Ajker Patrika

মিরপুরের শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়

আল-আমিন রাজু, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ১৭
মিরপুরের শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়

এক সময় দুই শিফটে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস করত। গৌরব হারিয়ে বর্তমানে স্কুলটি প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য। স্কুলের দুটি ভবনের সাত কক্ষ দখল করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে দোকান হিসেবে। এক ভবনের পুরোটাই করা হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসা। রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ১৯৭৫ সালে শহীদ সাংবাদিকের নামে প্রতিষ্ঠিত শহীদ আবু তালেব উচ্চবিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা এটি।

অভিযোগ রয়েছে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা খলিলুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও একনায়কতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বলি হয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমন দশা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে টানা এক যুগ স্কুল কমিটির সভাপতির পদ আঁকড়ে রেখেছেন খলিল। মেয়াদ শেষ হয়, কিন্তু বদলায় না সভাপতি। স্কুলের ভবনে মাদ্রাসা করে সেটির জায়গা আরও বাড়াতে তিনি দখল করেছেন সিটি করপোরেশনের রাস্তার কিছু অংশ। এতে পরিবর্তিত হয়েছে মাউশির মূল নকশা। খলিলের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে স্কুল থেকে চাকরিও হারিয়েছেন অনেকে। হয়রানির শিকার হয়েছেন অভিভাবকেরাও।

প্রতিষ্ঠানটির নথি ঘেঁটে জানা গেছে, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার আট বছর পর ১৯৮৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিভাবক সদস্য হিসেবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে স্থান পান খলিল। যদিও খলিল বিয়ে করেন ১৯৮৮ সালে। এভাবে সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে আজকের পত্রিকাকে খলিল বলেন, ‘১৯৮৩ সালে ভাতিজার অভিভাবক হিসেবে সদস্য হয়েছি। তখন এমন নিয়মই ছিল।’

এদিকে গত ১৯ বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে স্কুলটি। এ সময়ের মধ্যে ৬ জন প্রধান শিক্ষক আসলেন আর গেলেন, কিন্তু কেউ স্থায়ী হননি। এ বিষয়ে খলিল বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। কিন্তু যোগ্য লোক পাইনি বলে নিয়োগও দিইনি।’

খলিলের অনিয়মের প্রতিবাদ করে মিথ্যা মামলা, শোকজসহ নানাভাবে হেনস্তার শিকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম সেন্টু এখন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা। ওবায়দুল্লাহ নামে আরেকজন দীর্ঘ ৩৮ বছর শিক্ষকতা করেও শেষটা হয়েছে বেদনার। সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘চাকরির বয়স শেষ হওয়ার ৮ মাস আগে মিথ্যা অভিযোগে এবং শিক্ষাদানে অক্ষম প্রচার করে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন খলিল, এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে ২০১৯ সালে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও করেন তিনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, ‘স্কুলটির দুটি ভবনের একটি মাউশির অর্থায়নে করা। শিক্ষার্থী না থাকায় সেই ভবনটিই পরিত্যক্ত। আশপাশে অনেক মসজিদ থাকলেও সেই ভবনকেই মসজিদ বানিয়েছেন খলিল।’

স্থানীয় এক বাড়ির মালিক জানান, ‘স্কুল সভাপতি জোর করে মাদ্রাসার জন্য ৬ ফুট রাস্তাও দখল করে নিয়েছেন। আসলে মসজিদ-মাদ্রাসাকে ব্যবহার করে তিনি জায়গা দখল নিচ্ছেন।’

খলিলের দখল করা রাস্তা উদ্ধারে স্থানীয় ৭৪ জন বাড়ির মালিক স্বাক্ষর করে সিটি করপোরেশনের কাছে আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি। এসব নিয়ে খলিল বলেন, ‘মসজিদ বানানো তো খারাপ কাজ না। এলাকাবাসী চেয়েছে তাই করে দিয়েছি।’

স্কুল কমিটির সভাপতির এমন অনিয়ম নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (মাউশি) উপপরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা বড় অনিয়ম। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা শিক্ষা বোর্ডে অবশ্যই আলোচনা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে, ইসির খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমছে, সবুজসংকেত যুক্তরাষ্ট্রের

গণপূর্তের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১ স্থপতি বরখাস্ত

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত