সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেকগুলো সামাজিক। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সব মানুষকে স্পর্শ করে না।
কেননা, রাষ্ট্র এখনো মানুষের মিত্র হয়নি; কখনো ছিল না, যে জন্য তাকে বদলানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে, তবু চরিত্রগতভাবে বদলায়নি, শাসকশ্রেণির করতলগতই রয়ে গেছে এবং তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের কাজে ব্যবহারের অস্ত্র হিসেবেই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সামাজিক অনুষ্ঠান নিজ নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেগুলোতে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান নেই। আর পয়লা বৈশাখ হচ্ছে সর্বজনীন। সব ধর্মের, সব শ্রেণির।
নতুন বছর সবার জন্য সমানভাবে আসে না, কিন্তু সবার জন্যই আসে। সেটা ঘটে এই সাধারণ ও সরল কারণে যে, প্রকৃতিই বলে দেয় বৈশাখ এসেছে। পুরাতন বছর বিদায় নিয়েছে। বাংলার ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মই সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ এবং ওই ঋতুতে বৈশাখের তুলনায় জ্যৈষ্ঠের উত্তাপ অধিক; তবু বৈশাখই প্রথম জানায় যে গ্রীষ্ম এসেছে এবং জ্যৈষ্ঠও দূরে নেই।
সব ঋতুই ইহজাগতিক। হতেই হবে। কিন্তু গ্রীষ্ম বোধ করি কিছুটা অতিরিক্ত পরিমাণেই ইহজাগতিক। সে যখন আসে, তখন বঙ্গবাসীর জন্য জগৎ সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার সুযোগ নাকচ হয়ে যায়। প্রকৃতি রুষ্ট হয়, আকাশে আমরা মেঘ খুঁজি, আশঙ্কা করি ঝড়ের, মাটির দিকে তাকিয়ে পানির অভাব দেখে হতাশ হই।
বিপন্ন বোধ করি। লক্ষ করি, বর্ষে বর্ষে প্রকৃতির রুক্ষতা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ভীষণ থেকে ভীষণতর হচ্ছে। আমরা জানি এর জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, দায়ী হলো মানুষ।আমরা নিজেরাই তো গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলেছি, নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে আমাদেরই হস্তক্ষেপে। কিন্তু এও জানা রয়েছে আমাদের যে, এ কাজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ইচ্ছা-নিরপেক্ষভাবেই ঘটে গেছে।
পুঁজিবাদ প্রকৃতির পয়লা নম্বরের শত্রু। সারা বিশ্বে ধরিত্রী তপ্ত হচ্ছে পুঁজিবাদের অনির্বাণ অগ্নিকাণ্ডে। হতেই থাকবে, যদি তাকে প্রতিহত করা না যায়। ওই তাপ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। যে জন্য খরা ও বন্যা দুই বিপরীতের সমান তৎপরতা আমাদের এই হতভাগ্য দেশে। আমরা গাছ কাটি, কারণ জ্বালানি নেই। গাছ বিক্রি করে দিই, কারণ গাছ ভালো পণ্য। নতুন বর্ষ প্রতিবার আসে এবং বলে, তোমরা পুঁজিবাদবিরোধী হও, যদি বাঁচতে চাও। পুঁজিবাদ প্রকৃতির গলা চেপে ধরেছে, তোমাদেরও শেষ করবে।
বাংলার ঋতুগুলো বাংলা ভাষার মতোই সর্বজনীন। কিন্তু আবার সর্বজনীন নয়ও। দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রটিতে সর্বজনীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব ব্যবস্থায় তা নেই। কেননা, বাস্তবে শ্রেণিবিভাজন আছে এবং সেই বিভাজন মানুষকে এমনভাবে ভাগ করে, যেটা অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। ধনী যারা তারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ঘামে না; ঘাম ঝরায় গরিব মানুষ, নিরুপায় এবং আশ্রয়হীনভাবে। প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা ধনী দেশগুলোরই বেশি; বাংলাদেশেও ওই একই ঘটনা, এখানেও ধনীরাই জ্বালানি পোড়ায়, তারাই গাছ কেটে আসবাব বানায় এবং তাদের হস্তক্ষেপেই বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে নানা রকমের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বাংলাকে প্রধান ভাষা হতে দেয়নি; আর অতীতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উৎপাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ভাষার ওপর আঘাত এসেছে বাইরে থেকেও। যে জন্য রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছে। স্পষ্টতই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পয়লা বৈশাখ গভীর আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। পয়লা বৈশাখ আগের, একুশে ফেব্রুয়ারি পরের। পয়লা বৈশাখ যাতে রক্ষা পায়, তার সর্বজনীনতা, ইহজাগতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রবহমান হয়, সে জন্যই তো একুশের আন্দোলন। বাংলা ভাষা বাঙালির জন্য কেবল পরিচয়ের চিহ্ন নয়, দাঁড়াবার জায়গাও বটে। ওইখানে দাঁড়িয়ে সে বিশ্বায়নের মুখোমুখি হবে এবং আন্তর্জাতিকতার চর্চা করবে। সে তার শক্তিকে বিকশিত করবে, প্রতিহত করবে আগ্রাসনকারীদের ক্ষমতা। পয়লা বৈশাখও নিজস্বতা রক্ষা এবং বিশ্বকে গ্রহণ করার ওই চেষ্টারই অংশ। পয়লা বৈশাখ শ্রেণি ও ধর্মকে মানতে চায় না; সেই মানতে না-চাওয়াকে শক্তিশালী করার জন্যই তো আবশ্যক হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের।
কথা ছিল রাষ্ট্রের অধীনে বাঙালি বিলীন হয়ে যাবে না, বরং বাঙালির অধীনেই রাষ্ট্র থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। সেটা হয়নি, যে জন্য বাংলা ভাষা অসুবিধায় আছে, পয়লা বৈশাখও ইংরেজি নববর্ষের দাপটে ম্রিয়মাণ রয়েছে। তাদের দুর্দশা যে আমাদের দুর্দশারই স্মারকচিহ্ন, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
পয়লা বৈশাখে মেলা হয়। মেলায় আনন্দ থাকে, সে একটা উৎসব বটে। কিন্তু মেলায় বাণিজ্যও থাকে। একটা আরেকটাকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের সমাজে এখন আনন্দ কমেছে এবং প্রায় সমানতালে ও তেজে বাণিজ্য বেড়ে উঠেছে। বাণিজ্য ধন আনে, সেখানে লক্ষ্মী থাকে, কিন্তু বাণিজ্য যে নিয়ম মানে না এবং সবকিছুকেই পণ্যে পরিণত করে, এটাও একটা নির্মম সত্য। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সেই যে ক্ষোভ—‘বাঙালি কেবল কেরানি হতে জানে, ব্যবসা করতে জানে না’—সেকালে সেটা মোটেই অযথার্থ ছিল না। কেরানি হওয়া সহজ ছিল ব্যবসায়ী হওয়ার তুলনায় এবং বাঙালির পক্ষে শিল্পোদ্যোক্তা হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন ব্যবসা এসেছে, শিল্পায়ন আসেনি। আর যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব দেখা দিয়েছে, যে বিষয়টা নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র ভাবেননি। কেননা, পরাধীন দেশে দেশপ্রেমের বড় রকমের অভাব ঘটবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল না; অর্থাৎ, প্রত্যাশিত ছিল এটাই যে, বাণিজ্য থাকবে দেশপ্রেমের অধীনে, যার দরুন দেশের মানুষের বিস্তর উপকার হবে। দেশ এখনো পরাধীন বটে, পুঁজিবাদী বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা স্বাধীন নন। কেননা, তাঁরা উৎপাদন করেন না, বিক্রি করেন মাত্র; এবং মুনাফা ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন না, বুঝতেও চান না।
প্রফুল্লচন্দ্র নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন যে, কেবল দোকানদারি নয়, বাঙালি বহির্বাণিজ্যও করবে। সেটা তার পক্ষে করা খুবই কঠিন ছিল। কেননা, সমুদ্র বাঙালির জন্য খোলা ছিল না। ওই পথেই একদিন ইংরেজ বণিকেরা এসেছিল, এসে দেশ দখল করে নিয়েছিল। ইংরেজ আসার আগেও বহির্বাণিজ্য যে বাঙালির হাতে ছিল তা নয়। বণিকেরা ছিল বিদেশি। সমুদ্রে ছিল জলদস্যুরাও, যারা উৎপাত করত, ভেতরে এসে হানা দিত। সমুদ্র ব্যবহার করতে না পেরে বাঙালি দুর্বল হয়েছে।
যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি সাংস্কৃতিকভাবেও। সামাজিক জীবনের ওপরও ওই না-পারার প্রভাব পড়েছে। বাঙালি আটকা পড়ে গেছে। সে পাহাড়ে ঘেরা, সমুদ্র তার ব্যবহারের বাইরে, শুধু একদিকেই খোলা, যেদিক থেকে পশ্চিমের প্রভাব এসেছে; কিন্তু নিজে সে দক্ষিণে ও পূর্বে ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
বাঙালির জন্য এখন সমুদ্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্রকে ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দাঁড়াতে পারবে সে তার ভাষাকে ব্যবহার করে। এই ভাষা পারে তাকে দেশপ্রেম এবং ইহজাগতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাখতে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তাকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে দেশের দিকে তাকাবে—এটাই বাঞ্ছনীয়। দেশের দিকে তাকানোর দিকটা এখন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বাড়ানো দরকার।
বাঙালির নতুন বছর সত্যি সত্যি নতুন বছর হয়ে প্রতিবছর দেখা দেবে বলে আশা করা যাবে তখনই, যখন বাঙালির গৃহমুখিনতা আরও বাড়বে, ঘরকুনো হওয়ার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিকতার জন্য। যার ঘর নেই, তার আবার বিশ্ব কোথায়? বাঙালির জন্য শক্তিকে বিকশিত করার পথে দিশা রয়েছে পয়লা বৈশাখে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে। আলাদা করে নয়, দুটিকে একত্র করে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেকগুলো সামাজিক। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সব মানুষকে স্পর্শ করে না।
কেননা, রাষ্ট্র এখনো মানুষের মিত্র হয়নি; কখনো ছিল না, যে জন্য তাকে বদলানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে, তবু চরিত্রগতভাবে বদলায়নি, শাসকশ্রেণির করতলগতই রয়ে গেছে এবং তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের কাজে ব্যবহারের অস্ত্র হিসেবেই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সামাজিক অনুষ্ঠান নিজ নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেগুলোতে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান নেই। আর পয়লা বৈশাখ হচ্ছে সর্বজনীন। সব ধর্মের, সব শ্রেণির।
নতুন বছর সবার জন্য সমানভাবে আসে না, কিন্তু সবার জন্যই আসে। সেটা ঘটে এই সাধারণ ও সরল কারণে যে, প্রকৃতিই বলে দেয় বৈশাখ এসেছে। পুরাতন বছর বিদায় নিয়েছে। বাংলার ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মই সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ এবং ওই ঋতুতে বৈশাখের তুলনায় জ্যৈষ্ঠের উত্তাপ অধিক; তবু বৈশাখই প্রথম জানায় যে গ্রীষ্ম এসেছে এবং জ্যৈষ্ঠও দূরে নেই।
সব ঋতুই ইহজাগতিক। হতেই হবে। কিন্তু গ্রীষ্ম বোধ করি কিছুটা অতিরিক্ত পরিমাণেই ইহজাগতিক। সে যখন আসে, তখন বঙ্গবাসীর জন্য জগৎ সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার সুযোগ নাকচ হয়ে যায়। প্রকৃতি রুষ্ট হয়, আকাশে আমরা মেঘ খুঁজি, আশঙ্কা করি ঝড়ের, মাটির দিকে তাকিয়ে পানির অভাব দেখে হতাশ হই।
বিপন্ন বোধ করি। লক্ষ করি, বর্ষে বর্ষে প্রকৃতির রুক্ষতা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ভীষণ থেকে ভীষণতর হচ্ছে। আমরা জানি এর জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, দায়ী হলো মানুষ।আমরা নিজেরাই তো গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলেছি, নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে আমাদেরই হস্তক্ষেপে। কিন্তু এও জানা রয়েছে আমাদের যে, এ কাজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ইচ্ছা-নিরপেক্ষভাবেই ঘটে গেছে।
পুঁজিবাদ প্রকৃতির পয়লা নম্বরের শত্রু। সারা বিশ্বে ধরিত্রী তপ্ত হচ্ছে পুঁজিবাদের অনির্বাণ অগ্নিকাণ্ডে। হতেই থাকবে, যদি তাকে প্রতিহত করা না যায়। ওই তাপ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। যে জন্য খরা ও বন্যা দুই বিপরীতের সমান তৎপরতা আমাদের এই হতভাগ্য দেশে। আমরা গাছ কাটি, কারণ জ্বালানি নেই। গাছ বিক্রি করে দিই, কারণ গাছ ভালো পণ্য। নতুন বর্ষ প্রতিবার আসে এবং বলে, তোমরা পুঁজিবাদবিরোধী হও, যদি বাঁচতে চাও। পুঁজিবাদ প্রকৃতির গলা চেপে ধরেছে, তোমাদেরও শেষ করবে।
বাংলার ঋতুগুলো বাংলা ভাষার মতোই সর্বজনীন। কিন্তু আবার সর্বজনীন নয়ও। দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রটিতে সর্বজনীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব ব্যবস্থায় তা নেই। কেননা, বাস্তবে শ্রেণিবিভাজন আছে এবং সেই বিভাজন মানুষকে এমনভাবে ভাগ করে, যেটা অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। ধনী যারা তারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ঘামে না; ঘাম ঝরায় গরিব মানুষ, নিরুপায় এবং আশ্রয়হীনভাবে। প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা ধনী দেশগুলোরই বেশি; বাংলাদেশেও ওই একই ঘটনা, এখানেও ধনীরাই জ্বালানি পোড়ায়, তারাই গাছ কেটে আসবাব বানায় এবং তাদের হস্তক্ষেপেই বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে নানা রকমের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বাংলাকে প্রধান ভাষা হতে দেয়নি; আর অতীতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উৎপাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ভাষার ওপর আঘাত এসেছে বাইরে থেকেও। যে জন্য রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছে। স্পষ্টতই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পয়লা বৈশাখ গভীর আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। পয়লা বৈশাখ আগের, একুশে ফেব্রুয়ারি পরের। পয়লা বৈশাখ যাতে রক্ষা পায়, তার সর্বজনীনতা, ইহজাগতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রবহমান হয়, সে জন্যই তো একুশের আন্দোলন। বাংলা ভাষা বাঙালির জন্য কেবল পরিচয়ের চিহ্ন নয়, দাঁড়াবার জায়গাও বটে। ওইখানে দাঁড়িয়ে সে বিশ্বায়নের মুখোমুখি হবে এবং আন্তর্জাতিকতার চর্চা করবে। সে তার শক্তিকে বিকশিত করবে, প্রতিহত করবে আগ্রাসনকারীদের ক্ষমতা। পয়লা বৈশাখও নিজস্বতা রক্ষা এবং বিশ্বকে গ্রহণ করার ওই চেষ্টারই অংশ। পয়লা বৈশাখ শ্রেণি ও ধর্মকে মানতে চায় না; সেই মানতে না-চাওয়াকে শক্তিশালী করার জন্যই তো আবশ্যক হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের।
কথা ছিল রাষ্ট্রের অধীনে বাঙালি বিলীন হয়ে যাবে না, বরং বাঙালির অধীনেই রাষ্ট্র থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। সেটা হয়নি, যে জন্য বাংলা ভাষা অসুবিধায় আছে, পয়লা বৈশাখও ইংরেজি নববর্ষের দাপটে ম্রিয়মাণ রয়েছে। তাদের দুর্দশা যে আমাদের দুর্দশারই স্মারকচিহ্ন, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
পয়লা বৈশাখে মেলা হয়। মেলায় আনন্দ থাকে, সে একটা উৎসব বটে। কিন্তু মেলায় বাণিজ্যও থাকে। একটা আরেকটাকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের সমাজে এখন আনন্দ কমেছে এবং প্রায় সমানতালে ও তেজে বাণিজ্য বেড়ে উঠেছে। বাণিজ্য ধন আনে, সেখানে লক্ষ্মী থাকে, কিন্তু বাণিজ্য যে নিয়ম মানে না এবং সবকিছুকেই পণ্যে পরিণত করে, এটাও একটা নির্মম সত্য। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সেই যে ক্ষোভ—‘বাঙালি কেবল কেরানি হতে জানে, ব্যবসা করতে জানে না’—সেকালে সেটা মোটেই অযথার্থ ছিল না। কেরানি হওয়া সহজ ছিল ব্যবসায়ী হওয়ার তুলনায় এবং বাঙালির পক্ষে শিল্পোদ্যোক্তা হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন ব্যবসা এসেছে, শিল্পায়ন আসেনি। আর যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব দেখা দিয়েছে, যে বিষয়টা নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র ভাবেননি। কেননা, পরাধীন দেশে দেশপ্রেমের বড় রকমের অভাব ঘটবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল না; অর্থাৎ, প্রত্যাশিত ছিল এটাই যে, বাণিজ্য থাকবে দেশপ্রেমের অধীনে, যার দরুন দেশের মানুষের বিস্তর উপকার হবে। দেশ এখনো পরাধীন বটে, পুঁজিবাদী বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা স্বাধীন নন। কেননা, তাঁরা উৎপাদন করেন না, বিক্রি করেন মাত্র; এবং মুনাফা ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন না, বুঝতেও চান না।
প্রফুল্লচন্দ্র নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন যে, কেবল দোকানদারি নয়, বাঙালি বহির্বাণিজ্যও করবে। সেটা তার পক্ষে করা খুবই কঠিন ছিল। কেননা, সমুদ্র বাঙালির জন্য খোলা ছিল না। ওই পথেই একদিন ইংরেজ বণিকেরা এসেছিল, এসে দেশ দখল করে নিয়েছিল। ইংরেজ আসার আগেও বহির্বাণিজ্য যে বাঙালির হাতে ছিল তা নয়। বণিকেরা ছিল বিদেশি। সমুদ্রে ছিল জলদস্যুরাও, যারা উৎপাত করত, ভেতরে এসে হানা দিত। সমুদ্র ব্যবহার করতে না পেরে বাঙালি দুর্বল হয়েছে।
যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি সাংস্কৃতিকভাবেও। সামাজিক জীবনের ওপরও ওই না-পারার প্রভাব পড়েছে। বাঙালি আটকা পড়ে গেছে। সে পাহাড়ে ঘেরা, সমুদ্র তার ব্যবহারের বাইরে, শুধু একদিকেই খোলা, যেদিক থেকে পশ্চিমের প্রভাব এসেছে; কিন্তু নিজে সে দক্ষিণে ও পূর্বে ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
বাঙালির জন্য এখন সমুদ্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্রকে ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দাঁড়াতে পারবে সে তার ভাষাকে ব্যবহার করে। এই ভাষা পারে তাকে দেশপ্রেম এবং ইহজাগতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাখতে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তাকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে দেশের দিকে তাকাবে—এটাই বাঞ্ছনীয়। দেশের দিকে তাকানোর দিকটা এখন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বাড়ানো দরকার।
বাঙালির নতুন বছর সত্যি সত্যি নতুন বছর হয়ে প্রতিবছর দেখা দেবে বলে আশা করা যাবে তখনই, যখন বাঙালির গৃহমুখিনতা আরও বাড়বে, ঘরকুনো হওয়ার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিকতার জন্য। যার ঘর নেই, তার আবার বিশ্ব কোথায়? বাঙালির জন্য শক্তিকে বিকশিত করার পথে দিশা রয়েছে পয়লা বৈশাখে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে। আলাদা করে নয়, দুটিকে একত্র করে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেকগুলো সামাজিক। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সব মানুষকে স্পর্শ করে না।
কেননা, রাষ্ট্র এখনো মানুষের মিত্র হয়নি; কখনো ছিল না, যে জন্য তাকে বদলানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে, তবু চরিত্রগতভাবে বদলায়নি, শাসকশ্রেণির করতলগতই রয়ে গেছে এবং তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের কাজে ব্যবহারের অস্ত্র হিসেবেই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সামাজিক অনুষ্ঠান নিজ নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেগুলোতে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান নেই। আর পয়লা বৈশাখ হচ্ছে সর্বজনীন। সব ধর্মের, সব শ্রেণির।
নতুন বছর সবার জন্য সমানভাবে আসে না, কিন্তু সবার জন্যই আসে। সেটা ঘটে এই সাধারণ ও সরল কারণে যে, প্রকৃতিই বলে দেয় বৈশাখ এসেছে। পুরাতন বছর বিদায় নিয়েছে। বাংলার ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মই সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ এবং ওই ঋতুতে বৈশাখের তুলনায় জ্যৈষ্ঠের উত্তাপ অধিক; তবু বৈশাখই প্রথম জানায় যে গ্রীষ্ম এসেছে এবং জ্যৈষ্ঠও দূরে নেই।
সব ঋতুই ইহজাগতিক। হতেই হবে। কিন্তু গ্রীষ্ম বোধ করি কিছুটা অতিরিক্ত পরিমাণেই ইহজাগতিক। সে যখন আসে, তখন বঙ্গবাসীর জন্য জগৎ সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার সুযোগ নাকচ হয়ে যায়। প্রকৃতি রুষ্ট হয়, আকাশে আমরা মেঘ খুঁজি, আশঙ্কা করি ঝড়ের, মাটির দিকে তাকিয়ে পানির অভাব দেখে হতাশ হই।
বিপন্ন বোধ করি। লক্ষ করি, বর্ষে বর্ষে প্রকৃতির রুক্ষতা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ভীষণ থেকে ভীষণতর হচ্ছে। আমরা জানি এর জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, দায়ী হলো মানুষ।আমরা নিজেরাই তো গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলেছি, নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে আমাদেরই হস্তক্ষেপে। কিন্তু এও জানা রয়েছে আমাদের যে, এ কাজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ইচ্ছা-নিরপেক্ষভাবেই ঘটে গেছে।
পুঁজিবাদ প্রকৃতির পয়লা নম্বরের শত্রু। সারা বিশ্বে ধরিত্রী তপ্ত হচ্ছে পুঁজিবাদের অনির্বাণ অগ্নিকাণ্ডে। হতেই থাকবে, যদি তাকে প্রতিহত করা না যায়। ওই তাপ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। যে জন্য খরা ও বন্যা দুই বিপরীতের সমান তৎপরতা আমাদের এই হতভাগ্য দেশে। আমরা গাছ কাটি, কারণ জ্বালানি নেই। গাছ বিক্রি করে দিই, কারণ গাছ ভালো পণ্য। নতুন বর্ষ প্রতিবার আসে এবং বলে, তোমরা পুঁজিবাদবিরোধী হও, যদি বাঁচতে চাও। পুঁজিবাদ প্রকৃতির গলা চেপে ধরেছে, তোমাদেরও শেষ করবে।
বাংলার ঋতুগুলো বাংলা ভাষার মতোই সর্বজনীন। কিন্তু আবার সর্বজনীন নয়ও। দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রটিতে সর্বজনীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব ব্যবস্থায় তা নেই। কেননা, বাস্তবে শ্রেণিবিভাজন আছে এবং সেই বিভাজন মানুষকে এমনভাবে ভাগ করে, যেটা অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। ধনী যারা তারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ঘামে না; ঘাম ঝরায় গরিব মানুষ, নিরুপায় এবং আশ্রয়হীনভাবে। প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা ধনী দেশগুলোরই বেশি; বাংলাদেশেও ওই একই ঘটনা, এখানেও ধনীরাই জ্বালানি পোড়ায়, তারাই গাছ কেটে আসবাব বানায় এবং তাদের হস্তক্ষেপেই বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে নানা রকমের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বাংলাকে প্রধান ভাষা হতে দেয়নি; আর অতীতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উৎপাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ভাষার ওপর আঘাত এসেছে বাইরে থেকেও। যে জন্য রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছে। স্পষ্টতই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পয়লা বৈশাখ গভীর আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। পয়লা বৈশাখ আগের, একুশে ফেব্রুয়ারি পরের। পয়লা বৈশাখ যাতে রক্ষা পায়, তার সর্বজনীনতা, ইহজাগতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রবহমান হয়, সে জন্যই তো একুশের আন্দোলন। বাংলা ভাষা বাঙালির জন্য কেবল পরিচয়ের চিহ্ন নয়, দাঁড়াবার জায়গাও বটে। ওইখানে দাঁড়িয়ে সে বিশ্বায়নের মুখোমুখি হবে এবং আন্তর্জাতিকতার চর্চা করবে। সে তার শক্তিকে বিকশিত করবে, প্রতিহত করবে আগ্রাসনকারীদের ক্ষমতা। পয়লা বৈশাখও নিজস্বতা রক্ষা এবং বিশ্বকে গ্রহণ করার ওই চেষ্টারই অংশ। পয়লা বৈশাখ শ্রেণি ও ধর্মকে মানতে চায় না; সেই মানতে না-চাওয়াকে শক্তিশালী করার জন্যই তো আবশ্যক হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের।
কথা ছিল রাষ্ট্রের অধীনে বাঙালি বিলীন হয়ে যাবে না, বরং বাঙালির অধীনেই রাষ্ট্র থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। সেটা হয়নি, যে জন্য বাংলা ভাষা অসুবিধায় আছে, পয়লা বৈশাখও ইংরেজি নববর্ষের দাপটে ম্রিয়মাণ রয়েছে। তাদের দুর্দশা যে আমাদের দুর্দশারই স্মারকচিহ্ন, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
পয়লা বৈশাখে মেলা হয়। মেলায় আনন্দ থাকে, সে একটা উৎসব বটে। কিন্তু মেলায় বাণিজ্যও থাকে। একটা আরেকটাকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের সমাজে এখন আনন্দ কমেছে এবং প্রায় সমানতালে ও তেজে বাণিজ্য বেড়ে উঠেছে। বাণিজ্য ধন আনে, সেখানে লক্ষ্মী থাকে, কিন্তু বাণিজ্য যে নিয়ম মানে না এবং সবকিছুকেই পণ্যে পরিণত করে, এটাও একটা নির্মম সত্য। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সেই যে ক্ষোভ—‘বাঙালি কেবল কেরানি হতে জানে, ব্যবসা করতে জানে না’—সেকালে সেটা মোটেই অযথার্থ ছিল না। কেরানি হওয়া সহজ ছিল ব্যবসায়ী হওয়ার তুলনায় এবং বাঙালির পক্ষে শিল্পোদ্যোক্তা হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন ব্যবসা এসেছে, শিল্পায়ন আসেনি। আর যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব দেখা দিয়েছে, যে বিষয়টা নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র ভাবেননি। কেননা, পরাধীন দেশে দেশপ্রেমের বড় রকমের অভাব ঘটবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল না; অর্থাৎ, প্রত্যাশিত ছিল এটাই যে, বাণিজ্য থাকবে দেশপ্রেমের অধীনে, যার দরুন দেশের মানুষের বিস্তর উপকার হবে। দেশ এখনো পরাধীন বটে, পুঁজিবাদী বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা স্বাধীন নন। কেননা, তাঁরা উৎপাদন করেন না, বিক্রি করেন মাত্র; এবং মুনাফা ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন না, বুঝতেও চান না।
প্রফুল্লচন্দ্র নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন যে, কেবল দোকানদারি নয়, বাঙালি বহির্বাণিজ্যও করবে। সেটা তার পক্ষে করা খুবই কঠিন ছিল। কেননা, সমুদ্র বাঙালির জন্য খোলা ছিল না। ওই পথেই একদিন ইংরেজ বণিকেরা এসেছিল, এসে দেশ দখল করে নিয়েছিল। ইংরেজ আসার আগেও বহির্বাণিজ্য যে বাঙালির হাতে ছিল তা নয়। বণিকেরা ছিল বিদেশি। সমুদ্রে ছিল জলদস্যুরাও, যারা উৎপাত করত, ভেতরে এসে হানা দিত। সমুদ্র ব্যবহার করতে না পেরে বাঙালি দুর্বল হয়েছে।
যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি সাংস্কৃতিকভাবেও। সামাজিক জীবনের ওপরও ওই না-পারার প্রভাব পড়েছে। বাঙালি আটকা পড়ে গেছে। সে পাহাড়ে ঘেরা, সমুদ্র তার ব্যবহারের বাইরে, শুধু একদিকেই খোলা, যেদিক থেকে পশ্চিমের প্রভাব এসেছে; কিন্তু নিজে সে দক্ষিণে ও পূর্বে ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
বাঙালির জন্য এখন সমুদ্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্রকে ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দাঁড়াতে পারবে সে তার ভাষাকে ব্যবহার করে। এই ভাষা পারে তাকে দেশপ্রেম এবং ইহজাগতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাখতে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তাকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে দেশের দিকে তাকাবে—এটাই বাঞ্ছনীয়। দেশের দিকে তাকানোর দিকটা এখন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বাড়ানো দরকার।
বাঙালির নতুন বছর সত্যি সত্যি নতুন বছর হয়ে প্রতিবছর দেখা দেবে বলে আশা করা যাবে তখনই, যখন বাঙালির গৃহমুখিনতা আরও বাড়বে, ঘরকুনো হওয়ার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিকতার জন্য। যার ঘর নেই, তার আবার বিশ্ব কোথায়? বাঙালির জন্য শক্তিকে বিকশিত করার পথে দিশা রয়েছে পয়লা বৈশাখে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে। আলাদা করে নয়, দুটিকে একত্র করে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেকগুলো সামাজিক। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সব মানুষকে স্পর্শ করে না।
কেননা, রাষ্ট্র এখনো মানুষের মিত্র হয়নি; কখনো ছিল না, যে জন্য তাকে বদলানোর অনেক চেষ্টা হয়েছে, তবু চরিত্রগতভাবে বদলায়নি, শাসকশ্রেণির করতলগতই রয়ে গেছে এবং তাদের শোষণ-লুণ্ঠনের কাজে ব্যবহারের অস্ত্র হিসেবেই মূলত ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সামাজিক অনুষ্ঠান নিজ নিজ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেগুলোতে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান নেই। আর পয়লা বৈশাখ হচ্ছে সর্বজনীন। সব ধর্মের, সব শ্রেণির।
নতুন বছর সবার জন্য সমানভাবে আসে না, কিন্তু সবার জন্যই আসে। সেটা ঘটে এই সাধারণ ও সরল কারণে যে, প্রকৃতিই বলে দেয় বৈশাখ এসেছে। পুরাতন বছর বিদায় নিয়েছে। বাংলার ছয়টি ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মই সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ এবং ওই ঋতুতে বৈশাখের তুলনায় জ্যৈষ্ঠের উত্তাপ অধিক; তবু বৈশাখই প্রথম জানায় যে গ্রীষ্ম এসেছে এবং জ্যৈষ্ঠও দূরে নেই।
সব ঋতুই ইহজাগতিক। হতেই হবে। কিন্তু গ্রীষ্ম বোধ করি কিছুটা অতিরিক্ত পরিমাণেই ইহজাগতিক। সে যখন আসে, তখন বঙ্গবাসীর জন্য জগৎ সম্পর্কে উদাসীন হওয়ার সুযোগ নাকচ হয়ে যায়। প্রকৃতি রুষ্ট হয়, আকাশে আমরা মেঘ খুঁজি, আশঙ্কা করি ঝড়ের, মাটির দিকে তাকিয়ে পানির অভাব দেখে হতাশ হই।
বিপন্ন বোধ করি। লক্ষ করি, বর্ষে বর্ষে প্রকৃতির রুক্ষতা বাড়ছে, গ্রীষ্ম ভীষণ থেকে ভীষণতর হচ্ছে। আমরা জানি এর জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, দায়ী হলো মানুষ।আমরা নিজেরাই তো গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলেছি, নদীনালা ভরাট হয়ে গেছে আমাদেরই হস্তক্ষেপে। কিন্তু এও জানা রয়েছে আমাদের যে, এ কাজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ইচ্ছা-নিরপেক্ষভাবেই ঘটে গেছে।
পুঁজিবাদ প্রকৃতির পয়লা নম্বরের শত্রু। সারা বিশ্বে ধরিত্রী তপ্ত হচ্ছে পুঁজিবাদের অনির্বাণ অগ্নিকাণ্ডে। হতেই থাকবে, যদি তাকে প্রতিহত করা না যায়। ওই তাপ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। যে জন্য খরা ও বন্যা দুই বিপরীতের সমান তৎপরতা আমাদের এই হতভাগ্য দেশে। আমরা গাছ কাটি, কারণ জ্বালানি নেই। গাছ বিক্রি করে দিই, কারণ গাছ ভালো পণ্য। নতুন বর্ষ প্রতিবার আসে এবং বলে, তোমরা পুঁজিবাদবিরোধী হও, যদি বাঁচতে চাও। পুঁজিবাদ প্রকৃতির গলা চেপে ধরেছে, তোমাদেরও শেষ করবে।
বাংলার ঋতুগুলো বাংলা ভাষার মতোই সর্বজনীন। কিন্তু আবার সর্বজনীন নয়ও। দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রটিতে সর্বজনীনতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব ব্যবস্থায় তা নেই। কেননা, বাস্তবে শ্রেণিবিভাজন আছে এবং সেই বিভাজন মানুষকে এমনভাবে ভাগ করে, যেটা অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। ধনী যারা তারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ঘামে না; ঘাম ঝরায় গরিব মানুষ, নিরুপায় এবং আশ্রয়হীনভাবে। প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা ধনী দেশগুলোরই বেশি; বাংলাদেশেও ওই একই ঘটনা, এখানেও ধনীরাই জ্বালানি পোড়ায়, তারাই গাছ কেটে আসবাব বানায় এবং তাদের হস্তক্ষেপেই বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে নানা রকমের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বাংলাকে প্রধান ভাষা হতে দেয়নি; আর অতীতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও উৎপাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ভাষার ওপর আঘাত এসেছে বাইরে থেকেও। যে জন্য রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছে। স্পষ্টতই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পয়লা বৈশাখ গভীর আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। পয়লা বৈশাখ আগের, একুশে ফেব্রুয়ারি পরের। পয়লা বৈশাখ যাতে রক্ষা পায়, তার সর্বজনীনতা, ইহজাগতিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা যাতে রাষ্ট্র ও সমাজে প্রবহমান হয়, সে জন্যই তো একুশের আন্দোলন। বাংলা ভাষা বাঙালির জন্য কেবল পরিচয়ের চিহ্ন নয়, দাঁড়াবার জায়গাও বটে। ওইখানে দাঁড়িয়ে সে বিশ্বায়নের মুখোমুখি হবে এবং আন্তর্জাতিকতার চর্চা করবে। সে তার শক্তিকে বিকশিত করবে, প্রতিহত করবে আগ্রাসনকারীদের ক্ষমতা। পয়লা বৈশাখও নিজস্বতা রক্ষা এবং বিশ্বকে গ্রহণ করার ওই চেষ্টারই অংশ। পয়লা বৈশাখ শ্রেণি ও ধর্মকে মানতে চায় না; সেই মানতে না-চাওয়াকে শক্তিশালী করার জন্যই তো আবশ্যক হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের।
কথা ছিল রাষ্ট্রের অধীনে বাঙালি বিলীন হয়ে যাবে না, বরং বাঙালির অধীনেই রাষ্ট্র থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক। সেটা হয়নি, যে জন্য বাংলা ভাষা অসুবিধায় আছে, পয়লা বৈশাখও ইংরেজি নববর্ষের দাপটে ম্রিয়মাণ রয়েছে। তাদের দুর্দশা যে আমাদের দুর্দশারই স্মারকচিহ্ন, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।
পয়লা বৈশাখে মেলা হয়। মেলায় আনন্দ থাকে, সে একটা উৎসব বটে। কিন্তু মেলায় বাণিজ্যও থাকে। একটা আরেকটাকে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের সমাজে এখন আনন্দ কমেছে এবং প্রায় সমানতালে ও তেজে বাণিজ্য বেড়ে উঠেছে। বাণিজ্য ধন আনে, সেখানে লক্ষ্মী থাকে, কিন্তু বাণিজ্য যে নিয়ম মানে না এবং সবকিছুকেই পণ্যে পরিণত করে, এটাও একটা নির্মম সত্য। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সেই যে ক্ষোভ—‘বাঙালি কেবল কেরানি হতে জানে, ব্যবসা করতে জানে না’—সেকালে সেটা মোটেই অযথার্থ ছিল না। কেরানি হওয়া সহজ ছিল ব্যবসায়ী হওয়ার তুলনায় এবং বাঙালির পক্ষে শিল্পোদ্যোক্তা হওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন ব্যবসা এসেছে, শিল্পায়ন আসেনি। আর যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে দেশপ্রেমের অভাব দেখা দিয়েছে, যে বিষয়টা নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র ভাবেননি। কেননা, পরাধীন দেশে দেশপ্রেমের বড় রকমের অভাব ঘটবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল না; অর্থাৎ, প্রত্যাশিত ছিল এটাই যে, বাণিজ্য থাকবে দেশপ্রেমের অধীনে, যার দরুন দেশের মানুষের বিস্তর উপকার হবে। দেশ এখনো পরাধীন বটে, পুঁজিবাদী বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, কিন্তু ব্যবসায়ীরা স্বাধীন নন। কেননা, তাঁরা উৎপাদন করেন না, বিক্রি করেন মাত্র; এবং মুনাফা ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন না, বুঝতেও চান না।
প্রফুল্লচন্দ্র নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন যে, কেবল দোকানদারি নয়, বাঙালি বহির্বাণিজ্যও করবে। সেটা তার পক্ষে করা খুবই কঠিন ছিল। কেননা, সমুদ্র বাঙালির জন্য খোলা ছিল না। ওই পথেই একদিন ইংরেজ বণিকেরা এসেছিল, এসে দেশ দখল করে নিয়েছিল। ইংরেজ আসার আগেও বহির্বাণিজ্য যে বাঙালির হাতে ছিল তা নয়। বণিকেরা ছিল বিদেশি। সমুদ্রে ছিল জলদস্যুরাও, যারা উৎপাত করত, ভেতরে এসে হানা দিত। সমুদ্র ব্যবহার করতে না পেরে বাঙালি দুর্বল হয়েছে।
যেমন অর্থনৈতিকভাবে, তেমনি সাংস্কৃতিকভাবেও। সামাজিক জীবনের ওপরও ওই না-পারার প্রভাব পড়েছে। বাঙালি আটকা পড়ে গেছে। সে পাহাড়ে ঘেরা, সমুদ্র তার ব্যবহারের বাইরে, শুধু একদিকেই খোলা, যেদিক থেকে পশ্চিমের প্রভাব এসেছে; কিন্তু নিজে সে দক্ষিণে ও পূর্বে ছড়িয়ে যেতে পারেনি।
বাঙালির জন্য এখন সমুদ্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং সমুদ্রকে ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যা দরকার তা হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দাঁড়াতে পারবে সে তার ভাষাকে ব্যবহার করে। এই ভাষা পারে তাকে দেশপ্রেম এবং ইহজাগতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাখতে এবং সবচেয়ে বড় কথা, তাকে ঐক্যবদ্ধ করতে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে দেশের দিকে তাকাবে—এটাই বাঞ্ছনীয়। দেশের দিকে তাকানোর দিকটা এখন দেখা যাচ্ছে। সেটাকে বাড়ানো দরকার।
বাঙালির নতুন বছর সত্যি সত্যি নতুন বছর হয়ে প্রতিবছর দেখা দেবে বলে আশা করা যাবে তখনই, যখন বাঙালির গৃহমুখিনতা আরও বাড়বে, ঘরকুনো হওয়ার জন্য নয়, সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিকতার জন্য। যার ঘর নেই, তার আবার বিশ্ব কোথায়? বাঙালির জন্য শক্তিকে বিকশিত করার পথে দিশা রয়েছে পয়লা বৈশাখে এবং একুশে ফেব্রুয়ারিতে। আলাদা করে নয়, দুটিকে একত্র করে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেক
১৪ এপ্রিল ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেক
১৪ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেক
১৪ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য জরুরি। বাঙালির নতুন বছর বাঙালির জন্য যে নব নব আশা ও সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে, তা মোটেই সত্য নয়।অবস্থা বরং ক্রমান্বয়ে খারাপই হচ্ছে। কিন্তু পয়লা বৈশাখ একটা পথ দেখায়। পথটা হচ্ছে ইহজাগতিকতার এবং তার ভিত্তিতে ঐক্যের। আমাদের অনেক অনুষ্ঠান আছে। কোনোটা রাষ্ট্রীয়, অনেক
১৪ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫