Ajker Patrika

বোনাসের নামে বাড়তি ভাড়া

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
বোনাসের নামে বাড়তি ভাড়া

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ঈদ বোনাসের নামে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলা বাস, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে কিছুসংখ্যক পরিবহনশ্রমিক বাড়তি ভাড়া দিতে যাত্রীদের বাধ্য করেন। গতকাল শনিবার সব পরিবহনশ্রমিক এক জোট হয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে এমনিতেই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে; এর ওপর ঈদের নামে বাড়তি ভাড়া বড় ধরনের ‘জুলুম’।

গতকাল সকালে আবদুল্লাহ আল মামুন ও মোহাম্মদ ইকবাল নামের দুই ব্যক্তি চাতরী থেকে মইজ্জারটেক যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। তাঁরা জানান, চাতরী থেকে মইজ্জারটেক নির্ধারিত ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু ঈদের অজুহাতে নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। অন্যদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নির্ধারিত ভাড়া ২০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা করে। কেন বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে—জানতে চাইলে এক চালক বলেন, এটা ঈদ বোনাস।

অন্যদিকে নগরীর শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর ও মইজ্জারটেক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চত্বর থেকে কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার ঘরমুখী মানুষকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

আলাউদ্দিন মাঝি নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমাকে প্রতিদিনই শহরে যেতে হয়। মইজ্জারটেক থেকে ব্রিজ পার হতে লাগে ২০ টাকা। এভাবে প্রায় সব যাত্রীর কাছ থেকেই বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর বড়উঠান থেকে বাসে উঠলে সড়কের কাজের যানজটের ভোগান্তি তো আছে। দীর্ঘ সময় যানজটের কথা বলে অনেকে বাড়তি ভাড়াও নেন বলে জানান তিনি। এর মধ্যে যোগ হয়েছে ঈদ বোনাসের নামে ভাড়া-নৈরাজ্য। এগুলো যেন দেখার কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রীদের জিম্মি করে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নির্ধারিত ভাড়ার কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। এদের অনেকেই নিয়মিত যাত্রী নয়। এই সুযোগে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা।

এদিকে কয়েক দিন সন্ধ্যার পর পরিবহন-সংকট দেখা দিচ্ছে। এ সময় যাত্রীরা বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে তর্ক করারও সুযোগ পাচ্ছেন না। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবে পরিবহনে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগ নিচ্ছেন পরিবহনশ্রমিকেরা।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, বিশেষ দিবসে সড়কে নামলেই গাড়ি নেই। বেশি ভাড়া দিয়েও গাড়ি পাওয়া যায় না। আবার দেখা যায়, এক ঘণ্টার পথ পাঁচ ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়। সরকারি যেকোনো বন্ধ এবং উৎসবের সুযোগে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে বাস, মাইক্রো ও সিএনজিচালকেরা।

কর্ণফুলীর ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ঈদে বাড়িফেরা মানুষের ভোগান্তি কমাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ক্রসিং ও মইজ্জারটেক এলাকায় পুলিশ কাজ করছে। সেই সঙ্গে আরও অতিরিক্ত পুলিশ সড়কে তৎপর আছে। পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে, যাতে যাত্রীরা কোনো ভোগান্তির শিকার না হন।

ফরহাদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অটোরিকশার কোনো স্ট্যান্ড না থাকায় মইজ্জারটেক এলাকায় কিছু অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। আমরা প্রায়ই রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। তা ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। ঈদ সামনে রেখে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রী ও চালকদের সচেতন করতেও কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত