলযান। কিন্তু নদীকে অস্বীকার করে জলযান চালানো কি যায়? যে মনীষীদের নাম লিখলাম এইমাত্র, তাঁদেরও সমালোচনা করা হয়, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কড়া কথা বলেন অনেকেই। কিন্তু তা তাঁদের খারিজ করে দিয়ে নয়; কিংবা তাঁরা যা করেননি, কেন করেননি, এ ধরনের বোকা প্রশ্ন উত্থাপন করে নয়। তাঁদের কীর্তির ওপর আস্থা রেখেই তা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর রচনাগুলো রেখেই গেছেন। সমালোচনা হোক সেই সূত্র ধরেই। অযথা বাগাড়ম্বর তাতে কমবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত। তারা রবীন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিত নজরুলকে। বিতর্ক করত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে। বলা হতো, নজরুলই তো নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রুদ্ধবাক করে (আরেক ভার্সন, পাগল বানিয়ে) রবীন্দ্রনাথ সেই পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন।
এখন এই রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত মতলববাজ মানুষ। তারা যেকোনো মূল্যে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়। এই রবীন্দ্রবিরোধিতার পুরোটাই রাজনৈতিক। আরও সোজা কথায়, এই মতলববাজদের মনের কথা হলো, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কেন একজন ভিন্নধর্মী মানুষকে তাদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এতটা মূল্য দেবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এই রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে। যে কেউ তথ্যের উৎস হিসেবে এমন কিছু ব্যবহার করছে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি শুধু রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা, তা নয়; ভাবনার এ ধরনটির মধ্যে উগ্র ধর্মান্ধতা, পরধর্মবিদ্বেষ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাজের সূত্র ধরে এ প্রসঙ্গগুলো এগোয় না। এগোয় তিনি যা করেননি, তা কেন করেননি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে।
২. প্রথমেই বলে রাখি, রবীন্দ্রনাথকে পয়গম্বর বানানোর কোনো ইচ্ছে থেকে এই লেখা নয়; কিংবা অন্ধভাবে রবীন্দ্রনাথের সব কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার ইচ্ছেও আমার নেই। রবীন্দ্র-ভক্ত একটা গোঁড়া সম্প্রদায় আছে, যারা মনে করে, জগতের সব প্রশ্নের উত্তর রবীন্দ্রনাথে আছে—আমি সেই দলের নই। আজকের আলোচনায় সেই দিকগুলো আনারও দরকার নেই। একেবারে অপ্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে। আরও একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ব্রিটিশ রাজের প্রশংসা হিসেবে উল্লেখ করে। এই দুটি বিষয়েই তথ্য-প্রমাণসহ দেখানো হয়েছে যে দুটি অভিযোগই নির্জলা মিথ্যা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথের নৃশংসতা নিয়েও যেসব গল্পকাহিনি ফাঁদা হয়েছে, সেগুলোও রবীন্দ্রনাথ পাঠেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রজাদের সঙ্গে জমিদারের সম্পর্ক বিষয়টি তাঁর লেখাতেই স্পষ্ট হয়ে আছে। নতুন পণ্ডিতদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কিছু আসে-যায় না।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কে আর এ সময় রবীন্দ্রনাথ পড়তে যায়? তিনি কী লিখেছেন, তাঁর ভাবনার পরিবর্তন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়া ইত্যাদির নিবিড় পাঠ ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে ইচ্ছে হলেই খারিজ করে দেওয়া যায় না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে না পড়েই তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক বন্ধন মলিন করে দিতে পারে। সেটাই যা চিন্তার।
৩. ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলার অধিবাসী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দেশ ভাঙলেও রবীন্দ্রনাথকে ভাগ করে নেওয়া যাবে না—এই সহজ সত্যটি যে কারণে রাজনীতিবিদেরা মাথায় নিলেন না তা হলো, রবীন্দ্রনাথের ধর্ম পরিচয়। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ যে নিরাকার ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন, সে কথা বারবার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলে গেছেন। আরও অনেকেই তখন আমাদের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সরকারি প্রচারণার কারণে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতায় কতটা দেশ ও প্রকৃতি মিশে আছে, সে প্রশ্ন মুখ্য না হয়ে মুখ্য হলো, মুসলমান সমাজে রবীন্দ্রনাথের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি। এ বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তা সেই সময়কার পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
রাষ্ট্রভাষার ওপর আঘাত এলেই কেবল দ্বিধান্বিত বাঙালি সমাজ নিজ সংস্কৃতির প্রতি বিপুলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ম্লান করে দিয়ে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে চালিকাশক্তি। আর সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন বাঁচার এক বড় অবলম্বন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। সরকারি পক্ষ নেন অনেক বুদ্ধিজীবী। কিন্তু সরকারি পক্ষ অবলম্বনকারী বুদ্ধিজীবীদের খোঁড়া যুক্তিতে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেনি।
ফলে সে সময় রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভূরূপে প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছিল। ভুললে চলবে না, আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলই ছিলেন মূল সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তি। রবীন্দ্রনাথের গান তাই আমাদের জাতীয় সংগীত। নজরুলের গান আমাদের রণসংগীত।
৪. তাহলে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথকে ‘পরদেশি’ করার কথা ভাবল কারা? একটি দলের কথা তো শুরুতেই উল্লেখ করেছি, যারা ধর্মীয়ভাবে সাহিত্য বা সমাজের বিভাজন চায়। আরেকটি হলো ফুকো-দেরিদা পড়া প্রাজ্ঞ মহাজনের দল। প্রত্যক্ষভাবে তারা রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতাগুলো নিয়ে গল্প ফাঁদে; কিন্তু তাদের পরোক্ষ বা মূল উদ্দেশ্য হলো রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত করা, রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির মন থেকে সরিয়ে নেওয়া। তৃতীয় আরেকটি দল আছে, যারা নেতিবাচক কোনো স্থূল বাক্য লিখে উসকে দেয় পাঠককে। আর সেই সুযোগে উগ্র মতবাদ ধারণ করা মানুষ তাদের রোষ ঢেলে দিতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
উদাহরণ দিয়ে আমার মতামত প্রতিষ্ঠিত করব না। কারণ, যারা রবীন্দ্রনাথের পেছনে লেগেছে, তারা এই লেখা পড়বে না কিংবা পড়লেও তারা যুক্তিকে গ্রহণ করবে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, অন্ধভাবে রবীন্দ্রবিরোধিতা করা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচারগুলোর জবাব দেওয়াও জরুরি।
কৃষক বা শ্রমিকশ্রেণি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, ধর্ম প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করলেই সত্যিকার রবীন্দ্রনাথ উঠে আসবেন। কিন্তু সেই পরিশ্রমটুকু কে করবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিও-ভিজ্যুয়াল বয়ানে কিংবা লেখায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে প্রলুব্ধ হবেই সাধারণ মানুষ। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে সত্য উদ্ঘাটন করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
৫. কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করলে কার লাভ? কেন লাভ?
এখানেই রয়েছে রাজনীতি। বাঙালি মুসলমানকে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো গেলে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’ ভাঙার একটা জবাব দেওয়া যাবে, এটা একটা দিক। কিন্তু গভীরে গেলে দেখা যাবে, আমাদের সামাজিক গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেভাবে সালাফি মনোভাব ঢুকে গেছে, তাতে নতুন যুগের মানুষের পক্ষে মানবিক হয়ে কোনো কিছুর সন্ধান লাভ কঠিন হয়ে পড়বে। উগ্র ধর্মান্ধতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা যুক্ত হওয়ায় এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন প্রচার পাওয়ায় রবীন্দ্রনাথকে তো প্রশ্নবিদ্ধ করাই গেছে। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা যাবে সমাজে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
পোশাক-আশাকে, ভাবনায়-চিন্তায় দেশের মাটিকে শ্রদ্ধা না করে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব সমাজে একধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই এখন এমন সব প্রশ্ন তুলছেন, যে প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সেই সময়কার স্পিরিটের কোনো সংযোগ নেই। ফলে ‘কার লাভ’ প্রশ্নটির একটা উত্তর হয়তো হতে পারে এমন: পরাজিত ধর্মব্যবসায়ীদের লাভ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকারীদের লাভ।
এ কথা বলার সময় সচেতনভাবেই মনে রাখছি, কোনো জাতীয়তাবাদই দীর্ঘ সময়ের জন্য মুখ্য হয়ে থাকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের মধ্যে যে নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা আছে, সেটা ভয়ংকর। একই রকমভাবে নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলার মধ্যেও রয়েছে সেই ভয়ংকর প্রবণতা। এই সংকট মনে রেখেই ধীর পায়ে সামনের দিকে এগোনো উচিত।
৬. রবীন্দ্রনাথের সব রচনাই এখনকার পাঠককে আকৃষ্ট করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর বহু কবিতা পড়ে এখন হয়তোবা রস আস্বাদন করা যাবে না। কোনো কোনো রচনা হারিয়েছে তার সময়োপযোগিতা। কিন্তু সমাজ-ভাবনা, রাষ্ট্র-ভাবনা, সমবায়-ভাবনা, ভাষা-ভাবনা ইত্যাদিতে তাঁর যে বক্তব্য আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে উঠে আসবেন সেই রবীন্দ্রনাথ, যিনি অবিনশ্বর হয়ে উঠবেন।
হোমার, ভার্জিল, দান্তে, সারভান্তেস, শেক্সপিয়ার, পুশকিনেরও সমালোচনা হয়। সমালোচনা তো হবেই। নদীর স্রোত থাকলেই তো সজীব হয়ে ওঠে আশপাশের প্রান্তর। সে স্রোতেই তো ভাসিয়ে দিতে হয় জলযান। কিন্তু নদীকে অস্বীকার করে জলযান চালানো কি যায়? যে মনীষীদের নাম লিখলাম এইমাত্র, তাঁদেরও সমালোচনা করা হয়, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কড়া কথা বলেন অনেকেই। কিন্তু তা তাঁদের খারিজ করে দিয়ে নয়; কিংবা তাঁরা যা করেননি, কেন করেননি, এ ধরনের বোকা প্রশ্ন উত্থাপন করে নয়। তাঁদের কীর্তির ওপর আস্থা রেখেই তা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর রচনাগুলো রেখেই গেছেন। সমালোচনা হোক সেই সূত্র ধরেই। অযথা বাগাড়ম্বর তাতে কমবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত। তারা রবীন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিত নজরুলকে। বিতর্ক করত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে। বলা হতো, নজরুলই তো নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রুদ্ধবাক করে (আরেক ভার্সন, পাগল বানিয়ে) রবীন্দ্রনাথ সেই পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন।
এখন এই রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত মতলববাজ মানুষ। তারা যেকোনো মূল্যে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়। এই রবীন্দ্রবিরোধিতার পুরোটাই রাজনৈতিক। আরও সোজা কথায়, এই মতলববাজদের মনের কথা হলো, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কেন একজন ভিন্নধর্মী মানুষকে তাদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এতটা মূল্য দেবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এই রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে। যে কেউ তথ্যের উৎস হিসেবে এমন কিছু ব্যবহার করছে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি শুধু রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা, তা নয়; ভাবনার এ ধরনটির মধ্যে উগ্র ধর্মান্ধতা, পরধর্মবিদ্বেষ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাজের সূত্র ধরে এ প্রসঙ্গগুলো এগোয় না। এগোয় তিনি যা করেননি, তা কেন করেননি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে।
২. প্রথমেই বলে রাখি, রবীন্দ্রনাথকে পয়গম্বর বানানোর কোনো ইচ্ছে থেকে এই লেখা নয়; কিংবা অন্ধভাবে রবীন্দ্রনাথের সব কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার ইচ্ছেও আমার নেই। রবীন্দ্র-ভক্ত একটা গোঁড়া সম্প্রদায় আছে, যারা মনে করে, জগতের সব প্রশ্নের উত্তর রবীন্দ্রনাথে আছে—আমি সেই দলের নই। আজকের আলোচনায় সেই দিকগুলো আনারও দরকার নেই। একেবারে অপ্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে। আরও একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ব্রিটিশ রাজের প্রশংসা হিসেবে উল্লেখ করে। এই দুটি বিষয়েই তথ্য-প্রমাণসহ দেখানো হয়েছে যে দুটি অভিযোগই নির্জলা মিথ্যা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথের নৃশংসতা নিয়েও যেসব গল্পকাহিনি ফাঁদা হয়েছে, সেগুলোও রবীন্দ্রনাথ পাঠেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রজাদের সঙ্গে জমিদারের সম্পর্ক বিষয়টি তাঁর লেখাতেই স্পষ্ট হয়ে আছে। নতুন পণ্ডিতদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কিছু আসে-যায় না।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কে আর এ সময় রবীন্দ্রনাথ পড়তে যায়? তিনি কী লিখেছেন, তাঁর ভাবনার পরিবর্তন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়া ইত্যাদির নিবিড় পাঠ ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে ইচ্ছে হলেই খারিজ করে দেওয়া যায় না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে না পড়েই তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক বন্ধন মলিন করে দিতে পারে। সেটাই যা চিন্তার।
৩. ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলার অধিবাসী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দেশ ভাঙলেও রবীন্দ্রনাথকে ভাগ করে নেওয়া যাবে না—এই সহজ সত্যটি যে কারণে রাজনীতিবিদেরা মাথায় নিলেন না তা হলো, রবীন্দ্রনাথের ধর্ম পরিচয়। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ যে নিরাকার ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন, সে কথা বারবার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলে গেছেন। আরও অনেকেই তখন আমাদের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সরকারি প্রচারণার কারণে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতায় কতটা দেশ ও প্রকৃতি মিশে আছে, সে প্রশ্ন মুখ্য না হয়ে মুখ্য হলো, মুসলমান সমাজে রবীন্দ্রনাথের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি। এ বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তা সেই সময়কার পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
রাষ্ট্রভাষার ওপর আঘাত এলেই কেবল দ্বিধান্বিত বাঙালি সমাজ নিজ সংস্কৃতির প্রতি বিপুলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ম্লান করে দিয়ে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে চালিকাশক্তি। আর সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন বাঁচার এক বড় অবলম্বন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। সরকারি পক্ষ নেন অনেক বুদ্ধিজীবী। কিন্তু সরকারি পক্ষ অবলম্বনকারী বুদ্ধিজীবীদের খোঁড়া যুক্তিতে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেনি।
ফলে সে সময় রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভূরূপে প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছিল। ভুললে চলবে না, আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলই ছিলেন মূল সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তি। রবীন্দ্রনাথের গান তাই আমাদের জাতীয় সংগীত। নজরুলের গান আমাদের রণসংগীত।
৪. তাহলে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথকে ‘পরদেশি’ করার কথা ভাবল কারা? একটি দলের কথা তো শুরুতেই উল্লেখ করেছি, যারা ধর্মীয়ভাবে সাহিত্য বা সমাজের বিভাজন চায়। আরেকটি হলো ফুকো-দেরিদা পড়া প্রাজ্ঞ মহাজনের দল। প্রত্যক্ষভাবে তারা রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতাগুলো নিয়ে গল্প ফাঁদে; কিন্তু তাদের পরোক্ষ বা মূল উদ্দেশ্য হলো রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত করা, রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির মন থেকে সরিয়ে নেওয়া। তৃতীয় আরেকটি দল আছে, যারা নেতিবাচক কোনো স্থূল বাক্য লিখে উসকে দেয় পাঠককে। আর সেই সুযোগে উগ্র মতবাদ ধারণ করা মানুষ তাদের রোষ ঢেলে দিতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
উদাহরণ দিয়ে আমার মতামত প্রতিষ্ঠিত করব না। কারণ, যারা রবীন্দ্রনাথের পেছনে লেগেছে, তারা এই লেখা পড়বে না কিংবা পড়লেও তারা যুক্তিকে গ্রহণ করবে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, অন্ধভাবে রবীন্দ্রবিরোধিতা করা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচারগুলোর জবাব দেওয়াও জরুরি।
কৃষক বা শ্রমিকশ্রেণি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, ধর্ম প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করলেই সত্যিকার রবীন্দ্রনাথ উঠে আসবেন। কিন্তু সেই পরিশ্রমটুকু কে করবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিও-ভিজ্যুয়াল বয়ানে কিংবা লেখায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে প্রলুব্ধ হবেই সাধারণ মানুষ। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে সত্য উদ্ঘাটন করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
৫. কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করলে কার লাভ? কেন লাভ?
এখানেই রয়েছে রাজনীতি। বাঙালি মুসলমানকে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো গেলে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’ ভাঙার একটা জবাব দেওয়া যাবে, এটা একটা দিক। কিন্তু গভীরে গেলে দেখা যাবে, আমাদের সামাজিক গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেভাবে সালাফি মনোভাব ঢুকে গেছে, তাতে নতুন যুগের মানুষের পক্ষে মানবিক হয়ে কোনো কিছুর সন্ধান লাভ কঠিন হয়ে পড়বে। উগ্র ধর্মান্ধতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা যুক্ত হওয়ায় এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন প্রচার পাওয়ায় রবীন্দ্রনাথকে তো প্রশ্নবিদ্ধ করাই গেছে। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা যাবে সমাজে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
পোশাক-আশাকে, ভাবনায়-চিন্তায় দেশের মাটিকে শ্রদ্ধা না করে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব সমাজে একধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই এখন এমন সব প্রশ্ন তুলছেন, যে প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সেই সময়কার স্পিরিটের কোনো সংযোগ নেই। ফলে ‘কার লাভ’ প্রশ্নটির একটা উত্তর হয়তো হতে পারে এমন: পরাজিত ধর্মব্যবসায়ীদের লাভ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকারীদের লাভ।
এ কথা বলার সময় সচেতনভাবেই মনে রাখছি, কোনো জাতীয়তাবাদই দীর্ঘ সময়ের জন্য মুখ্য হয়ে থাকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের মধ্যে যে নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা আছে, সেটা ভয়ংকর। একই রকমভাবে নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলার মধ্যেও রয়েছে সেই ভয়ংকর প্রবণতা। এই সংকট মনে রেখেই ধীর পায়ে সামনের দিকে এগোনো উচিত।
৬. রবীন্দ্রনাথের সব রচনাই এখনকার পাঠককে আকৃষ্ট করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর বহু কবিতা পড়ে এখন হয়তোবা রস আস্বাদন করা যাবে না। কোনো কোনো রচনা হারিয়েছে তার সময়োপযোগিতা। কিন্তু সমাজ-ভাবনা, রাষ্ট্র-ভাবনা, সমবায়-ভাবনা, ভাষা-ভাবনা ইত্যাদিতে তাঁর যে বক্তব্য আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে উঠে আসবেন সেই রবীন্দ্রনাথ, যিনি অবিনশ্বর হয়ে উঠবেন।
হোমার, ভার্জিল, দান্তে, সারভান্তেস, শেক্সপিয়ার, পুশকিনেরও সমালোচনা হয়। সমালোচনা তো হবেই। নদীর স্রোত থাকলেই তো সজীব হয়ে ওঠে আশপাশের প্রান্তর। সে স্রোতেই তো ভাসিয়ে দিতে হয় জলযান। কিন্তু নদীকে অস্বীকার করে জলযান চালানো কি যায়? যে মনীষীদের নাম লিখলাম এইমাত্র, তাঁদেরও সমালোচনা করা হয়, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কড়া কথা বলেন অনেকেই। কিন্তু তা তাঁদের খারিজ করে দিয়ে নয়; কিংবা তাঁরা যা করেননি, কেন করেননি, এ ধরনের বোকা প্রশ্ন উত্থাপন করে নয়। তাঁদের কীর্তির ওপর আস্থা রেখেই তা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর রচনাগুলো রেখেই গেছেন। সমালোচনা হোক সেই সূত্র ধরেই। অযথা বাগাড়ম্বর তাতে কমবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত। তারা রবীন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিত নজরুলকে। বিতর্ক করত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে। বলা হতো, নজরুলই তো নোবেল পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রুদ্ধবাক করে (আরেক ভার্সন, পাগল বানিয়ে) রবীন্দ্রনাথ সেই পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন।
এখন এই রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষিত মতলববাজ মানুষ। তারা যেকোনো মূল্যে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়। এই রবীন্দ্রবিরোধিতার পুরোটাই রাজনৈতিক। আরও সোজা কথায়, এই মতলববাজদের মনের কথা হলো, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কেন একজন ভিন্নধর্মী মানুষকে তাদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এতটা মূল্য দেবে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এই রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারছে। যে কেউ তথ্যের উৎস হিসেবে এমন কিছু ব্যবহার করছে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি শুধু রবীন্দ্রনাথকে ছোট করার চেষ্টা, তা নয়; ভাবনার এ ধরনটির মধ্যে উগ্র ধর্মান্ধতা, পরধর্মবিদ্বেষ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাজের সূত্র ধরে এ প্রসঙ্গগুলো এগোয় না। এগোয় তিনি যা করেননি, তা কেন করেননি, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে।
২. প্রথমেই বলে রাখি, রবীন্দ্রনাথকে পয়গম্বর বানানোর কোনো ইচ্ছে থেকে এই লেখা নয়; কিংবা অন্ধভাবে রবীন্দ্রনাথের সব কর্মকাণ্ডকে জায়েজ করার ইচ্ছেও আমার নেই। রবীন্দ্র-ভক্ত একটা গোঁড়া সম্প্রদায় আছে, যারা মনে করে, জগতের সব প্রশ্নের উত্তর রবীন্দ্রনাথে আছে—আমি সেই দলের নই। আজকের আলোচনায় সেই দিকগুলো আনারও দরকার নেই। একেবারে অপ্রয়োজনীয় একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেছিলেন কি না, তা নিয়ে। আরও একটি বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ গানটি ব্রিটিশ রাজের প্রশংসা হিসেবে উল্লেখ করে। এই দুটি বিষয়েই তথ্য-প্রমাণসহ দেখানো হয়েছে যে দুটি অভিযোগই নির্জলা মিথ্যা।
জমিদার রবীন্দ্রনাথের নৃশংসতা নিয়েও যেসব গল্পকাহিনি ফাঁদা হয়েছে, সেগুলোও রবীন্দ্রনাথ পাঠেই নিঃশেষ হয়ে যায়। প্রজাদের সঙ্গে জমিদারের সম্পর্ক বিষয়টি তাঁর লেখাতেই স্পষ্ট হয়ে আছে। নতুন পণ্ডিতদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় কিছু আসে-যায় না।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কে আর এ সময় রবীন্দ্রনাথ পড়তে যায়? তিনি কী লিখেছেন, তাঁর ভাবনার পরিবর্তন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়া ইত্যাদির নিবিড় পাঠ ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে ইচ্ছে হলেই খারিজ করে দেওয়া যায় না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে না পড়েই তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা মানুষে-মানুষে সাংস্কৃতিক বন্ধন মলিন করে দিতে পারে। সেটাই যা চিন্তার।
৩. ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলার অধিবাসী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাই দেশ ভাঙলেও রবীন্দ্রনাথকে ভাগ করে নেওয়া যাবে না—এই সহজ সত্যটি যে কারণে রাজনীতিবিদেরা মাথায় নিলেন না তা হলো, রবীন্দ্রনাথের ধর্ম পরিচয়। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথ যে নিরাকার ঈশ্বরের প্রতি অনুগত ছিলেন, সে কথা বারবার মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলে গেছেন। আরও অনেকেই তখন আমাদের সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু সরকারি প্রচারণার কারণে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীলতায় কতটা দেশ ও প্রকৃতি মিশে আছে, সে প্রশ্ন মুখ্য না হয়ে মুখ্য হলো, মুসলমান সমাজে রবীন্দ্রনাথের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি। এ বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তা সেই সময়কার পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
রাষ্ট্রভাষার ওপর আঘাত এলেই কেবল দ্বিধান্বিত বাঙালি সমাজ নিজ সংস্কৃতির প্রতি বিপুলভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটিকে সামনে নিয়ে আসে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ম্লান করে দিয়ে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ হয়ে ওঠে চালিকাশক্তি। আর সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন বাঁচার এক বড় অবলম্বন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবী সমাজও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। সরকারি পক্ষ নেন অনেক বুদ্ধিজীবী। কিন্তু সরকারি পক্ষ অবলম্বনকারী বুদ্ধিজীবীদের খোঁড়া যুক্তিতে সাধারণ মানুষ আস্থা রাখেনি।
ফলে সে সময় রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভূরূপে প্রতিষ্ঠা করা গিয়েছিল। ভুললে চলবে না, আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলই ছিলেন মূল সাংস্কৃতিক চালিকাশক্তি। রবীন্দ্রনাথের গান তাই আমাদের জাতীয় সংগীত। নজরুলের গান আমাদের রণসংগীত।
৪. তাহলে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথকে ‘পরদেশি’ করার কথা ভাবল কারা? একটি দলের কথা তো শুরুতেই উল্লেখ করেছি, যারা ধর্মীয়ভাবে সাহিত্য বা সমাজের বিভাজন চায়। আরেকটি হলো ফুকো-দেরিদা পড়া প্রাজ্ঞ মহাজনের দল। প্রত্যক্ষভাবে তারা রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতাগুলো নিয়ে গল্প ফাঁদে; কিন্তু তাদের পরোক্ষ বা মূল উদ্দেশ্য হলো রবীন্দ্রনাথকে বিতর্কিত করা, রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির মন থেকে সরিয়ে নেওয়া। তৃতীয় আরেকটি দল আছে, যারা নেতিবাচক কোনো স্থূল বাক্য লিখে উসকে দেয় পাঠককে। আর সেই সুযোগে উগ্র মতবাদ ধারণ করা মানুষ তাদের রোষ ঢেলে দিতে থাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
উদাহরণ দিয়ে আমার মতামত প্রতিষ্ঠিত করব না। কারণ, যারা রবীন্দ্রনাথের পেছনে লেগেছে, তারা এই লেখা পড়বে না কিংবা পড়লেও তারা যুক্তিকে গ্রহণ করবে না। তাদের একমাত্র লক্ষ্য, অন্ধভাবে রবীন্দ্রবিরোধিতা করা। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অপপ্রচারগুলোর জবাব দেওয়াও জরুরি।
কৃষক বা শ্রমিকশ্রেণি নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা, ধর্ম প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপলব্ধি, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করলেই সত্যিকার রবীন্দ্রনাথ উঠে আসবেন। কিন্তু সেই পরিশ্রমটুকু কে করবে? সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিও-ভিজ্যুয়াল বয়ানে কিংবা লেখায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে ছিঁড়ে-ফুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে প্রলুব্ধ হবেই সাধারণ মানুষ। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে সত্য উদ্ঘাটন করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
৫. কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে ছোট করলে কার লাভ? কেন লাভ?
এখানেই রয়েছে রাজনীতি। বাঙালি মুসলমানকে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো গেলে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’ ভাঙার একটা জবাব দেওয়া যাবে, এটা একটা দিক। কিন্তু গভীরে গেলে দেখা যাবে, আমাদের সামাজিক গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেভাবে সালাফি মনোভাব ঢুকে গেছে, তাতে নতুন যুগের মানুষের পক্ষে মানবিক হয়ে কোনো কিছুর সন্ধান লাভ কঠিন হয়ে পড়বে। উগ্র ধর্মান্ধতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা যুক্ত হওয়ায় এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন প্রচার পাওয়ায় রবীন্দ্রনাথকে তো প্রশ্নবিদ্ধ করাই গেছে। এরই অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা যাবে সমাজে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
পোশাক-আশাকে, ভাবনায়-চিন্তায় দেশের মাটিকে শ্রদ্ধা না করে বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব সমাজে একধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই এখন এমন সব প্রশ্ন তুলছেন, যে প্রশ্নগুলোর সঙ্গে সেই সময়কার স্পিরিটের কোনো সংযোগ নেই। ফলে ‘কার লাভ’ প্রশ্নটির একটা উত্তর হয়তো হতে পারে এমন: পরাজিত ধর্মব্যবসায়ীদের লাভ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতাকারীদের লাভ।
এ কথা বলার সময় সচেতনভাবেই মনে রাখছি, কোনো জাতীয়তাবাদই দীর্ঘ সময়ের জন্য মুখ্য হয়ে থাকতে পারে না। জাতীয়তাবাদের মধ্যে যে নিজেদের ‘শ্রেষ্ঠ’ হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা আছে, সেটা ভয়ংকর। একই রকমভাবে নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলার মধ্যেও রয়েছে সেই ভয়ংকর প্রবণতা। এই সংকট মনে রেখেই ধীর পায়ে সামনের দিকে এগোনো উচিত।
৬. রবীন্দ্রনাথের সব রচনাই এখনকার পাঠককে আকৃষ্ট করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। তাঁর বহু কবিতা পড়ে এখন হয়তোবা রস আস্বাদন করা যাবে না। কোনো কোনো রচনা হারিয়েছে তার সময়োপযোগিতা। কিন্তু সমাজ-ভাবনা, রাষ্ট্র-ভাবনা, সমবায়-ভাবনা, ভাষা-ভাবনা ইত্যাদিতে তাঁর যে বক্তব্য আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে উঠে আসবেন সেই রবীন্দ্রনাথ, যিনি অবিনশ্বর হয়ে উঠবেন।
হোমার, ভার্জিল, দান্তে, সারভান্তেস, শেক্সপিয়ার, পুশকিনেরও সমালোচনা হয়। সমালোচনা তো হবেই। নদীর স্রোত থাকলেই তো সজীব হয়ে ওঠে আশপাশের প্রান্তর। সে স্রোতেই তো ভাসিয়ে দিতে হয় জলযান। কিন্তু নদীকে অস্বীকার করে জলযান চালানো কি যায়? যে মনীষীদের নাম লিখলাম এইমাত্র, তাঁদেরও সমালোচনা করা হয়, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কড়া কথা বলেন অনেকেই। কিন্তু তা তাঁদের খারিজ করে দিয়ে নয়; কিংবা তাঁরা যা করেননি, কেন করেননি, এ ধরনের বোকা প্রশ্ন উত্থাপন করে নয়। তাঁদের কীর্তির ওপর আস্থা রেখেই তা করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ তো তাঁর রচনাগুলো রেখেই গেছেন। সমালোচনা হোক সেই সূত্র ধরেই। অযথা বাগাড়ম্বর তাতে কমবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত।
১৩ মে ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত।
১৩ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত।
১৩ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বেশ কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিষোদ্গার। আগে মূলত করত স্বল্পশিক্ষিত ধর্মান্ধ মানুষ। এই ধর্মান্ধ মানুষের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলমানেরাও একসময় এসব কুৎসায় বিশ্বাস আনত।
১৩ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫