Ajker Patrika

দড়ি টেনে ব্রহ্মপুত্র পার

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৪: ০৪
দড়ি টেনে ব্রহ্মপুত্র পার

জামালপুরের বকশীগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের ভাটি কলকিহারা এবং ফকিরপাড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। সেতু থাকলে নদের পশ্চিম পারের ১৫ গ্রামের মানুষ ১০ মিনিটের মধ্যে পূর্ব প্রান্তে আসতে পারত। কেননা পূর্ব প্রান্তে ইউনিয়ন পরিষদ, পাকা রাস্তা, হাটবাজারসহ উপজেলা সদর। এখন সেখানে যেতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টারও বেশি। এলাকার মানুষ বর্তমানে দড়িবাঁধা একটি নৌকা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র পার হচ্ছে। দড়ি টেনে নৌকা এপার থেকে ওপারে সময় লাগে দুই ঘণ্টার বেশি। এতে স্কুলে যাওয়া-আসায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এলাকাবাসীর দাবি, নদের ওপর যেন একটি সেতু স্থাপন করা হয়। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ওই এলাকার শিশুদের প্রতিদিন কষ্ট করে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হচ্ছে। অনেক সময় পানিতে পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। অনেকে আহত হয়। তারা আরও বলছেন, নদের ওপর সেতু না থাকায় তারা নানা সমস্যায় পড়ছে। অসুস্থ রোগীদের সদরে আনতে হলে অনেক সময় লাগে। অনেকেই মৃত্যুবরণ করে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই। উৎপাদিত ফসলের সঠিক দামও পাওয়া যায় না। কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদিত ফসল।

মেরুরচরের মুনসুর মিয়া বলেন, ‘নদীর পশ্চিম পারে ২৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা দড়িটানা এই নৌকা। ভোর থেকে নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে পাড়ে এসে ভিড় করে শত শত মানুষ। একটি নৌকা দিয়ে পারাপার হতে যেন যুদ্ধ করতে হয়। আর স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নদী পার হয়ে যেতে যেতে স্কুলের সময় চলে যায়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে কত সরকার এলগেল প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আর প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয় না।’

একই গ্রামের বৃদ্ধ নসের আলী বলেন, ‘নদী পার হতে হতে বুড়া হয়ে গেলাম। দেশের সরকার এত সেতু করে এই নদীর ওপর সেতু দেয় না। আমগরে এলাকার রাস্তাঘাট পাকা হয় না। ছেলেমেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত হতে চায় না রাস্তা না থাকার কারণে। প্রতিদিন দড়ি টানা নৌকা দিয়ে উপজেলায় যাই। সকালে বের হলে রাতে ঘরে ফিরি। ফসল যা হয় এগুলা বাজারে নিয়ে বেচতে পারি না। কম দামেই বেচি।

স্কুলছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক অসুবিধায় আছি। আমরা ৪০০ ছাত্র-ছাত্রী নদী পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করি। অনেক সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রী নদীতে পড়ে যায়। বই-খাতা ভিজে যায়। দড়িটানা একটা নৌকা দিয়েই যেতে হয়। অনেক সময় নৌকা না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ওপার থেকে এপারে নৌকা আসতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় আমদের। নৌকায় চাপাচাপি করে নদী পার হতে হয়। সরকার যদি এই নদীর ওপর একটি সেতু করে দেয় তাহলে এই এলাকার ৪০-৫০ হাজার মানুষের কষ্ট লাগব হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনমুন জাহান লিজা বলেন, ‘গত মাসে উপজেলার উন্নয়ন সভায় মেরুরচর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণের সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।’

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুল হক জানিয়েছেন, মেরুরচর ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। ৩০০ মিটার এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত