Ajker Patrika

সােহাগের নিষেধাজ্ঞায় টালমাটাল বাফুফে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২: ৩৪
Thumbnail image

রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন সোহাগ
শাস্তি যে একটা আসছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল কদিন ধরেই। ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন আবু নাঈম সোহাগ নিজেও। শাস্তির পূর্বাভাস জেনেও নারী ফুটবল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা সোহাগ। তাঁকে একহাত নিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। সংসদীয় কমিটিতে উঠেছিল তাঁর পদত্যাগের দাবিও।

পদত্যাগ নয়, দুই বছরের জন্য সব রকম ফুটবল কার্যক্রম থেকে সােহাগকে নিষিদ্ধই করেছে ফিফা। তাঁর আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতি নিয়ে ৫১ পৃষ্ঠার বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সোহাগের বিরুদ্ধে করা ফিফার প্রতিবেদনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলছেন তাঁর আইনজীবী।

সোহাগের আইনজীবী আজমালুল হোসেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘শুনানিতে বাফুফে টাকাপয়সা লেনদেনের জন্য ফিফার দেওয়া অনুমোদনের নথিপত্র পেশ করেছে। কিন্তু অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার অবৈধভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আমলে নেয়নি এবং ১৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে রায়টি অনুমোদন করে। আর এতেই স্পষ্ট হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ নয়; বরং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে সোহাগ আপিল করবেন বলে জানানো হয়েছে তাঁর আইনজীবীর বিবৃতিতে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফিফার পাঠানো তহবিলের অপব্যবহার করা হয়েছে কিংবা বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে ব্যবহার করা হয়নি, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই রায়ে।

একইভাবে ফিফা ও বাফুফে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে প্রমাণও নেই। তথ্যপ্রমাণ এড়িয়ে সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার জানিয়ে দেয়, বাফুফের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করা হয়েছে। আর এতেই প্রমাণিত হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও অসংগতিপূর্ণ নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’

আইনজীবীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিফা আরেকটু কথা বলে ব্যাপারটি মেটাতে পারত। এমন নিষেধাজ্ঞাকে তিনি (সোহাগ) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করেন। ফিফার যে অর্থ-সংক্রান্ত লেনদেন নিয়ে অভিযোগ করেছে সেটা ফিফা আগে জেনেছে, চিঠি নিয়েছে, দ্রব্যাদির দাম সবকিছু জেনে চিঠি ইস্যু করেছে।’

আগামী ২১ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে সোহাগকে। তাঁর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক খুদে বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘দ্রুতই সত্য সকলের সামনে আসবে।’

 সালাউদ্দিন অপেক্ষায় দুই সহসভাপতির
অনেক কথাই শোনার ছিল তাঁর কাছ থেকে। কিন্তু বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলন শেষ করলেন ৫ মিনিটেরও কম সময়ে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার তেমন সুযোগই দিলেন না। অধিকাংশ কথাই বলে গেলেন নিজের মতো করে। সংক্ষিপ্ত এ সময়ে যেটা বললেন সালাউদ্দিন তাতে অনিয়মের দায়ে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ আবু নাঈম সোহাগের প্রতি তাঁর সমর্থনের ইঙ্গিত স্পষ্ট। 

আবু নাঈম সোহাগকে ফিফা নিষিদ্ধ করার ঘটনাটি দেশের ফুটবলের জন্য লজ্জাজনক কি না? প্রশ্নটা কাজী সালাউদ্দিন শুনেই ‘থ্যাংক ইউ’ বলে তড়িঘড়ি করে বিদায় নিলেন সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে। আর্থিক অনিয়ম ও জালিয়াতির দায়ে দুই বছরের জন্য বাফুফে সাধারণ সম্পাদক সোহাগকে গত পরশু সন্ধ্যায় সব রকম ফুটবল কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অনিয়মের অভিযোগ এনেছে ফিফা। তবে সোহাগের বিরুদ্ধে করা এতসব অভিযোগকে ‘অনিয়ম’ বলতে নারাজ সালাউদ্দিন। বাফুফের এক দশকের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘ওরা (ফিফা) কিন্তু বলেনি আর্থিক অনিয়ম। ফিফার রিপোর্টে আর্থিক অনিয়ম বলা হয়নি। ওরা কোড অব এথিকস এবং রেসপনসিবিলিটি নিয়ে বলেছে। যাই বলা হয়েছে, সবই এখানে আসবে, লুকোনোর কিছু নাই। তবে কিছু বলার আগে আমার সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

ফিফার নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত নিষিদ্ধই থাকছেন সোহাগ। বাফুফে কার্যালয়ে তাঁর কক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নাম ফলকও। সোহাগকে নিয়ে পরবর্তী করণীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘আমি একটা জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। তবে আমাদের সহসভাপতির মধ্যে দুজন দেশের বাইরে আছেন। আমি তাই বৈঠক ডাকতে পারিনি। তাঁরা কাল-পরশু দেশে এসে পৌঁছাবেন। সবাই এলে পরশু (কাল) দিন আমরা বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেব।’

সোহাগের জন্য প্রয়োজনে ফিফা প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘সোমবার (আগামীকাল) ফিফা খুলবে। আমি ফিফার সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর আমরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত