আজাদুল আদনান, ঢাকা

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন 
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট  কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা।  দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল 
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন 
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট  কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা।  দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল 
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]
আজাদুল আদনান, ঢাকা

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন 
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট  কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা।  দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল 
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন 
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট  কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা।  দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল 
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে
১২ জানুয়ারি ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে
১২ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে
১২ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে
১২ জানুয়ারি ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫