Ajker Patrika

বিদায়ের পালা

সম্পাদকীয়
বিদায়ের পালা

ব্যাপারটা এমন নয় যে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির নীতিভ্রম নিয়ে মনে প্রশ্ন জেগেছিল সলিল চৌধুরীর। স্বাধীনতা, অর্থাৎ দেশভাগের পর থেকেই গণনাট্য সংঘের কাজে পার্টি হয়ে উঠল দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে স্থূল সংকীর্ণতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ দেখা গেল। গণনাট্য সম্মেলন থেকে পার্টির তৎকালীন সম্পাদক অজয় ঘোষের কণ্ঠে শোনা গেল, ‘সংস্কৃতি-ফংস্কৃতি নিয়ে এখন ভাববার সময় নেই, নেতৃত্বে রদবদলেরও প্রয়োজন নেই। যা চলছে চলুক।’

সংস্কৃতি আন্দোলন নিয়ে পার্টির নেতাদের পরিষ্কার কোনো নীতি ছিল না। রাজনৈতিক আন্দোলনে যে কৌশল বা নীতি নির্ধারণ করা হতো, তাকেই গানে-নাটকে রূপ দেওয়াটাই শিল্পীরা কমিউনিস্ট শিল্পীর দায়িত্ব বলে মনে করতেন। ফলে যা হওয়ার তা-ই হলো, শুরু হলো স্লোগানধর্মী গানের জয়জয়কার, স্থূল নাটক নিয়ে উচ্ছ্বাস। এ-জাতীয় রচনার বিরোধিতা করলেন সলিল চৌধুরী। চাইলেন মৌলিক কিছু করতে। আর তাকেই বিদ্রোহ হিসেবে চিহ্নিত করল পার্টির পান্ডারা। সলিল চৌধুরী চাইতেন, যা লেখা হবে, তা স্থান-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে মানুষের চিরন্তন সংগ্রামের সাথি হবে।

পার্টির পথকে সলিল চৌধুরী মনে করলেন উগ্র বামবিচ্যুতি। গণনাট্য আন্দোলনকে তা কোণঠাসা করে দিল। শ্রেষ্ঠ যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার নিয়ে, তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলেন।

চল্লিশের দশকের শেষের দিকে এসে সলিল চৌধুরী বুঝতে পারছিলেন, এই পরিবেশে দম আটকে মরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সে সময় সংস্কৃতির নেতারা নানা রকম ফতোয়া দিচ্ছিলেন। যেমন ‘গাঁয়ের বধূ’ গানটি নিষিদ্ধ হলো গণনাট্যের আসরে, ‘পালকির গান’কে বলা হলো প্রতিক্রিয়াশীল গান। আর সন্ধ্যা মুখার্জির কণ্ঠে সলিলের গান ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’কে শুধু প্রতিক্রিয়াশীলই বলা হলো না, বলা হলো এর জন্য নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। কেন? কারণ গানটিতে ‘বিধি’ শব্দটি আছে। কমিউনিস্টের গানে কেন ‘বিধি’ থাকবে?

মন বিদ্রোহ করে উঠল সলিলের। বুঝলেন, গণনাট্য সংঘের সেরা সময়টা চলে গেছে। এবার বিদায়ের পালা। 

সূত্র: সলিল চৌধুরী, জীবন উজ্জীবন, পৃষ্ঠা ৩১-৩৩ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত