Ajker Patrika

বাসের বাড়তি ভাড়া যায় কার পকেটে

রাশেদ নিজাম, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২২, ০৮: ২৪
বাসের বাড়তি ভাড়া যায় কার পকেটে

রাজধানীর বাসাবো থেকে নতুন বাজারে সপ্তাহে ছয় দিন যাতায়াত করেন রুহুল আমিন। ২০১১ সালে যখন ভাটারায় চাকরি শুরু করেন, তখন বাসভাড়া দিতেন ৬ টাকা। এখন দেন ১৮ থেকে ২০ টাকা। কখনো এর বেশিও চেয়ে বসেন সুপারভাইজাররা। ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করা রুহুলের গত ১১ বছরে বেতন বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার। দেখতে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হলেও তাঁর জীবনযাত্রায় শুধু যাতায়াত ভাড়া বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। বাকি খরচ তো আছেই।

২০১১ সালের মে মাসে ২ টাকা বাড়িয়ে ডিজেলের মূল্য করা হয়েছিল ৪৬ টাকা। তখন মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া নির্ধারিত ছিল ১ টাকা ৫৫ পয়সা, মিনিবাসে ১ টাকা ৪৫ পয়সা। ১১ বছরের মাথায় ২০২২ সালের আগস্টে এক লাফে ডিজেলের দাম বেড়ে ৮০ থেকে ১১৪ হয়েছে। সর্বশেষ বাসভাড়া বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা এবং মিনিবাসে ২ টাকা ২০ পয়সা। দূরপাল্লার বাসে যেহেতু কিলোমিটার নির্ধারিত থাকে, তাই বাসভাড়ার ক্ষেত্রে হেরফের হওয়ার সুযোগ কম থাকে। এবার বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা।

এই এক যুগে বিভিন্ন সময় বাসের ভাড়া বেড়েছে পাঁচবার। ২০২১ সালের নভেম্বরে ৬৫ থেকে ডিজেলের দাম ৮০ টাকা হওয়ার পরে লাফ দিয়ে বেড়ে যায় মহানগরী ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়া। বাসে ২৬ দশমিক ৪৭ এবং মিনিবাসে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। দূরপাল্লায় বাড়ে ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ন্যূনতম ভাড়া করা হয় বাসে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা। যদিও ১০ টাকার নিচে ভাড়া নিতেন না হেলপার, চালকেরা।

রাজধানীর একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে কাজ করা নবিশ সংবাদকর্মী আজকের পত্রিকাকে জানান, গত রোববার ফার্মগেট থেকে প্রেসক্লাবে যাওয়ার সময় তিনি ২০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন সরকারি পরিবহন বিআরটিসির বাসে। যা আগে ছিল ১০ টাকা। বেশি নেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সুপারভাইজার তাঁকে জানান, এটাই নতুন ভাড়া।

উত্তর বাড্ডা থেকে রামপুরা ব্রিজের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। বর্তমান হিসাবে ভাড়া আসে সাড়ে ৭ টাকা। সর্বনিম্ন ১০ টাকা হিসাবে এই দূরত্বের ভাড়া বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এই রাস্তায় চলাচলকারী তিন যাত্রী জানিয়েছেন, আলিফ ও অছিম পরিবহন ১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। রবরব পরিবহন ১০ টাকাতেই আছে।

ধানমন্ডি থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে চলাচল করা তরঙ্গ পরিবহন ১৫ টাকার নিচে কোনো ভাড়া নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন দুজন নিয়মিত যাতায়াতকারী। এবার ন্যূনতম ভাড়া ১০ টাকার পরিবর্তন না হলেও রাজধানীর বেশির ভাগ বাসই তা মানছে না বলে অভিযোগ বেশির ভাগ মানুষের।

১১ বছরে ডিজেলের দাম তিন গুণ না হলেও বাসের ভাড়া তিন গুণ হয়েছে। রাজধানীর ছয়টি রুটের নিয়মিত চলাচলকারী বাসের যাত্রী ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্যই পাওয়া গেছে। মালিক সমিতির হিসাবে ঢাকায় সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা আড়াই শ, সব মিলিয়ে বাস প্রায় ৫ হাজার। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সবাই ভাড়া বাড়ায়।

৬ আগস্ট নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর থেকে বিআরটিএ এবং মালিকপক্ষের পক্ষ থেকে রাজধানীর ৯টি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। প্রতিদিনই নিয়ম ভাঙার কারণে জরিমানা করা হচ্ছে বাসের চালক ও মালিকদের। তবু তাঁরা কেন বেশি ভাড়া আদায় করছেন?

দীর্ঘদিন বাস মালিক সমিতির শীর্ষ পদে থাকা এক নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, মালিকপক্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবারই নির্দেশনা দেয় ভাড়ার বিষয়ে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। কিন্তু কিছু আগ্রাসী বাসচালক ও সুপারভাইজার নিয়মের বাইরে গিয়ে ভাড়া বেশি আদায় করেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘শ্রমিকেরা যদি বেশি ভাড়া নেন, সেটা মালিকের পকেটেই যায়। তবু চার্টের বাইরে কেউ ভাড়া আদায় করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানাই। জোর করে কেউ বেশি ভাড়া নেবে—এটা শ্রমিক ফেডারেশন কোনোমতেই গ্রহণ করবে না।’

যাত্রীদের অভিযোগ এবং প্রতিবারই নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের টিম যৌথভাবে বিআরটিএর সঙ্গে কাজ করছে। কিছু শ্রমিক জোর করে নিতে পারেন, এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তাঁদের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, মালিকপক্ষ সব সময়ই শ্রমিকদের ওপরে দোষ দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করে। এখানে হেলপার ভাড়া বেশি নিয়ে তো নিজের পকেট ভারী করে না, সেটা মালিকের পকেটেই যায়। মালিকেরাই নানা ফাঁক-ফোকরের মধ্য দিয়ে ভাড়া পকেটে নিচ্ছেন। শ্রমিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যাত্রীদের মুখোমুখি করে দিচ্ছেন নেতারা।

চলছে ওয়েবিল প্রথা

বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে সমালোচনার মুখে ১০ আগস্ট ওয়েবিল প্রথা বাতিল করার ঘোষণা দেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাদের বক্তব্য ছিল, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকার বাসে রাস্তায় কোনো পরিদর্শক (চেকার) থাকবে না। এক বাসস্ট্যান্ড থেকে অন্য বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচলের সময় বাসের দরজা বন্ধ রাখতে হবে।

কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় সেই ঘোষণা মুখে মুখেই রয়ে গেছে। ওয়েবিল প্রথা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। মালিকেরা এটা বাতিলে রাজি নন।’

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়েবিল বাতিল হচ্ছে না, নতুন নিয়মে চলবে। কারণ, গাড়িতে ওয়েবিল না থাকলে এতে কী পরিমাণ যাত্রী এবং ভাড়া এল, তার কোনো হিসাব থাকে না। যার সুবিধা দিন শেষে পান বাসের চালক ও সুপারভাইজার। মালিকপক্ষের কাছে কোনো জবাব থাকে না। তাই আগের মতো যেখানেই নামেন এক ভাড়া, এখান থেকে সরে এসে চার্ট হিসেবে নির্দিষ্ট স্টপেজের ভাড়া আদায় করা হিসাবে ওয়েবিল প্রথা চালু রাখার পক্ষে বেশির ভাগ মালিক। সমিতি থেকে বাতিলের যে বক্তব্য এসেছে, তাতে তীব্র বিরোধিতা করেছেন সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত