Ajker Patrika

মেগা প্রকল্পে বিশেষ ইউনিট চায় ফায়ার সার্ভিস

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
মেগা প্রকল্পে বিশেষ ইউনিট চায় ফায়ার সার্ভিস

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশে। কিন্তু এসব প্রকল্পের অগ্নিনির্বাপণ, দুর্ঘটনা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত জনবল ও সরঞ্জাম নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের। ফলে এসব প্রকল্পে হঠাৎ বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে মাঠে নেমে হিমশিম খেতে হবে তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় প্রকল্পের দুর্যোগ ও যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব সময় এসব এলাকায় প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপণকর্মী, আধুনিক সরঞ্জামসহ প্রস্তুতি রাখতে হবে।

জানা গেছে, প্রতিটি বড় প্রকল্পে পৃথক পৃথক বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাড়া দিলেও কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি।

গত কয়েক মাসে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ, বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে আগুনে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর আগে গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো, রাজধানীর চুড়িহাট্টা, হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানা ও নিমতলীতে আগুনে অনেক মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদ নষ্টের দৃশ্য দেখতে হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস ছিল নিরুপায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে লেগেছে দীর্ঘ সময়। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষায়িত কেমিক্যাল ও দেশের বড় স্থাপনা রক্ষায় কতটা সক্ষম ফায়ার সার্ভিস।

ইতিমধ্যে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করা হবে। অপর দিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও ৭০ শতাংশ শেষ। চারটি মহাপ্রকল্পের অগ্নিঝুঁকিসহ যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফায়ার ফাইটার, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম নেই।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহম্মেদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সনাতন বা ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে দুর্যোগ মোকাবিলার দিন শেষ। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় ফাস্ট রেসপন্স টিম হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন করতে হবে। কেবল জনবল বৃদ্ধি করলেই হবে না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষ জনবল গঠন করতে হবে। লাগবে আধুনিক যন্ত্রপাতি।’

ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র বলছে, রাসায়নিকের আগুন নিয়ন্ত্রণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করার জন্য গত বছর একটি প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থাপনার জন্য আলাদা আলাদা বিশেষিত ইউনিট গঠন করতে হবে। এটা করা খুবই জরুরি। এই প্রস্তাবে জনবল, ভারী যন্ত্রপাতি-সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে প্রস্তাব দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একাধিকবার সভা হয়েছে। সবশেষ গত মঙ্গলবারও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল বৈঠক করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিসের ১১৪ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ ও ভারী যন্ত্রপাতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তাবের কোনো জবাব এখনো দেয়নি। তারা চুপচাপ রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেগা প্রকল্প ও কেমিক্যাল নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাব রয়েছে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। দেশের সম্পদ রক্ষায় যা যা করা দরকার, তা করতে আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত