Ajker Patrika

নিয়মের ধারেকাছেও নেই এনআরবিসি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ১৬
নিয়মের ধারেকাছেও  নেই এনআরবিসি

ব্যাংকিং নীতিমালার অনেক কিছুই মানছে না এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক লিমিটেড। দরপত্র ছাড়াই কেনাকাটা, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কর্মকর্তা পদে অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগসহ নিয়মবহির্ভূতভাবে আলাদা কোম্পানি বানিয়ে নিজ ব্যাংকের সঙ্গেই ব্যবসা করছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৯ পরিচালক। ক্রয়, সেবা ও নিয়োগ-বাণিজ্যের হোতা এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও গোলাম আউলিয়া। এনআরবিসি ব্যাংকের আদলে ‘এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’ নামে আলাদা কোম্পানি গড়ে নিজেদের ব্যাংকের সঙ্গে নিয়োগসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রমে জড়িত থাকার ঘটনাকে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক, অনৈতিক এবং ব্যাংকিং সুশাসনের পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।

একাধিক উদ্যোক্তা-পরিচালকের দাখিল করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল ১৫ কর্মদিবস পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের একটি অফিস আছে; তা সত্ত্বেও তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যাংকের গুলশান শাখায় তাঁর আরেকটি অফিস কক্ষ ব্যবহার করছেন। এর জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, চেয়ারম্যানকে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া ব্যাংকের সুশাসনের পরিপন্থী।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী কোনো পর্ষদ চেয়ারম্যান দুটি অফিস ব্যবহার করতে পারেন না।

এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে কোম্পানি খুলে ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করার বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল গত বৃহস্পতিবার বলেন, এনআরবিসি ব্যাংকের ১৭ জন শেয়ারহোল্ডারের উদ্যোগে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামের কোম্পানিটি তৈরি করা হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারাই কোম্পানিটি পরিচালনা করছেন। ব্যাংকের নিম্নপদগুলোর জনবল নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানিটি ভূমিকা রাখছে।

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদনে শেয়ার কারসাজিতেও এনআরবিসি ব্যাংক এবং এর চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের নাম এসেছে। তবে এ ঘটনায় পারভেজ তমাল বা এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ব্যাংকটির বিরুদ্ধে আগেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার তথ্য মেলে। রূপপুর শাখা থেকে পাপা রোমা নামের কনসালট্যান্সি ফার্মের মালিককে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। যে জমি বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার কথা, উল্টো সেই জমি কেনার জন্য আগে ঋণ দিয়ে পরে জমি বন্ধক রাখা হয়। ওই ঘটনাকে বাংলাদেশ ব্যাংক তখন সুস্পষ্ট জালিয়াতি হিসেবে উল্লেখ করেছিল। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এমন এক গ্রাহকের নামে ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়, যিনি ঋণের জন্য আবেদনই করেননি। ভুক্তভোগী গ্রাহক খুলনার দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রবাসীদের বিনিয়োগে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২০১৩ সালে যাত্রা করে এনআরবিসি ব্যাংক।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও গোলাম আউলিয়া ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে কর্মকর্তা-কর্মী নিয়োগ ও ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, এনআরবিসি ব্যাংক লিমিটেড দুই বছর এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে গার্ড, পিয়নসহ চুক্তিভিত্তিক লোক নেবে। কিন্তু এ ধরনের নিয়োগ এবং ক্রয়ের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি ও দরপত্র প্রকাশ করা হয়নি। যদিও এনআরবিসি ব্যাংকের ক্রয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় পণ্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করার বাধ্যবাধকতা আছে। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ নীতিমালা লঙ্ঘন করে পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সেবা নেওয়া ব্যাংকের সুশাসনের পরিপন্থী। এর দায় এড়াতে পারেন না ব্যাংকটির সিইও গোলাম আউলিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ১৬ উদ্যোক্তা-পরিচালকের মধ্যে ৯ জনই এনআরবিসি ব্যাংকের। কিন্তু এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে এনআরবিসি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও দেখানো হয়নি।

জানা গেছে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বে আছেন এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। আর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হলেন মেজর (অব.) এ এইচ এম শফিউল্লাহ। প্রতিষ্ঠানটি সিকিউরিটি সার্ভিস, গাড়ি সার্ভিস, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, ক্যাশ ব্যবস্থাপনা সেবা, কেনাকাটা, ফ্যাসিলিটি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সেবা দিয়ে থাকে। দিলকুশার ২ নম্বর হোল্ডিংয়ে হাদি ম্যানশনের আটতলায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়।

কোম্পানি গঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় কৌশলে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালকদের আধিপত্য রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) ২০১৫ সালের এক পরিপত্র অনুযায়ী, সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতি-সংক্রান্ত কমিটিতে কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের থাকার সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একই বিভাগের ২০১৩ সালের ১১ নম্বর সার্কুলার অনুসারে, অনুমোদিত চাকরিবিধির আওতায় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাংক পর্ষদের চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু এসব জানা সত্ত্বেও এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৯ পরিচালক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট নামে কোম্পানি গঠন করেন এবং তাঁরা সবাই প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগসহ যাবতীয় কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত। এটি বিআরপিডির উল্লিখিত নির্দেশনার লঙ্ঘন।

অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এনআরবিসি ব্যাংকের ৬৩তম ও ৬৬তম পর্ষদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) ফরহাদ সরকার, মেজর (অব.) মো. পারভেজ হোসেনসহ অপর এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাকে ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাংকের নীতিমালায় এ ধরনের পদে নিয়োগের জন্য ১৩ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতার শর্ত থাকলেও তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। অবৈধভাবে নিয়োগের বিষয়টি ব্যাংকের এমডির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর বিধান থাকলেও গোলাম আউলিয়া তা গোপন করেছেন। ফরহাদ সরকার ও পারভেজ হোসেন বর্তমানে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) পদে কর্মরত।

ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, যোগ্যতা ছাড়া কোনো নিয়োগ রীতিমতো অন্যায়। যাঁরা এটা করবেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।

সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় সংকোচন
প্রতিবেদনমতে, এনআরবিসির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল নতুন প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্বে থাকাসহ ব্যাংকের বর্ণিত অবস্থাটি এনআরবিসি ব্যাংকের শৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগজনক, অনৈতিক এবং সুশাসনের পরিপন্থী। এ ছাড়া চলতি বছরের মে পর্যন্ত ব্যাংকটি ৯৩টি শাখা, ২২০টি উপশাখা, ২৯২টি ভূমি নিবন্ধন উপশাখা, ১৩১টি অংশীদারত্ব উপশাখা, ১১৬টি বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ বুথ এবং ২৫টি বিআরটিএ বুথ স্থাপন করেছে। একদিকে ব্যাংকের উপশাখা ও বুথ স্থাপনের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের মাধ্যমে ব্যাংকটিতে নিয়োগের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে দেওয়া সার্ভিস চার্জের পরিমাণও বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এতে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে আয় সংকুচিত করা হয়েছে।

পর্ষদ সভায় বাড়তি ব্যয়
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিদ্যমান নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। এটি অনভিপ্রেত। একইভাবে পরিচালকদের সভায় অংশগ্রহণের সম্মানীর সর্বোচ্চ সীমা ৮ হাজার টাকা হলেও ১৩টি সভায় পরিচালকদের ভ্যাটসহ ৯ হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, চেয়ারম্যান, এমডি কিংবা কোনো পরিচালক নিজ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারেন না। এটি কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের সংঘাতের মধ্যে পড়ে। ব্যাংকের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যক্তিগত কোনো কোম্পানি গঠনেরও বিধান নেই। যেকোনো ব্যাংকে জনবল নিয়োগ, কেনাকাটা থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে নিজস্ব নীতিমালা থাকে। এ নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে যদি কিছু হয়, সেটি অবশ্যই অপরাধ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

সাড়া নেই সিইওর
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনআরবিসি ব্যাংকের এমডি এবং সিইও গোলাম আউলিয়াকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১১ মিনিট পর্যন্ত কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পাশাপাশি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিষয়বস্তু জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

একইভাবে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের আরও বক্তব্য জানতে গতকাল বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে এবং জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। যদিও আগে তিনি কিছু বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু সেদিন অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

দায় এড়াতে পারেন না সিইও
আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোনো ব্যাংক নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাজারদর অনুযায়ী পণ্য সেবা নিতে পারে। এর জন্য ক্রয় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। সেটি না করে নিজের মতো স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু পণ্য ও সেবা কিনলে তাতে গ্রাহকের অর্থের অপব্যবহার হবে। এ ছাড়া গোপনে চুক্তি করলে এবং তাতে স্বাক্ষর করলে তার দায় ব্যাংকটির সিইও এড়াতে পারেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত