Ajker Patrika

রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট–রেস্তোরাঁর শুধু তালিকাই হয়, ব্যবস্থা গ্রহণ নয়

সৌগত বসু, সাইফুল মাসুম ও রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৯: ৪৩
রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট–রেস্তোরাঁর শুধু তালিকাই হয়, ব্যবস্থা গ্রহণ নয়

বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজের পোড়া কঙ্কালও টনক নড়াতে পারছে না রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ-ক্যাফের ছড়াছড়ি থাকা ভবন কর্তৃপক্ষের। একই রকম ঝুঁকি থাকলেও ভবনগুলোর রেস্তোরাঁ-ক্যাফে চলছে দিব্যি। একই অবস্থা ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় আগুনের ঝুঁকিতে থাকা ৫৮ বিপণিবিতানেরও (মার্কেট)।

বিপণিবিতানগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে ফায়ার সার্ভিস বারবার নোটিশ দিলেও মানছে না মালিক সমিতি ও ভবনমালিক। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভবনের মালিককে নোটিশ দিতে পারি। এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। মামলা করা বা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের আইনের মধ্যে যা যা করা সম্ভব, তা-ই করছি।’

নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, নোটিশে বেঁধে দেওয়া সময়ে কাজ না হলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একটির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে বাকিগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। এ জন্য ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

এদিকে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করা ভবনগুলোর বিরুদ্ধে গতকাল রোববার অভিযানে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।গ্রিন কোজি কটেজের মতো রেস্তোরাঁ-ক্যাফের ছড়াছড়ি ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড, মিরপুর, খিলগাঁওয়ের তালতলায়।

নগরের আরও এলাকায়ও আছে এমন রেস্তোরাঁ ভবন। কোনো ভবনের বাণিজ্যিক অনুমোদন আছে, আবার কোনো কোনোটির রয়েছে আবাসিক ভবনের অনুমোদন। বেশির ভাগ রেস্তোরাঁতেই ব্যবহার হচ্ছে সিলিন্ডারের এলপি গ্যাস। বেইলি রোডে আগুনে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর আলোচনায় এসেছে এসব রেস্তোরাঁর ঝুঁকি। তবে এই ঝুঁকি নির্মূলের পদক্ষেপ গতকালও চোখে পড়েনি।

গতকাল রেস্তোরাঁ-ক্যাফে থাকা পাঁচটি ভবন এবং আগুনের ঝুঁকিতে থাকা ১০টি বিপণিবিতান ঘুরেছেন আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকেরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রেস্তোরাঁ থাকা বেশির ভাগ ভবনে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। সামনের অংশ কাচঘেরা, কোনো জানালা নেই। রান্নাঘরে একটিমাত্র এগজস্ট ফ্যান। সার্বক্ষণিক নির্ভরশীলতা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ওপর। ওঠা-নামার জন্য ভরসা লিফট। সিঁড়ি আছে, তবে সহজে চোখে পড়ে না। কয়েকটি ভবনে সিঁড়ি ধোয়া-মোছা চলছে। এ ছাড়া ঝুঁকি এড়াতে আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে মার্কেটগুলোর জরুরি বহির্গমন ও উন্মুক্ত স্থানগুলো আগের মতোই মালামাল রেখে বন্ধ করা হয়েছে। আগুন নেভানোর সরঞ্জাম আছে নামমাত্র।

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের লাগোয়া ১৩ তলা ইম্পেরিয়াল আমিন আহমেদ সেন্টারে রয়েছে ১৯টি রেস্তোরাঁ, ক্যাফে ও লাউঞ্জ। রয়েছে পোশাক, বেকারি, ক্লিনিক, ব্যাংক, ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান ও শরীরচর্চা কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের তালিকা ভবনের নিচতলাতেই বোর্ডে রয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা কম। জানা গেল, দুপুরের খাবারের সময় এবং সন্ধ্যার পর ভিড় হয়। এই ভবনের জরুরি নির্গমনের জন্য প্রশস্ত দুটি সিঁড়ি রয়েছে। তবে রেস্তোরাঁগুলো যেখানে আছে, আগুন লাগলে বের হতে অনেক সময় লাগবে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শামীম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভবনটিতে ছয়টি রেস্তোরাঁ আছে। তাঁরা বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন নিয়েছেন। রেস্তোরাঁ করার অনুমতিও আছে। ভবনে পাইপলাইনের গ্যাস-সংযোগ আছে, কোনো সিলিন্ডার নেই।

ওই ভবনের উল্টো পাশের ১২ তলা রূপায়ণ জেড আর প্লাজায় ১২টি রেস্তোরাঁ আছে। বেইলি রোডে আগুনের পর নিরাপত্তাব্যবস্থায় কড়াকড়ি করা হয়েছে। এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, বেইলি রোডে আগুনের পর ভবনের সিঁড়ি পরিষ্কার করা হয়েছে।

রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। অনেক এলাকায় একই ভবনে বেশ কয়েকটি করে রেস্তোরাঁও রয়েছে। কোনো কোনো ভবনে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি দোকানপাটসহ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গতকাল রাজধানীর সাতমসজিদ রোডে ধানমন্ডি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকাসাতমসজিদ রোডের শংকর বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোলে ১২ তলা জি এইচ হাইটস নামের একটি ভবন। সেখানেও ছয়টি রেস্তোরাঁ আছে। ভবনে দুটি লিফটের পাশাপাশি সিঁড়ি এবং একটি ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি রয়েছে। রিসিপশনে থাকা মেহেদী হোসেন জানান, আগে আরও বেশি রেস্তোরাঁ ছিল। সম্প্রতি কয়েকটি গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, ভবনের বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন আছে।

একই সড়কের ১৪ তলা গাউছিয়া টুইন পিক নামের ভবনে ২০টির বেশি রেস্তোরাঁ ও কফি হাউস আছে। বেইলি রোডে আগুনের পর ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ভবনটিতে না যেতে সবার প্রতি অনুরোধ করেছেন। তিনি লেখেন, বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে ভবনটিকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে।

সাতমসজিদ রোডে ১৪ তলা কেবি স্কয়ার ভবনের পুরোটিতেই রেস্তোরাঁ। ভবনটির পেছনে দেখা গেল বিশাল আকারের ৩০টির মতো গ্যাস সিলিন্ডার। সিলিন্ডার থেকে পাইপের সাহায্যে বিভিন্ন তলার রেস্তোরাঁয় গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মিরপুর ১২ নম্বরে পল্লবীতে ১০ তলা সাফুরা টাওয়ারে ১৪টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁর বাইরের অংশে কাচ লাগানো। তবে গতকাল ভবনের প্রধান ফটকসহ সব রেস্তোরাঁ বন্ধ পাওয়া গেছে। বিকেলে ভবনটি পরিদর্শন করেন রাজউকের জোন-৩-এর কর্মকর্তারা। পরিদর্শনের পর তাঁরা জানান, ভবনটিতে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি নেই।

রাজউকের জোন-৩-এর পরিচালক তাজিনা সারোয়ার বলেন, ভবনের কোনো নকশা পাওয়া যায়নি। ভবনটির বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন ছিল কি না, দেখতে হবে। বন্ধ থাকায় অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা রেস্তোরাঁগুলোতে ছিল কি না, তা দেখার সুযোগ হয়নি। 

রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। অনেক এলাকায় একই ভবনে বেশ কয়েকটি করে রেস্তোরাঁও রয়েছে। কোনো কোনো ভবনে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি দোকানপাটসহ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গতকাল রাজধানীর সাতমসজিদ রোডে ধানমন্ডি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকাঝুঁকি কমেনি ৫৮ মার্কেটে 
বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিস রাজধানীর ৫৮টি মার্কেটকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে ৯টি মার্কেটকে চিহ্নিত করা হয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। এই ৯টি হলো গাউছিয়া মার্কেট, ফুলবাড়িয়ার বরিশাল প্লাজা মার্কেট, টিকাটুলীর রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট, চকবাজারের সাকিব আনোয়ার টাওয়ার, শহীদ উল্লাহ মার্কেট, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, মাশা কাটারা ২২ মার্কেট এবং সিদ্দিক বাজারের রোজলীন ভিসতা মার্কেট।

গত দুদিন সিদ্দিকবাজারের রোজলীন ভিসতা মার্কেটে গিয়ে অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ১৬ তলা ভবনটির চারতলা পর্যন্ত দোকান এবং বাকি তলাগুলো আবাসিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। মার্কেটে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নামমাত্র। তবে মার্কেটটির মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহমেদের দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাঁদের মার্কেটের নাম অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরামর্শে তাঁরা অনেক কিছু হালনাগাদ করেছেন। তবে ভবন ভেঙে এখন পানির লাইন করা সম্ভব নয়।

ফুলবাড়িয়ার ছয়তলা বরিশাল প্লাজার প্রথম তিনতলায় পোশাকের দোকান। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠতলা আবাসিক। দ্বিতীয় তলার টি-শার্টের দোকানের নয়ন হোসেন বলেন, মার্কেটে ২৫০টির মতো দোকান রয়েছে। সব সময় আতঙ্কে থাকেন। মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইলে ভবনের ব্যবস্থাপক এড়িয়ে যান।

রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। অনেক এলাকায় একই ভবনে বেশ কয়েকটি করে রেস্তোরাঁও রয়েছে। কোনো কোনো ভবনে রেস্তোরাঁর পাশাপাশি দোকানপাটসহ নানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গতকাল রাজধানীর সাতমসজিদ রোডে ধানমন্ডি এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকাঅধিক ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় থাকা চকবাজারের ১০ তলা শাকিব আনোয়ার টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, সিঁড়ি মাত্র একটি। অথচ রাজউকের বিধিমালা অনুসারে, এমন ভবনে সিঁড়ি থাকতে হবে দুটি। চকবাজারের সাততলা শহীদুল্লাহ মার্কেটের প্রথম দুটি তলায় তৈরি পোশাকের দোকান। পরের চারটি তলায় পোশাক তৈরির কারখানা। একটি সরু সিঁড়ি। ভবনের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ নেই।

সার্বিক বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খুব কঠোর হতে হবে। সময় দেওয়ার পরও ঠিক করা না হলে কঠোর ব্যবস্থায় যেতে হবে। ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, সিটি করপোরেশনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ৫৮টি মার্কেটের মধ্যে একটিতে যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বাকি ৫৭টি এমনিতে ঠিক হয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত