Ajker Patrika

দুর্নীতি ও বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
দুর্নীতি ও বাস্তবতা

গত সোমবার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রথম বক্তৃতা অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এমন কিছু কথা বলেছেন, যা এই সময়ের বাস্তব সংকটকে তুলে ধরে। উদ্ধৃতিটি একটু বড় হলেও সেটা তুলে দেওয়ার লোভ সামলানো যাচ্ছে না। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘কেবল আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না, দুর্নীতিরও হয় না। এর জন্য দরকার সচেতনতা, সামাজিক আন্দোলন। দুর্নীতিবাজ পিতাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে, বয়কট করা না হলে, কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না, এ রোগের উপশম হবে না। বিত্তের প্রদর্শনী এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতার বিষয়। অবৈধ অর্থে ভোগবিলাস এখন ফ্যাশন। কেউ জানতে চাইছে না, এই অর্থের উৎস কী। উল্টো অনেকে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে। ভাবছে, এই অর্থ, এই চাকচিক্য যদি আমার হতো! দুর্নীতি আমাদের লজ্জাবোধকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, সততার অহংকারকে অর্থহীন করে দিয়েছে।’

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এর চেয়ে বড় সত্য বুঝি আর কিছু হতে পারে না। প্রতিদিন পত্রিকা খুললে বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন মানুষের যেসব দুর্নীতির খবর দেখা যায়, তাতে আমাদের সমাজে নৈতিকতার মান যে ক্রমেই নিচের দিকে নামছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে সরকারের আমলা থেকে শুরু করে নিচের দিকে গাড়িচালক পর্যন্ত ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে যেভাবে আখের গুছিয়ে নিচ্ছে, তাতে প্রতীয়মান হয়, এ দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো প্রতিষ্ঠানই নিজের মর্যাদা ধরে রাখতে পারছে না। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, যেসব চাকরি ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়া, সেসব প্রতিষ্ঠানের মাথারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য সংবাদ প্রকাশেও হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন। নিজেদের দুর্নীতি ও ঘুষের ঘটনাগুলো আড়াল করার জন্য তাঁরা প্রকাশিত সংবাদকে মিডিয়া ট্রায়াল নাম দিতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না।

আমাদের সরকারি চাকরিতে টাকা কামানোর জন্য যেসব ফাঁকফোকর রয়েছে, সেগুলোর সন্ধান পেলেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। এই অবৈধ আয়ের মাধ্যমে কেউ জমি কিনছেন, কেউ গাড়ি-বাড়ি করছেন, কেউ পাড়ায়-মহল্লায় মসজিদ করে কপট খোদাভীতি দেখাচ্ছেন। এ রকম এক দুর্নীতিনির্ভর সমাজে সৎভাবে টিকে থাকা প্রায় দুঃসাধ্য। কীভাবে একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারী চার-পাঁচটি বহুতল ভবনের মালিক হন, তার হিসাব জাদু বাস্তবতা বিষয়ে সুদক্ষ সাহিত্যিকেরাও মেলাতে পারবেন বলে মনে হয় না। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি যখন শোষণ ও বঞ্চনার কশাঘাতে পূর্ব বাংলাকে নিঃশেষ করে ফেলছিল, তখনই স্বাধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল মানুষ, তারই ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু যে অঙ্গীকার ও দেশপ্রেম নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তার বিন্দুমাত্র কি আজ অবশিষ্ট আছে? 
যে সমাজে ঘুষখোর লজ্জা পায় না, দুর্নীতিবাজ মাথা উঁচিয়ে রাজপথে চলাচল করে, সেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা খুবই কঠিন। এমনকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণাও এর ফাঁকফোকর ঢাকতে পারে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত