Ajker Patrika

একটি মৃত্যু ও আইন না মানা চালক সম্প্রদায়

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ০৯: ৩৭
একটি মৃত্যু ও আইন না মানা চালক সম্প্রদায়

দুই শিশুকন্যার সামনে মায়ের মৃত্যু কত বড় শোক হয়ে উঠতে পারে, সেটা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারও পক্ষে বোঝা খুব কঠিন। মিরপুরের ভাষানটেকের ডেন্টাল কলেজের সামনে মঙ্গলবার 

দুপুরে যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা নিয়ে আমরা হয়তো কোনো কথা বলতে পারব, কিন্তু কোনোভাবেই সন্তানদের কাছে তাদের মাকে ফিরিয়ে দিতে পারব না। বাসের ধাক্কার পর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে ছিটকে পড়লেন মা এবং দুই কন্যা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মা মারা গেলেন। অসহায় দুই শিশু হলো মায়ের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী! এত বড় শোক বহন করা সহজ কথা নয়।

যানজটে প্রায় স্থবির রাজধানী ঢাকাতে কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে এ ধরনের শোকাবহ দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। সড়কপথে চলার ব্যাপারে আইনকানুন না মানাকে অনেকেই নিজের অহংকার বলে গণ্য করে। দীর্ঘক্ষণ লাল বাতিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর সবুজ বাতি জ্বলে উঠলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তা মোটেই ট্রাফিক আইনকে শ্রদ্ধা করে না। আইন ভাঙার এই প্রতিযোগিতায় সব ধরনের যানবাহন শামিল হয়, তবে মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা স্বাধীনতা একটু বেশি নেয়। আর বাসগুলো সোজা চলতে চলতে হঠাৎ আড়াআড়ি এসে পেছনের বাহনের জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। আর এ জন্য চালক শুধু তাঁর হাতটা একটু বের করে দিয়ে সদম্ভে জানিয়ে দেন, ‘খবরদার! এগিয়েছ তো পিষে দেব!’ এই সমস্ত কিছুই চলছে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে অসম্মান করে, কিন্তু সড়কের এই অসভ্যতা যেন সয়ে গেছে রাজধানীবাসীর। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্কুলগুলো খুলেছে যখন, তখন যানজটও বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। রাস্তায় এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেক চালকই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন না, আর তার শিকার হয় সাধারণ মানুষ।

আরও একটা কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, অনেক চালকই ট্রাফিক আইন জানেন না, যে লাইসেন্স সঙ্গে নিয়ে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালান, সে লাইসেন্স স্বাভাবিক পথে পাওয়া নয়। মালিকেরা কি তা জানেন না? জানেন, কিন্তু কম বেতনে চালকদের নিয়োগ দেওয়ার লোভে এই দুই নম্বরি লাইসেন্সকে মেনে নেন। ট্রাফিক ব্যবস্থাকে সম্মান করা না হলে ভুগতে হবে, এমন কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা ও তার প্রয়োগ দেখা যায় না।

তাই একজন মা তাঁর সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে লাশে পরিণত হলে সবাই শোকার্ত হয় ঠিকই, কিন্তু এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ যে ট্রাফিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা, সেটা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা থাকে না কারও। পরিবহনমালিক, সাধারণ চালকসহ সবাই যদি অন্তত সড়কে চলার আইনগুলোকে সমীহ করতেন, তাহলে দুর্ঘটনার খবরগুলোকে অতীত করে দেওয়া যেত। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে বর্তমানের এই আগুন ভবিষ্যতেও পোড়াবে।

সমবেদনায় মেয়ে দুটো মাকে ফিরে পাবে না। কিন্তু সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কীই-বা করতে পারি আমরা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত