Ajker Patrika

গুদামে আর পচবে না চাল

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৩৯
গুদামে আর পচবে না চাল

প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বরিশাল বিভাগে খাদ্য সংগ্রহের জন্য ছিল না কোনো উন্নতমানের ব্যবস্থা। এতে প্রতিবছর গুদামেই পচে যেত বিপুল পরিমাণ চাল। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে নানা চড়াই-উতরাই শেষে বরিশালে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতির চাল সংরক্ষণাগার ‘সাইলো’। ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সাইলোতে প্রায় ৪৮ হাজার মেট্রিক টন চাল টানা ৩ বছর সংরক্ষণ করা যাবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে ৭ মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে ৩০ ভাগ। মেয়াদের মধ্যে সাইলো নির্মাণকাজ শেষ হবে কি না, তাতে সংশয় রয়েছে।

নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলা নদীসংলগ্ন ত্রিশ গোডাউনে সাড়ে ৫ একর জমির ওপর এই আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যদিও নানা জটিলতায় সাইলো নির্মাণ প্রকল্প বরিশাল থেকে সরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের কারিগরি সাইট বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত বছরের জুনে নগরের ত্রিশ গোডাউনে সাইলো নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের আগস্টে এটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বরিশালে সাইলো নির্মাণে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে।’

প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান, সাধারণত একটি জেলায় খাদ্য মজুতের ব্যবস্থা রয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন। এই সাইলো নির্মাণ হলে বরিশাল জেলার ৬ জেলার প্রায় ৪৮ হাজার মেট্রিক টন চাল আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যাবে।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, নদীপথে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে খাদ্য আসবে। তাঁরা কনভেয়ার বেল্ট-এর মাধ্যমে সরাসরি ৪০০ মিটার দূর থেকে চাল নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। পরে প্যাকেটজাত করে এমনভাবে রাখা হবে যাতে কয়েক বছর ধরে চালের মান ঠিক থাকে। সাইলোর চাল যেমন মানসম্মত থাকবে, তেমনি এটি নির্মিতও হবে পরিবেশসম্মতভাবে। এতে ইস্পাতের কাঠামোর ওপর ১৬টি বিম থাকবে। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের ত্রিশ গোডাউনে সাইলো নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে এখন কেবল পাথরের বিশাল স্তূপ। সাইলো দৃশ্যমান হয়নি। শ্রমিকেরা জানান, কাজ এখন কিছুটা ধীর গতিতে চলছে। তাদের দাবি দুর্যোগের কারণে গত বছর জুনে কাজ শুরু করলেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, অত্যাধুনিক খাদ্য মজুতের ক্ষেত্রে সাইলো হবে বাড়তি শক্তি। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের পর খেতে ফসল না ওঠা পর্যন্ত এই সাইলোর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা চালানো সম্ভব হবে।

বরিশাল কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগারের ম্যানেজার আয়শা খাতুন বলেন, সাইলো করার জন্য তাঁরা ত্রিশ গোডাউনের অভ্যন্তরে সাড়ে ৫ একর জমি ছেড়ে দিয়েছেন। গত জুনে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে তাদের বরিশাল অঞ্চলে খাদ্য মজুতের আর সংকট থাকবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি ত্রিশ গোডাউনসংলগ্ন পুকুর ভরে সাইলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দাবি তুলেছিল, পুকুর বরাবর সাইলো করলে কীর্তনখোলার তীরের বধ্যভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই দাবির প্রেক্ষিতে সাইলো প্রকল্পটি বরিশাল অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার উপক্রম হয় বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছিল। তবে দীর্ঘ ৫ বছর পর পুকুর থেকে সরিয়ে ত্রিশ গোডাউনের পশ্চিমাংশ বরাবর সোজা কীর্তনখোলা তীর পর্যন্ত এ সাইলো নির্মাণকাজ চলছে। প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরিশাল অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থে কিছুটা সরিয়ে ত্রিশ গোডাউনেই সাইলো নির্মাণ শুরু করেছেন। অবশ্য সাইলো নিয়ে টানাটানিতে ত্রিশ গোডাউনের সেই পুকুর এখন ভরে ডোবায় পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত