Ajker Patrika

অপরাধীরা শাস্তি পাক

সম্পাদকীয়
অপরাধীরা শাস্তি পাক

কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন ৫ জুন। পরদিন ৬ জুন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে ৯ জুন। এরপর ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যাপকতা পায়। বলা হচ্ছে, ১ জুলাইয়ের পরপরই যদি সরকারপক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হতো, তাহলে হয়তো ১৭ জুলাইয়ের পরবর্তী কয়দিন দেশে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা এড়ানো যেত। কিন্তু সেটা করা হয়নি। এই ফাঁকে কোটা সংস্কারের মতো অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনীতি ঢুকে পড়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ঘটেছে অসংখ্য প্রাণহানি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের হয়েছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। কার দোষে এ অবস্থা হলো, সেটা নিয়ে দোষারোপের সংস্কৃতিতে না মেতে এখন সবাইকে মনোযোগ দেওয়া দরকার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার। সরকার যদি শুরুতে ভুল করে থাকে, তাহলে সেই ভুলের মাশুল কিন্তু সরকার দিতে শুরু করেছে।

সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে আমরা ইতিমধ্যেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। প্রথমে একজন বিচারপতি দিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম, এখন আরও দুজনকে যুক্ত করে তাদের তদন্তের পরিধি আরও বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সরকারের তদন্ত কমিটির প্রতি অনেকের আস্থা না থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই হয়তো প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন, ‘আমরা জাতিসংঘের কাছেও আবেদন করেছি, আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে দেশে-বিদেশে, তাদের কাছেও আমরা সহযোগিতা চাই যে এই ঘটনার যথাযথ সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা এতে দোষী, তাদের সাজার ব্যবস্থা হোক।’

১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর সহিংসতা বন্ধ হয়েছে। নতুন করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেনি। পর্যায়ক্রমে কারফিউর মেয়াদও শিথিল করা হচ্ছে। অফিস-আদালত, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা সবকিছু যথারীতি চালু হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত আছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই সারা দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাবলিক ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ 
ঘোষণা করা হয়। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় সংকট দেখা দেবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি ‘সাময়িক’ বন্ধ রাখার কথা সরকার ভাবছে বলে আজকের পত্রিকায় ১ আগস্ট একটি খবর ছাপা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ পরিস্থিতি যেন না হয়, সে জন্য নানা চিন্তাভাবনা চলছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার মধ্যেও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি রয়েছে। ২০ জুলাই দেওয়া দাবির সপ্তম দফায় রয়েছে, ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।’

এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনা। কারোরই এমন কিছু করা উচিত হবে না, যা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত