Ajker Patrika

তবু অধরা গণতন্ত্র

সম্পাদকীয়
তবু অধরা গণতন্ত্র

বাংলাদেশকে বলা হয় প্রতিবাদের দেশ, মিছিল-মিটিংয়ের দেশ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ওই প্রতিবাদ, মিছিল-মিটিংয়ের ধারাতেই। পাকিস্তান যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতো, যদি বাঙালি জাতির প্রতি বিদ্বিষ্ট না হতো, এমনকি যদি সত্তরের নির্বাচনের রায় মেনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হতো স্বাভাবিক নিয়মে, যদি ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া না হতো, তাহলে পাকিস্তানের মৃত্যুঘণ্টা হয়তো একাত্তরেই ওভাবে বেজে উঠত না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য কিন্তু এক নদী রক্ত সাঁতরে আসতে হয়েছে। বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহীদের দেশ। আশা করা হয়েছিল, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আর নিরীহ নাগরিকের রক্ত ঝরবে না। কাউকে আর শহীদ হতে হবে না। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। তাই বারবার এই স্লোগান উচ্চারিত হয় বিভিন্ন মিছিলে—‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। শহীদের রক্ত বৃথা যায়—বিজয় অর্জন করে সে বিজয় আমরা ধরে রাখতে পারি না, 
হাতছাড়া হয়ে যায়।  

নূর হোসেন, টিটো, তাজুল, সেলিম, দেলোয়ারসহ অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটেছে। কিন্তু গণতন্ত্র কি মুক্তি পেয়েছে? না। এরশাদের পতনের পর দেশে ছয়টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্ত ভিত্তি পায়নি। রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রীশাসিত বা সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া ছাড়া গণতন্ত্রের আর কোনো চিহ্ন দেশ শাসনে কিংবা রাজনৈতিক দল পরিচালনায় দেখা যায় না। বিএনপি-জামায়াত এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। এই দল দুটিকে গণতন্ত্রের মিত্র মনে করেন না অনেকেই। আবার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন দাবিদার হলেও দেশ এখন সত্যি গণতান্ত্রিক ধারায় চলছে কি?  
মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিলেও এখন ক্ষমতায় থেকে এমন কিছু আচরণ করছে, যা গণতন্ত্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। 

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকে বলে একসময় যাঁরা স্বস্তি বোধ করতেন, এখন তাঁরাও বর্তমান সরকারের অনেক কাজকর্মে অস্বস্তি বোধ করছেন। শেখ হাসিনার সরকার দেশের অনেক উন্নতি করেছে, অনেক কিছুতেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ আর শূন্য ঝুড়ির দেশ নয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার সক্ষমতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চোখ মেলে চারদিকে তাকালে নতুন এক বাংলাদেশের চিত্রই চোখে ভেসে ওঠে। কিন্তু এত সাফল্যের পরও মানুষের মনে কিন্তু সুখ ও স্বস্তির অভাব রয়েছে। ভোট দিতে না পারার বেদনা ও ক্ষোভ অনেকের মধ্যেই আছে। আগামী নির্বাচনে এই খেদ দূর হওয়ার মতো অবস্থা কি সত্যি হবে?  

আমরা চাই ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য মানুষের আকুতি যেন আর দীর্ঘ না হয়। দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক, সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত হোক, মানুষ নির্ভয়ে অবাধে তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারুক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টেলিগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে আ.লীগ, হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে টাকা নিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের

আগামী ১১ দিন নৈরাজ্যের আশঙ্কা, ঠেকাতে এসপিদের এসবির চিঠি

প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক

প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হলেন মাহফুজ আনাম, নূরুল কবীরসহ ১২ জন

‘মামলা করি কী হইবে, পুলিশ থাকিয়াও হামার জীবনে নিরাপত্তা নাই’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত