Ajker Patrika

মুক্তাগাছার মণ্ডা

চয়ন বিকাশ ভদ্র
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৭: ১১
মুক্তাগাছার মণ্ডা

উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ মুক্তাগাছার জমিদারবাড়িতে আপ্যায়িত হয়েছিলেন মণ্ডা দিয়ে। শোনা যায়, রাশিয়ার জোসেফ স্তালিনকে মণ্ডা পাঠালে তিনি মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করেন। আবদুল হামিদ খান ভাসানী মণ্ডার স্বাদে বিমুগ্ধ হন। কিংবদন্তি হলো, ভাসানী চীনের চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তাগাছার মণ্ডা। চেয়ারম্যান মাও তা খেয়ে প্রশংসা করেছিলেন। এসব ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি। প্রায় ২০০ বছর ধরে মুক্তাগাছার মণ্ডা স্বাদে যেমন, কিংবদন্তিতেও তেমনি বেড়ে উঠেছে। তবে গালগল্প নিয়ে আপনার দ্বিমত থাকলেও স্বাদ নিয়ে দ্বিমত করতে শোনা যায়নি আজ পর্যন্ত কাউকেই।

মুক্তাগাছার মণ্ডার গল্পের শুরু আনুমানিক ১৮২৪ সালে। সে সময় রামগোপাল পাল প্রথম এ মণ্ডা তৈরি করেন। তাঁর প্রথম মণ্ডা তৈরি নিয়েও একটি গল্প প্রচলিত আছে। সেটাও কম চিত্তাকর্ষক নয়। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন, তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে এক সন্ন্যাসী মণ্ডা বানানোর আদেশ দিচ্ছেন। পরে স্বপ্নযোগে কয়েক রাতে সন্ন্যাসী তাঁকে মণ্ডা বানানোর পদ্ধতি শিখিয়ে দেন। শেষ নিয়মটি শেখানোর পর সন্ন্যাসী তাঁকে আশীর্বাদ করেন এই বলে, ‘মণ্ডা বানানোর জন্য একসময় তুই অনেক খ্যাতি অর্জন করবি।’ রামগোপাল পাল মণ্ডা বানিয়ে খ্যাতিমান হয়েছিলেন, সে বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি, বাড়ির পারিবারিক অনুষ্ঠান, পূজাপার্বণ ও বিভিন্ন প্রয়োজনে মুক্তাগাছার জমিদারবাড়িতে প্রচুর মিষ্টির প্রয়োজন হতো। ১৮২৪ সালে তৎকালীন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে মণ্ডা বানিয়ে পেশ করেন মুক্তাগাছা থানার তারাটী গ্রামনিবাসী রামগোপাল পাল। তার স্বাদ জমিদারকে এতই মুগ্ধ করেছিল যে সে সময় থেকেই মণ্ডা জমিদারবাড়িতে স্থায়ী আসন গেড়ে বসে। জমিদারদের খুবই পছন্দের মিষ্টি ছিল এই মণ্ডা। তাদের হাত ধরে ক্রমেই উপমহাদেশের সবখানে ছড়িয়ে পড়ে এ মণ্ডার খ্যাতি।

দুধের ছানা ও চিনি বা গুড় এই মিষ্টির প্রধান উপকরণ। ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মুক্তাগাছা পৌরসভা শহরে জমিদারবাড়ির কাছে, পূর্ব দিকে জগৎ কিশোর রোডে রামগোপাল পাল ওরফে গোপাল চন্দ্র পালের মণ্ডার দোকান। গোপাল পালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রাধানাথ পাল, রাধানাথের পুত্র কেদারনাথ পাল, কেদারনাথের পুত্র দ্বারিকনাথ পাল এবং বর্তমানে দ্বারিকনাথের পুত্র রমেন্দ্রনাথ পাল অ্যান্ড ব্রাদার্স মণ্ডার ব্যবসা চালাচ্ছেন। তাঁরা গোপাল পাল পরিবারের পঞ্চম বংশধর। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ছাড়া দেশের আর কোথাও এই প্রতিষ্ঠানের শোরুম নেই।

দরদাম
প্রতি কেজি সাদা মণ্ডার দাম ৫৬০ টাকা।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত