Ajker Patrika

জেলে জাকিরের শিল্পকর্ম

রুদ্র রুহান, বরগুনা
জেলে জাকিরের শিল্পকর্ম

‘গরিবের সংসারে জন্ম নেওয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে বাড়ির পাশের বলেশ্বর নদ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরছি। একদিন নদীতে মাছ শিকারের জন্য যাই। তখন আমার ইচ্ছা হলো গাছের শিকড় দিয়ে কিছু তৈরি করি।’ এই ইচ্ছা থেকেই কাঠ দিয়ে তৈরি শিল্পকর্মের এক বড়সড় ভান্ডার গড়েছেন জাকির হোসেন মুন্সি। বন থেকে গাছের টুকরা, শ্বাসমূল, ডালপালা কুড়িয়ে এনে সেগুলোকে মাছ, হরিণের মাথা, নৌকা, ট্রলার, উড়োজাহাজসহ নানা আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন জাকির।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরবর্তী রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা জাকিরের বয়স ৫৪ বছর। পেশায় জেলে। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে চার সদস্যের সংসার চলে।

নিজের জাল-নৌকা নেই জাকিরের। অন্যের নৌকায় কাজ করেন তিনি। মাছের আকাল দেখা দিলে দিনমজুরের কাজও করেন। তবে পেশার তাগিদে মাঝেমধ্যে সুন্দরবনসহ আশপাশের সংরক্ষিত বনেও যাতায়াত আছে তাঁর। আবার সাপ উদ্ধার করে বনে অবমুক্তসহ বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ভূমিকা রাখায় তিনি এলাকায় ‘টাইগার জাকির’ হিসেবে পরিচিত।

জাকিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৩ বছর ধরে শিল্পকর্ম তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এখনো ঘরে দুই শতাধিক শিল্পকর্ম রয়েছে। তবে সেগুলো ঠিক কীভাবে সংরক্ষণ করা উচিত, তা ঠিকঠাক জানেন না। তাই মাঝেমধ্যে নিজের ঝুপড়িঘরের সামনে একচিলতে উঠানে প্লাস্টিক, চট বিছিয়ে মাঝেমধ্যে রোদে শুকাতে দেন শিল্পকর্মগুলো। সেই সময় এসব দেখতে অনেকেই আসেন।

অনেকে কিনেও নেন। এ থেকে পাওয়া টাকায় সংসারে কাজে লাগে। জাকির বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে মাঝেমধ্যে বনের মধ্যে যেতে হয়। বনের মধ্যে মরে যাওয়া গাছের শ্বাসমূল দেখে সেটা তুলে এনে খোদাইয়ের কাজ শুরু করি। মাছ ধরার পাশাপাশি শখের বশে এই কাজ করি।’

জাকির হোসেনের বাবা রশিদ মুন্সির সংসারে বেশ অভাব ছিল। তাই জাকির চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পেরেছেন। রুহিতা গ্রামের বাসিন্দা পনু চাপরাশি বলেন, সংসার টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চললেও জাকির শিল্পচর্চা থেকে পিছপা হননি। নিভৃত পল্লিতে তাঁর এসব শিল্পকর্ম সব শ্রেণির মানুষকেই মুগ্ধ করছে। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে দেখতে আসছেন জাকিরের এসব শিল্পকর্ম।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘আমিও জাকিরের বাড়িতে গিয়ে তার শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তাকে আমরা সাধ্যমতো সব ধরনের সহযোগিতা দেব। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিয়ে যদি তার শিল্পকর্ম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করে, তাহলে আরও ভালো হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত