Ajker Patrika

তেলের প্রভাব অন্য পণ্যেও

খুলনা ও তেরখাদা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ১২: ৫০
তেলের প্রভাব অন্য পণ্যেও

ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম লিটারে এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়ানোয় চরম ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। এই সুযোগে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছে তেরখাদার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা সয়াবিনের দাম বৃদ্ধির সুযোগে ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। গত তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। হঠাৎ এ দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।

ঈদের আমেজ না কাটতেই সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির কারণে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। তবে দোকানে তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া। দু-একটি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন দোকানিরা। এদিকে বাজারে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম।

অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছেন। বাজারে চাহিদা কম এমন অজুহাত দেখিয়ে মোটা চালের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। মোটা চালের কেজি ৪-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিনিকেটের দামও বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। এ ছাড়া প্যাকেট চিনি ৮৫ টাকা। ঈদের সময় বেড়ে গিয়েছিল গরুর মাংসের দাম। সেই দাম এখনো কমেনি। এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। খাসির মাংস ৮৫০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা সদরের কাটেঙ্গা, জয়সেনা ও তেরখাদা বাজার ঘুরে দেখা গেছে ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, পটোল ৫০, বেগুন ৬০ থেকে ৮০, শসা ৪০ থেকে ৫০, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০, বরবটি ৫০ থেকে ৬০, টমেটো ৫০, করলা ৬০ থেকে ৭০ ও কাঁচামরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার পানতিতা এলাকা থেকে কাটেঙ্গা বাজারে বাজার করতে এসেছেন গাড়িচালক মিরাজ। তিনি বলেন, ঈদের পর প্রথম বাজারে এলাম। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সব পণ্যের দাম বেশি। প্রতিটি সবজির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। বেশি অবাক লাগছে পেঁপের কেজি দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা শুনে। এখন আধা কেজি করে সবজি কিনতে হচ্ছে।

সবজির দাম বিষয়ে কাটেঙ্গা বাজারের বিক্রেতা শহিদুল শেখ বলেন, সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। ঈদের সময় মালামাল নিয়ে গাড়ি কম এলেও ভাড়া বেশি। সব মিলিয়ে সবজির দাম একটু বাড়তি যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, যদি কোনো ব্যবসায়ী কৃত্রিম দাম বৃদ্ধি করেন, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে খুলনা নগরীর কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বর্তমানে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৪০-৪৫ টাকা। অথচ তিন-চার দিন আগেও ছিল ৩০ টাকা। সরবরাহে ঘাটতির কথা বলে দাম বাড়ানো হলেও বাস্তবচিত্র ছিল ভিন্ন। নগরীর সোনাডাঙ্গার পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী সালাম বলেন, কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে এলসি। তা ছাড়া ফরিদপুরের মোকামগুলোতে রয়েছে সংকট; যা আসছে তা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ঈদভাঙা বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, পাইকারি মোকামগুলোতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তাঁদের বেশি দরে কিনে এটি বিক্রি করতে হচ্ছে। এ দামের কমে বিক্রি করলে তাঁদের লোকসান হবে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এদিকে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎকণ্ঠা বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে। এ ব্যাপারে মো. আলাউদ্দিন হক নামে এক ক্রেতা বলেন, গত তিন দিনে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার বেশি দামে। এভাবে দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ বাঁচবে কীভাবে।

কাপড় ব্যবসায়ী সালাম হোসেন বলেন, তেলের বাজার এমনিতে গরম। তারপর আবারও পেঁয়াজের বাজরে গরম শুরু হয়েছে। করোনা-পরবর্তীতে ব্যবসা ভালো না। এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো মানুষের কী উপায় হবে। আমরা তো কারও কাছে হাত পাততে পারব না। সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দা.প্রা.) শাহরিয়ার আকুঞ্জী বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। কেউ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত