Ajker Patrika

হরিণের খামারের অস্তিত্ব নেই মোংলা বন্দরে, তবু ব্যয় ২১ লাখ

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম ও সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১০: ৪৫
Thumbnail image

হরিণের খামার ছিল না, হরিণও দেখেনি কেউ। অথচ অস্তিত্বহীন ওই হরিণের খামার উন্নয়নের নামে বিল করা হয়েছে ২১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ভুতুড়ে বিল করার নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের এই ঘটনা ঘটেছে মোংলা বন্দরে। এ টাকা খরচের বিষয়ে অডিট আপত্তি দিয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিএজি)।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এই অডিট আপত্তি দেওয়া হয়। এর আগে সিএজি অফিসের উপপরিচালক মো. আবদুর রব মিয়ার নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মোংলা বন্দরের ২০২১-২২ অর্থবছরের অডিট করে।

সিএজির অডিট প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা সিটির পোর্ট হাউসে মোংলা বন্দর চেয়ারম্যানের বাসভবনসংলগ্ন জায়গায় খামারটি বানানো হয়। এই হরিণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে মোংলা বন্দরের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স শাখা। এই খামারের ঠিকাদার হিসেবে নির্মাণকাজ করে মেসার্স ফুলমিয়া অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেটির ঠিকানা দেওয়া আছে খুলনা দৌলতপুরের ১৯, পাবলা সবুজ সংঘ মেইন রোড।

২০২১ সালের ১৯ জুলাই ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৫ টাকায় ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ)। তবে ঠিকাদারকে ২১ লাখ ১৯ হাজার ৩২৮ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে নিরীক্ষক দল সরেজমিনে কোনো হরিণের খামার বা হরিণের অস্তিত্ব পায়নি। ফলে হরিণের খামারের নামে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে বলে অডিট আপত্তি দেয় সিএজি অফিস।

হরিণের খামারের নামে যখন এই অর্থ ব্যয় করা হয়, তখন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা। জানতে চাইলে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মোংলা বন্দরে কোনো সময় হরিণের খামার বানানো হয়নি, আমিও কোনো হরিণ পালন করিনি। তবে একজন কর্মচারী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

অডিট প্রতিবেদনমতে, হরিণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মোংলা বন্দরের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স শাখা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই শাখার প্রধান প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী মোংলা বন্দরে হরিণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অডিট আপত্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আপত্তি হয়েছে, নিষ্পত্তি হবে। তাতে সাংবাদিকদের কাজ কী।’ 

গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে মোংলা বন্দরে কোনো হরিণের খামার বা হরিণ দেখতে পাননি আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বধন কর্মকর্তা জানান, পোর্ট চেয়ারম্যানের বাংলোর ওই খামারে তিনি কোনো হরিণ দেখতে পাননি। সেখানে আগে হরিণ ছিল কি না, তা-ও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন হিসাব কর্মকর্তা (ব্যয়) নিয়ামুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের বাংলোতে পূর্ব থেকে নদীসংলগ্ন এলাকায় আলাদা একটা প্রাচীর ছিল। তিনি সেটিকে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ করান। আমার জানামতে, তিনি সেখানে কোনো হরিণ রাখেননি।’

নিরীক্ষার আপত্তির বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এটি আমরা দাপ্তরিকভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত