Ajker Patrika

সৌন্দর্যবর্ধনের আগেই লেকের সৌন্দর্যহানি

শরিফুল ইসলাম তনয়, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
সৌন্দর্যবর্ধনের আগেই লেকের সৌন্দর্যহানি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) লেক তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এরই মধ্যে লেকের পাড়ের অনেক জায়গা দখল করে দোকান বসিয়েছে অসাধু চক্র ও প্রভাবশালীরা। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে তারা।

এদিকে লেকের পাশে রাখা হয় ময়লার গাড়ি। এমনকি ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয়ও গড়ে উঠেছে লেকের জায়গায়। ফলে দুর্গন্ধ ও যানজটের কারণে লেকের পাড়ের রাস্তা দিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা সেতু থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ও পরিবেশ রক্ষায় লেক তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ ও লেকের ওপর ছয়টি সেতু নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্প কাজের তত্ত্বাবধান করছে নাসিক। এর ঠিকাদারি পেয়েছে মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স।

সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্বোধন না হলেও একটু বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশের টানে লেকের পাড়ে বিপুল লোকসমাগম ঘটে। সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকায় বিকেল থেকে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকানসহ খেলনার দোকান বসে। একটু এগুলেই কদমতলি পুল এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয়সহ বেশ কিছু দোকানপাট অবস্থিত। তা ছাড়া লেকের পাশে সড়কটি সন্ধ্যার পর হকারের দখলে চলে যায়। এতে সড়কে জ্যাম সৃষ্টি হয়।

এদিকে আদমজী ইপিজেড ছুটির পর বিকেল থেকে রাত নয়টায় গিয়ে ওই এলাকায় প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিকের যাতায়াত ঘটে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পঞ্চাশের অধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান বসিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় অস্থায়ী দোকানের পাশাপাশি স্থায়ী দোকানের সংখ্যাও কম নয়। ফলে এ এলাকার প্রবেশমুখের সড়কে বেশির ভাগ সময় জ্যাম লেগে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ভাসমান দোকান থেকে ৫০ থেকে ৮০ টাকা নেওয়া হয়। মাসিক হিসেবে নেওয়া দোকানের জায়গা অনুযায়ী মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। হোটেল, কসাইখানাসহ বিভিন্ন দোকানের আয়তন অনুযায়ী প্রতিদিন ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া দোকান বুঝে বিদ্যুৎ বিলের জন্য নেওয়া হয় ৬০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ বিলের একটা অংশ বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের কাছে যায় বলে জানা গেছে। 
কলেজছাত্র ইমেল বলেন, ‘দুর্গন্ধে সড়কের একপাশ দিয়ে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সড়কের বড় একটি অংশে ময়লার গাড়ি থাকায় প্রতিনিয়ত যানজটে সৃষ্টি হয়। পাশেই সিদ্ধিরগঞ্জ লেক দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে ধরতে হয়।’

কদমতলী এলাকার বাসিন্দা মারুফ জানান, লেকের কাজ শেষে হলে সিদ্ধিরগঞ্জের চিত্রই বদলে যাবে। কিন্তু দিন দিন লেকটি বেদখল করে ফেলছে হকারেরা। উদ্বোধনের আগেই এই অবস্থা, কিছুদিন পর তো বসার জায়গা পাব না। নাসিকের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘এখানে কে বা কারা চাঁদাবাজি করে, তা আমার জানা নেই। যদি এখানে কেউ চাঁদাবাজি করে অবশ্যই আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রিপন বলেন, ‘আপাতত লেকের কাজ বন্ধ, তাই এসব দোকান বা আমার কার্যালয় কিছুই সরানো হয়নি। লেকের কাজ শেষ হলে এগুলো কিচ্ছু থাকবে না।’ রিপন বলেন, ‘ময়লার বিষয়ে সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দিয়েছি, তারা এখনো কিছু বলেনি। আমাদের এখানে জায়গা নেই, তাই এখানে ময়লার গাড়িগুলো রাখা হয়।’

এ বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ চাঁদাবাজি করে থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত