Ajker Patrika

ব্রহ্মপুত্রের বুকে শতবর্ষী হাট

মমিনুল ইসলাম বাবু, চিলমারী (কুড়িগ্রাম)
ব্রহ্মপুত্রের বুকে শতবর্ষী হাট

ব্রহ্মপুত্রের নীল জলে সারি সারি নৌকা। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন খাত ধরে চলেছে সেগুলো। তাতে রয়েছে বস্তাভরা ধান, ডাল, সরিষা, বাদাম, চীনা, গম, কাউন, পাটসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য কিংবা দেশি গরু, ছাগল, হাঁস বা মুরগি। সব নৌকা চলেছে এক গন্তব্যে। ব্রহ্মপুত্রের বুকে বসা এ শতবর্ষী হাটের বর্তমান নাম জোরগাছা হাট।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অন্যতম বড় হাট জোরগাছ। উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোরগাছ এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের তীর ঘেঁষে বসা এ হাটটি চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও গবাদিপশু বিকিকিনির অন্যতম বড় কেন্দ্র। তবে ব্রহ্মপুত্রের উত্তাল স্বভাবের কারণে ১০০ বছরে বহুবার বদলেছে এ হাটের জায়গা।

বর্তমান জোরগাছ হাটটি ১০০ বছর আগে চিলমার‌ীর কড়াই ব‌রিশাল এলাকায় বসাত। তখন ভারতীয় ব‌্যবসায়ীরা এ হা‌টে বা‌ণিজ‌্য কর‌তে আস‌তেন। ১৯২০ সা‌লের পর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কব‌লে পড়‌লে হাটটি বর্তমান চিলমারী ইউনিয়‌নের শাখাহ‌া‌তিতে বা বৈলমনদিয়ার খাতায় স্থানান্তরিত হয়। তখন এটি চিলমার‌ী হাট না‌মে প‌রি‌চিত ছিল। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের কব‌লে প‌ড়ে এটি বারবার স্থানান্তরিত হ‌তে থা‌কে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে হাটটি উপজেলার রমনা ম‌ডেল ইউনিয়‌নের জোরগাছ এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। তখন থে‌কে এ জায়গাটিতেই হাট বসছে সপ্তাহের র‌বি ও বুধবার। এখনো এ হাটের একটি অংশ বসে নদীর চরে আর অন্য অংশ নদীর তীরে!

চিলমারীর বা‌সিন্দা ও গ‌বেষক না‌হিদ হাসান জানান, জোরগাছ হাটে চরাঞ্চ‌লে উৎপাদিত বিষমুক্ত খাদ‌্যশস‌্য ও সব‌জি ক্রয়-বিক্রয় হয়। স্থানীয় ও জেলার বাইরের ব‌্যবসায়ী‌দের হাত ঘু‌রে এসব পণ‌্য দে‌শের বি‌ভিন্ন প্রা‌ন্তে চ‌লে যায়।

না‌হিদ হাসান ব‌লেন, ‘এ হা‌টের অন্যতম আকর্ষণ হ‌লো স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈ‌রি রস‌গোল্লা। চরাঞ্চ‌লের বাসিন্দাদের গৃহপালিত গরুর দুধ সংগ্রহ ক‌রে স্থানীয় কা‌রিগরেরা এসব রস‌গোল্লা তৈ‌রি ক‌রেন। ফ‌লে এগু‌লো ভেজালমুক্ত ও খে‌তে সুস্বাদু। এসব রস‌গোল্লার মূল‌্যও তুলনামূলক কম।’

সম্প্রতি এক হাটের দিন এখানে কথা হয় অষ্টমীরচর ইউনিয়নের কালীকাপুর এলাকার প্রায় ৭০ বছরের কৃষক মো. জামাল শেখের সঙ্গে। নিজ জ‌মি‌তে চাষ করা চীনা বি‌ক্রি কর‌তে এসেছিলেন তিনি। জামাল শেখ বলেন, ‘সেকাল থেকে আমাদের এলাকায় সবাই জোড়গাছ বাজারে জমির ফসল ‌সওদা ক‌রি। এ হা‌টের সওদা‌তেই আমাদের প‌রিবার চ‌লে।’

ব্যবসায়ী মো. গয়ছল আজম বলেন, ‘আমি পাট, চীনা, বাদামসহ মৌসুমি ফসল এই হাটে কিনে সৈয়দপুর, রংপুর, ফরিদপুর, যশোরের মহাজনদের কাছে বিক্রি করি। এ হা‌টের প‌ণ্যের চা‌হিদা সব জায়গায় আছে।’

উপ‌জেলা প্রশাসন জানায়, জোরগাছ হাট শুধু চ‌রের বাসিন্দাদের কা‌ছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি রাজস্ব আ‌য়ের এক‌টি বড় উৎস। উপ‌জেলা প্রশাস‌নের সর্বা‌ধিক রাজস্ব আসে এ হাট থে‌কে। সর্বশেষ চল‌তি অর্থবছরে এ হা‌টের ইজারামূল‌্য নির্ধারণ হয়ে‌ছে ১ কো‌টি ৭৫ লাখ টাকা।

হাটটির সাধারণ ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব‌্যবসায়ী‌দের নিরাপত্তা রক্ষায় হাট কমিটি, ইজারাদার এবং স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়‌টি‌তে আলাদা নজর রা‌খে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুরর রহমান জানান, এ উপজেলার একমাত্র বড় হাট জোড়গাছ হাট। এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার দিকে নিয়মিত নজর রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত