শ্যামল আতিক
সম্প্রতি একজন স্কুল শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন অনেক বড়। এ জন্য সাধ্যের সবকিছুই করছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘আমার ছেলে হবে অলরাউন্ডার।
ক্লাসে প্রথম হবে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সব ইভেন্টে পুরস্কার জিতবে, বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে সোনার মেডেল পাবে, হবে বিখ্যাত শিল্পী, হবে আরও অনেক কিছু। এ জন্য যা যা করা লাগে সবই আমি করব।’
কিছুটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ জন্য আপনি কী কী করছেন?’ তিনি বললেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়, দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে গৃহশিক্ষকের কাছে গণিত পড়ে, বিকেলে হুজুর আসবে আরবি পড়াতে, সন্ধ্যায় বিজ্ঞান বা ইংরেজি শিক্ষক পড়াবেন, রাতে সারা দিনের সব পড়া রিভিউ করবে। যেদিন স্কুল বন্ধ সেদিনও ছুটি নেই, হয় সাঁতার বা কারাতে ক্লাস, অথবা গান-আবৃত্তির ক্লাস অথবা ড্রইং শিক্ষকের কাছে ছবি আঁকা শেখা। আমি চাই তার মেধা সবদিকে বিকশিত হোক।’
বিষয়টি আমার কাছে উদ্বেগজনক মনে হলেও, এটাই এই সময়ের নির্মম বাস্তবতা। বেশির ভাগ অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি এখন কমবেশি এ রকম। এসবের মূলে রয়েছে অর্থ, ক্ষমতা, অহংকার ও সামাজিক স্ট্যাটাস রক্ষার অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, তাঁদের মনে কী রসায়ন কাজ করছে। কিছু অভিভাবক মনে করেন অর্থের অভাবে তাঁরা নিজেরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারেননি, এখন অর্থের অভাব নেই, তাই তাঁদের শিশুকে পড়াশোনায় ভালো করতে হবে। কিছু অভিভাবক চান শিশু সব বিষয়ে বিজয়ী হোক, যেন তাঁরা অন্যকে গর্ব করে বলতে পারেন, যাতে সমাজে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল হয়।
নতুন পয়সাওয়ালা একশ্রেণির অভিভাবকের চিন্তাভাবনা আরও ভয়ংকর। তাঁদের মতে, ‘আমাদের শিশু শহরের সেরা স্কুল অথবা ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে সামাজিক স্ট্যাটাস বলে কিছুই থাকবে না। সহকর্মীর ছেলে ক্লাসে প্রথম হয়েছে, প্রতিবেশীর মেয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তান কিছুই করতে পারল না, সমাজে আমার আর মুখ দেখানোর পথ রইল না।’
এসবের প্রতিক্রিয়ায় আমরা শিশুর সঙ্গে এমন কিছু আচরণ করছি, যা রীতিমতো উদ্বেগের। প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে, শিশুকে অন্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা করছি। ‘পাশের বাড়ির ওমুক ক্লাসে প্রথম হয়েছে, অথচ তুমি পারোনি, আমি কী তোমাকে কম খেতে দিই?’—এসব বলে শিশুর মধ্যে হীনম্মন্যতা ঢুকিয়ে দিই। শিশুও একসময় মনে করতে শুরু করে, সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও যেহেতু প্রথম হতে পারেনি, এর মানে তার কোনো মেধা নেই।
অনেকে আবার শিশুকে সব বিষয়ে পারদর্শী অর্থাৎ অলরাউন্ডার বানাতে গিয়ে শৈশবকে বিপর্যস্ত করে তুলি। প্রাত্যহিক খেলাধুলা, নিজের মতো করে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আনন্দ থেকে শিশুকে বঞ্চিত করছি। যার ফলে শিশু একসময় বিগড়ে যাচ্ছে, হতাশায় ভুগছে। আশপাশে তাকালেই দেখতে পাই, মা-বাবার অযৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণ করতে না পেরে, বহু শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
অধিকাংশ অভিভাবক নিজের ইচ্ছাকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চান। নিজে ডাক্তার হতে পারেননি বলে সন্তানকে ডাক্তার বানাতে চান। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের মনপছন্দ লক্ষ্যে সন্তানকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। ভবিষ্যতে সন্তানের পেশা কী হবে, সেটা অনেক পরের ব্যাপার। তার চেয়ে বরং সন্তানের সর্বাঙ্গীণ মানসিক বিকাশ ঘটান, তাকে স্বাধীনভাবে ভাবতে দিন। জীবন যার তাকেই তার লক্ষ্য ঠিক করতে দিন।
তবে হ্যাঁ, লক্ষ্য নির্বাচনে আপনি তাকে ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। বড় হয়ে যা-ই হতে চায় না কেন, মূল লক্ষ্য হবে মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ সাধন। এই বিষয়টি শিশুর মনে প্রথমেই প্রোথিত করতে হবে। তারপর কোন দিকে তার আগ্রহ, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যে কাজে সে বেশি আনন্দ বোধ করে, সে অনুযায়ী তাকে পরিচালিত করুন।
প্রতিটি শিশুই অনন্য। এখানে একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুলনা চলে না। সব বিষয়ে সে পারদর্শী হবে না। স্কুলের পড়াশোনায় ভালো না করলেও সে হয়তো খেলাধুলায় ভালো, লেখালেখিতে ভালো অথবা ব্যবস্থাপনায় ভালো, অথবা ভালো বলতে বা লিখতে পারে, অথবা কারিগরি জ্ঞানে ভালো অথবা অন্য কোনো কিছুতে।
অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, কিসে শিশুর মেধা আছে, সেটা খুঁজে বের করা; সে অনুযায়ী শিশুকে পরিচালিত করা। এটাই হোক আমাদের যৌক্তিক প্রত্যাশা।
লেখক: প্যারেন্টিং গবেষক
সম্প্রতি একজন স্কুল শিক্ষার্থীর মায়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। ছেলেকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন অনেক বড়। এ জন্য সাধ্যের সবকিছুই করছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘আমার ছেলে হবে অলরাউন্ডার।
ক্লাসে প্রথম হবে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সব ইভেন্টে পুরস্কার জিতবে, বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে সোনার মেডেল পাবে, হবে বিখ্যাত শিল্পী, হবে আরও অনেক কিছু। এ জন্য যা যা করা লাগে সবই আমি করব।’
কিছুটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এ জন্য আপনি কী কী করছেন?’ তিনি বললেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যায়, দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে গৃহশিক্ষকের কাছে গণিত পড়ে, বিকেলে হুজুর আসবে আরবি পড়াতে, সন্ধ্যায় বিজ্ঞান বা ইংরেজি শিক্ষক পড়াবেন, রাতে সারা দিনের সব পড়া রিভিউ করবে। যেদিন স্কুল বন্ধ সেদিনও ছুটি নেই, হয় সাঁতার বা কারাতে ক্লাস, অথবা গান-আবৃত্তির ক্লাস অথবা ড্রইং শিক্ষকের কাছে ছবি আঁকা শেখা। আমি চাই তার মেধা সবদিকে বিকশিত হোক।’
বিষয়টি আমার কাছে উদ্বেগজনক মনে হলেও, এটাই এই সময়ের নির্মম বাস্তবতা। বেশির ভাগ অভিভাবকের দৃষ্টিভঙ্গি এখন কমবেশি এ রকম। এসবের মূলে রয়েছে অর্থ, ক্ষমতা, অহংকার ও সামাজিক স্ট্যাটাস রক্ষার অসুস্থ প্রতিযোগিতা।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়, তাঁদের মনে কী রসায়ন কাজ করছে। কিছু অভিভাবক মনে করেন অর্থের অভাবে তাঁরা নিজেরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারেননি, এখন অর্থের অভাব নেই, তাই তাঁদের শিশুকে পড়াশোনায় ভালো করতে হবে। কিছু অভিভাবক চান শিশু সব বিষয়ে বিজয়ী হোক, যেন তাঁরা অন্যকে গর্ব করে বলতে পারেন, যাতে সমাজে তাঁদের মুখ উজ্জ্বল হয়।
নতুন পয়সাওয়ালা একশ্রেণির অভিভাবকের চিন্তাভাবনা আরও ভয়ংকর। তাঁদের মতে, ‘আমাদের শিশু শহরের সেরা স্কুল অথবা ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে সামাজিক স্ট্যাটাস বলে কিছুই থাকবে না। সহকর্মীর ছেলে ক্লাসে প্রথম হয়েছে, প্রতিবেশীর মেয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তান কিছুই করতে পারল না, সমাজে আমার আর মুখ দেখানোর পথ রইল না।’
এসবের প্রতিক্রিয়ায় আমরা শিশুর সঙ্গে এমন কিছু আচরণ করছি, যা রীতিমতো উদ্বেগের। প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে, শিশুকে অন্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা করছি। ‘পাশের বাড়ির ওমুক ক্লাসে প্রথম হয়েছে, অথচ তুমি পারোনি, আমি কী তোমাকে কম খেতে দিই?’—এসব বলে শিশুর মধ্যে হীনম্মন্যতা ঢুকিয়ে দিই। শিশুও একসময় মনে করতে শুরু করে, সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও যেহেতু প্রথম হতে পারেনি, এর মানে তার কোনো মেধা নেই।
অনেকে আবার শিশুকে সব বিষয়ে পারদর্শী অর্থাৎ অলরাউন্ডার বানাতে গিয়ে শৈশবকে বিপর্যস্ত করে তুলি। প্রাত্যহিক খেলাধুলা, নিজের মতো করে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আনন্দ থেকে শিশুকে বঞ্চিত করছি। যার ফলে শিশু একসময় বিগড়ে যাচ্ছে, হতাশায় ভুগছে। আশপাশে তাকালেই দেখতে পাই, মা-বাবার অযৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণ করতে না পেরে, বহু শিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
অধিকাংশ অভিভাবক নিজের ইচ্ছাকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চান। নিজে ডাক্তার হতে পারেননি বলে সন্তানকে ডাক্তার বানাতে চান। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেদের মনপছন্দ লক্ষ্যে সন্তানকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। ভবিষ্যতে সন্তানের পেশা কী হবে, সেটা অনেক পরের ব্যাপার। তার চেয়ে বরং সন্তানের সর্বাঙ্গীণ মানসিক বিকাশ ঘটান, তাকে স্বাধীনভাবে ভাবতে দিন। জীবন যার তাকেই তার লক্ষ্য ঠিক করতে দিন।
তবে হ্যাঁ, লক্ষ্য নির্বাচনে আপনি তাকে ইতিবাচকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। বড় হয়ে যা-ই হতে চায় না কেন, মূল লক্ষ্য হবে মেধার বিকাশ ঘটিয়ে সৃষ্টিজগতের কল্যাণ সাধন। এই বিষয়টি শিশুর মনে প্রথমেই প্রোথিত করতে হবে। তারপর কোন দিকে তার আগ্রহ, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। যে কাজে সে বেশি আনন্দ বোধ করে, সে অনুযায়ী তাকে পরিচালিত করুন।
প্রতিটি শিশুই অনন্য। এখানে একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুলনা চলে না। সব বিষয়ে সে পারদর্শী হবে না। স্কুলের পড়াশোনায় ভালো না করলেও সে হয়তো খেলাধুলায় ভালো, লেখালেখিতে ভালো অথবা ব্যবস্থাপনায় ভালো, অথবা ভালো বলতে বা লিখতে পারে, অথবা কারিগরি জ্ঞানে ভালো অথবা অন্য কোনো কিছুতে।
অভিভাবক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, কিসে শিশুর মেধা আছে, সেটা খুঁজে বের করা; সে অনুযায়ী শিশুকে পরিচালিত করা। এটাই হোক আমাদের যৌক্তিক প্রত্যাশা।
লেখক: প্যারেন্টিং গবেষক
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪