বাধা পেরোনোর চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

ব্রিসবেন ক্রিকেট স্টেডিয়াম বা গ্যাবায় প্রথম পা রেখেই যেন মনে হবে মাঠ নয়, এ এক গোলকধাঁধা। মাঠে প্রবেশের রাস্তা কোনটি, ক্রিকেটাররা অনুশীলন করছেন কোথায়, প্রেসবক্স কোথায়, সংবাদ সম্মেলন হবে কোথায়– এত সব প্রশ্নের উত্তরে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার ‘গোলকধাঁধা’ শব্দটাই ব্যবহার করলেন।

গ্যাবার জটিল অলিগলি খুঁজে পেতে শুরুতে বেগ পেতে হলেও সব পরিষ্কার হয়ে গেল দ্রুতই। গ্যাবার আকাশচুম্বী গ্যালারি দেখে মনে হবে, ব্রিসবেনের ঝকঝক নীল আকাশটা বুঝি ধরেই ফেলল! সেখানেই বড় পর্দায় দেখাচ্ছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম: দিস ইজ দ্য বিগ টাইম। আজ এই ‘বিগ’ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কি ‘বিগ’ কিছু করতে পারবে? প্রশ্নটা অন্য সময় হলে ‘হ্যাঁ’ বলা যেত অনায়াসে। কিন্তু বাংলাদেশ যে গোলকধাঁধায় আটকে আছে, তাতে আর সহজে বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশ এই জিম্বাবুয়েকে বলেকয়ে হারাবে। উল্টো জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় কি না, সেটি নিয়েই যত আলোচনা। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে পাকিস্তানকে 
হারিয়ে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস নিয়ে জিম্বাবুইয়ানরা এসেছে ব্রিসবেনে।

জিম্বাবুয়ে ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ দলের চেহারা বোঝার সুযোগ ছিল না। গতকাল মাঠেই আসেননি সাকিবরা। দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন বিশ্রামে। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করবেন না বলেই গত পরশু বিমানবন্দর থেকেই মাঠ এসেছিলেন তাঁরা। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেন শুধু ইয়াসির আলী আর নুরুল হাসান সোহান। খেলোয়াড়ের চেয়ে কোচিং স্টাফই বেশি ছিলেন অনুশীলনে। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য বললেন, ভ্রমণক্লান্তি দূর করে দ্রুত সতেজ হতে দলকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, ‘অনুশীলন করাই তো হয় একটা লক্ষ্য সামনে নিয়ে। শুধু শুধু ঘাম ঝরানোর চেয়ে ম্যাচের আগের দিন বিশ্রামই ভালো উপায় মনে করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। হয়তো ম্যানেজমেন্ট ভেবেছে, এক দিন অনুশীলন করার চেয়ে বিশ্রাম নিতে পারলে বেশি ফ্রেশ হওয়া সম্ভব ম্যাচের আগে।’

পরিসংখ্যান যতই বলুক টি-টোয়েন্টিতে দুই দল ১৯ বার মুখোমুখি হয়ে ১২ বার জিতেছে বাংলাদেশ, গ্যাবায় এখন বাংলাদেশ দলে জিম্বাবুয়ে-আতঙ্ক কাজ করছে, না বললেও চলছে। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলছে বলেই না গত জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের মাঠে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই তাড়া করছে বাংলাদেশকে। আর সিডনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার ধকল তো আছেই। যদিও সংবাদ সম্মেলনে আসা দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম দাবি করলেন, হারলেও তাঁদের মনোবল শক্তই আছে। তবে জিম্বাবুয়েকে শক্ত প্রতিপক্ষ মানছেন শ্রীরাম, ‘আমরা জিম্বাবুয়েকে সমীহ করি। পাকিস্তানের বিপক্ষ দুর্দান্ত খেলেছে। ম্যাচের প্রতিটি বল আমরা দেখেছি। যেভাবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে, অবিশ্বাস্য। পুরো কৃতিত্ব তাদের, সমীহ করতেই হবে।’

জিম্বাবুয়ে যে পাকিস্তানকে হারানোর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকেও হারাতে চাইবে, সেটি জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন জানিয়ে রেখেছেন, ‘বাংলাদেশও ভালো দল। আমরা এখানে খেলতে এসেছি। আগামীকাল (আজ) আবারও আমরা দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিতে চাই।’

গ্যাবা অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম গতিময় উইকেট হিসেবে পরিচিত বিশ্ব ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ার এই দুর্গে বেশির ভাগ সময় ফাস্ট বোলাররাই হাসেন। আজ দুই দলের পেসারদের ম্যাচ হলেও এখানে জিততে হলে ১৭০ রান করার সামর্থ্য থাকতে হবে বাংলাদেশের। এ ম্যাচেও তাই একাদশে পরিবর্তন আনতে পারে বাংলাদেশ। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ চলে যেতে পারেন বাইরে। ফিরতে পারেন ইয়াসির আলী রাব্বি। পরিবর্তন আসতে পারে পেস আক্রমণেও। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পেতে হলে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নেতৃত্ব দিতে হবে সামনে থেকে। টুর্নামেন্টে তিনি এখনো পর্যন্ত পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি আলোচিত মাঠের বাইরের বিতর্কিত ঘটনায়।

২০১৫ বিশ্বকাপেও এই ব্রিসবেনে এসেছিল বাংলাদেশ। সেবার বৃষ্টির কল্যাণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ১ পয়েন্ট পেয়েছিল মাশরাফির দল, যেটি পরে কাজে দিয়েছিল তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে। গতকাল যে তীব্র রোদ্দুর দেখা গেল শহরে, এবার তপ্ত আবহাওয়ায় মূল্যবান ২ পয়েন্ট পেতে সাকিবদের অনেক কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে।