Ajker Patrika

জনবল-সংকটে বন্ধ স্টেশন

শামীম রেজা, রাজবাড়ী
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৫: ০৬
Thumbnail image

রাজবাড়ী রেলে লোকবলের সংকট বিরাজ করছে। বন্ধ অবস্থায় আছে বেশির ভাগ স্টেশন। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো থেকে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লোকবলের সংকটের কারণে এই মুহূর্তে স্টেশন মাস্টার নিয়োগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ ঘাট, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া, রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটে প্রতিদিন পাঁচটি ট্রেন ১৪ বার আসা যাওয়া করে। গোয়ালন্দ ঘাট-কুষ্টিয়া রুটে ১৪টি স্টেশনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ বাজারসহ পাঁচটি রেল স্টেশন দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী থেকে ভাঙ্গা ৬৪ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন রয়েছে ১২ টি। এর মধ্যে স্টেশন মাস্টার আছে পাঁচটিতে।

এ রুটে খানখানাপুর, বসন্তপুর, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর কলেজ, বাখুন্ডা, তালমা ও পুকুরিয়া স্টেশনে মাস্টার নেই। রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ৯৪ কিলোমিটার রেলপথের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে ১০ টিতে কোনো মাস্টার নেই। এ স্টেশনগুলো হলো রামদিয়া, আড়কান্দি, নলিয়া গ্রাম, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সসরাইল, বনমালীপুর ও ব্যাসপুর। উল্লেখিত স্টেশনগুলোতে বুকিং সহকারী পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ। বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে শুধু ট্রেন থামে। নেই আর কোনো কার্যক্রম।

ট্রেনের সময় সূচি অনুযায়ী আপ-ডাউন কাছাকাছিতে রয়েছে কয়েকটি ট্রেন। অনেক ক্ষেত্রেই দিতে হয় ক্রসিং। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে ক্রসিং দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ট্রেন ক্রসিংয়ে সময় লাগে অনেক বেশি। যেমন, রাজবাড়ী থেকে কালুখালীর মধ্যে রয়েছে সূর্যনগর ও বেলগাছি স্টেশন। এ দুটি স্টেশনই বন্ধ। প্রায়শই খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নকশী কাঁথা মেইল ট্রেন কালুখালী এসে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কারণ, একই সময়ে রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়াগামী কালুখালী ভাটিয়াপাড়া মেইল ট্রেনটি গিয়ে থাকে। আবার দুপুরে নকশী কাঁথা মেইল ট্রেন যখন খুলনা অভিমুখে যায় তখন পোড়াদহ থেকে গোয়ালন্দ ঘাটগামী সাটল ট্রেনের আসার সময়। হয় মেইল ট্রেনকে রাজবাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অন্যথা সাটল ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কালুখালী। কিন্তু বেলগাছি স্টেশনটি চালু থাকলে দুদিক থেকেই সময় বাঁচত। যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। অপরদিকে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে কোনো টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই। নেই মালামাল বুকিংয়ের কোনো ব্যবস্থাও। যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারছে না। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের পণ্য বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পাঠাচ্ছেন।

রাজবাড়ী রেলওয়ের সূত্রমতে, এ সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র চারজন। ট্রেন চলাচল করছে পাঁচটি। এর মধ্যে দুটি অবশ্য বেসরকারি খাতে রয়েছে। মাত্র চারজন টিটিই দিয়ে তিনটি ট্রেনের যাত্রী চেক করা খুবই কঠিন। ফলে যাত্রীদের টিকিট কাটার ইচ্ছে থাকলেও টিকিট করতে পারছে না। টিটিইও পৌঁছাতে পারছেন না সব যাত্রীর কাছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বেলগাছি রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশন মাস্টারের যে কক্ষটি ছিল সেটি তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। এর পাশে টিকিট কাউন্টারের কক্ষটিও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। যাত্রীদের বিশ্রাম কক্ষটিতে কয়েকজন বসে আছেন ট্রেনের অপেক্ষায়।

এ সময় বেলগাছির বাসিন্দা সাধন কুমার জানান, এক সময় বেলগাছি স্টেশন ছিল খুবই রমরমা। ট্রেন আসার সময় হলে ঘণ্টা বাজতো। স্টেশন মাস্টারও ছিল। মাল বুকিং করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে আসতেও পণ্য। কিন্তু দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি স্টেশনটি বন্ধ থাকায় কোনো কার্যক্রম নেই। তিনি স্টেশনের কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানান। রাজবাড়ী থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে এক লাইন বিশিষ্ট সূর্যনগর রেল স্টেশন। এ স্টেশনের সামনে অনেক বড় বড় গাছ জন্মেছে। রক্ষণাবেক্ষণেরও কেউ নেই।

সূর্যনগর স্টেশন মাস্টার মো. সবুর আলী মোল্লা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে তিনি এখানে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তিনি পাহারাদার হিসাবে কর্মরত আছেন। এখানে কোনো টিকিট বিক্রি হয় না। যখন আমি প্রথম যোগদান করি এই স্টেশনে তখন আমি দুই তিন বছর টিকিট বিক্রি করেছিলাম নিজ দায়িত্বে। এখন আর টিকিট বিক্রি হয় না। স্টেশনটার অবস্থাও খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি পরে। সে সময় ছাতা নিতে রুমের মধ্যে বসে থাকতে হয়। যাত্রীদের বসার জায়গা নেই, বাথরুম নেই। সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয় নাই।

রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, ‘বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে মাস্টার বা অন্য কোনো কার্যক্রম না থাকায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে ট্রেন আসা যাওয়ায় সময়ও লাগছে বেশি।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পাকশী) আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্টেশন বন্ধ থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ এবং সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে এখনই বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে মাস্টার নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত