তাসলিহা মওলা

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবহারভেদে প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা নিয়মকানুন বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। কারণ সমাবেশ ভবন হলে যে সেটব্যাক, অগ্নিনিরাপত্তার যে বিধিবিধান প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবন থেকে আলাদা। এ ছাড়া বিএনবিসিতেও উল্লেখ করা আছে সুস্পষ্ট নিয়মনীতি ও কোড। তাহলে বারবার কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে?
একটা ভবনে যখন অনেকগুলো খাবারের দোকান একসঙ্গে থাকে, প্রতিটি দোকানের জন্য আলাদা রান্নাঘর তো থাকছেই। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক ভবনগুলো রেস্তোরাঁর এই রান্নাঘরের বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও ভবনমালিক তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে তো পারেনই না, উপরন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী।
বেইলি রোডের ভবনটি জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁ, কাপড় আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আর ভবন থেকে নিচে নামার সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে বেশি কিছু কি প্রয়োজন হয়? ভবনটিতে ছিল কেএফসি, কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন-এর মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দোকান। ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের মতো বহুল প্রচলিত গ্যাজেট শপ আর ইলিয়েনের মতো কাপড়ের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই সেই ভবনে জনসমাগম হতো প্রচুর।
আগুন ভবনের নিচের দিকে আগে লেগেছিল এবং আগুনের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী তা ওপরের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাততলা ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ বলতে ছিল একটিমাত্র সিঁড়ি এবং এর মুখে ছিল ৩৫ কেজি ওজনের একেকটা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি।ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা-ই হোক না কেন, সেখানে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার স্টেয়ার আবশ্যক, যা ভবনটিতে অনুপস্থিত ছিল।
এখন অনেক কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে, কিন্তু ঝরে গেল প্রায় অর্ধশত তাজা প্রাণ। যাঁদের প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল; অর্থাৎ আগুন লাগার পর তাঁরা নিচেও নামতে পারেননি, ওপরেও উঠতে পারেননি, ধোঁয়ায় দম আটকে মারা গেছেন। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু কী হতে পারে? প্রতিটি পলে আপনি বুঝতে পারছেন যে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করছে?
অগ্নিকাণ্ডের চারটি ধাপ সম্পর্কে আগে জেনে নিই। ইনসিপিয়েন্ট স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়, গ্রোথ স্টেজ বা আগুনের ছড়িয়ে পড়ার আগের মুহূর্ত; ডেভেলপড স্টেজ, অর্থাৎ আগুন যখন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিকে স্টেজ বা ধ্বংসপর্যায়, অর্থাৎ আগুন জ্বলতে জ্বলতে সব ধ্বংস করে তবে নেভার পর্যায়ে চলে যায় বা আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গ্রোথ স্টেজ বা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাই যত দ্রুত সম্ভব তা নিভিয়ে ফেলতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে পারা যায়।
কিন্তু যখনই আগুন ডেভেলপড স্টেজে চলে যায় তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেইলি রোডের ভবনটির ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। সেখানে এতগুলো খাবারের দোকান, এত গ্যাস সিলিন্ডার, তেল, দাহ্য বস্তু, কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি ছিল যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে সুবিধাজনক আর কোনো অবস্থাই হতে পারে না। দমকল বাহিনী এসওডি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার) অনুযায়ী, রেসপন্স করলেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অতিদ্রুত। এটা শুষ্ক মৌসুম, সঙ্গে আছে দক্ষিণ দিক থেকে আসা তীব্র বাতাস।
ফায়ার সেফটি ডিজাইন বা অগ্নিনিরাপত্তা নকশার দুটি ধাপ—১. অ্যাকটিভ ডিজাইন বা প্রত্যক্ষ নকশা এবং ২. প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। একটি ডিজাইনের মূল কাজ অগ্নিনির্বাপণ। এরপর আসে প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। এ কাজটি সম্পূর্ণ স্থপতির কাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় মিন্স অব এসকেপ বা নির্গমন পথের বিষয়টি। নির্গমন পথের এ নকশার মূল বিষয় হলো, দরজা, সিঁড়ি সংযোগকারী করিডর বা প্যাসেজ, ধোঁয়া বা আগুনমুক্তবেষ্টিত এলাকা, অগ্নিনির্বাপণ সিঁড়ি, ঝুলন্ত বারান্দা—এসবের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে সড়ক, খোলা ছাদ বা নির্দিষ্ট নিরাপদ আশ্রয়স্থলে প্রবেশ নিশ্চিত করা। লিফট এস্কেলেটর বা তৎসংলগ্ন হাঁটার রাস্তাগুলো এই নির্গমন পথ বা মিন্স অব এসকেপের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এর কারণ হলো, লিফটের শ্যাফট, খোলা সিঁড়ি, সংযোগকৃত করিডরগুলো মূলত অগ্নিকূপ হিসেবে কাজ করে। আগুন এবং এর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনের সব তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমনভাবে নির্গমন পথের নকশা করতে হয় যাতে কোনোভাবেই ভবনের বাসিন্দাদের লিফট লবি, এস্কেলেটর ইত্যাদি পার হতে না হয়।
ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথটি হতে হবে ধোঁয়ামুক্ত ও বাধাহীন। পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেওয়া থাকবে প্রতিটি ফ্লোরে যেন দশ বছরের একটি শিশুও সহজে ফায়ার এক্সিট খুঁজে পায় এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২২ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সব বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোনো ধরনের মালপত্র দিয়ে জরুরি নির্গমন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা বিএনবিসি ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা উভয়েই নির্দেশিত আছে। এসব বিষয় যেমন পেশাজীবী স্থপতি ও প্রকৌশলীদের জানা একান্ত প্রয়োজন, তেমনি কারিকুলামেও গুরুত্বসহকারে সংযুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একেবারে ছাত্রাবস্থা থেকে অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত বিষয়গুলো আত্মস্থ করে ফেললে পেশাগত জীবনে তার প্রয়োগে একধরনের নীতিগত বাধ্যবাধকতা থাকে।
তবে এতসব বিধিমালা সত্ত্বেও আমাদের দেশে প্রায় সব ভবনই শুধু অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। হয় সেই সব ভবনে জরুরি নির্গমন পথ থাকে না, অথবা থাকলেও তা কোনো কারণে বন্ধ থাকে। আমাদের সাধারণ জনগণও জানে না আগুন লাগলে প্রথম কী করতে হবে। পুরো ব্যাপারটাই আসলে একটা সমন্বয়হীনতা ও আইনহীনতার আবর্তে বন্দী হয়ে গেছে। এই যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটে এক ধরনের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপজ্জনক একটি কাজে ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, এর যথাযোগ্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না কেন? এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিএমপির এবং ভবনমালিকের।
ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগীয় সদরের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভবনমালিকদের শাস্তির আওতায় আনাও এখন সময়ের দাবি। আমাদের নীতিমালা আছে, আইন আছে, কৌশলপত্র আছে, তাহলে কেন এর প্রয়োগ নেই? আইনের প্রয়োগ এমনভাবে করতে হবে যেন ভবনমালিক, জমির মালিক, ডেভেলপার, স্থপতি, প্রকৌশলী সবাই আইন মানতে বাধ্য হন। প্রয়োজনে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একজন স্থপতি, একজন প্রকৌশলী নিয়ম মেনে ভবনের নকশা করলেও পরে তার ব্যবহার যদি বদলে যায়, তবে সে দায় কার? শুধু বেইলি রোডের এই ভবনই নয়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণ।
একটি বাণিজ্যিক স্থান যদি এক লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, তবে একটি রেস্তোরাঁর ভাড়া সে ক্ষেত্রে হয় দ্বিগুণ। এসব রেস্তোরাঁয় হয় পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, নয়তো গ্যাস সিলিন্ডার। কোনোভাবেই ভবনগুলো অগ্নিনিরাপদ তো থাকছেই না; বরং একেকটি অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠছে। কারণ এগুলোর সেভাবে নকশাই করা হয়নি। এ যেন বারুদের স্তূপের ওপর বসে জীবনের উদ্যাপন।
একেকটি আবাসিক ও অনাবাসিক হাইরাইজ ভবনের প্রত্যেক মানুষ আছে মৃত্যুঝুঁকিতে। সামান্য একটি আগুনের ছটাতেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন, স্বপ্ন, সংসার। একজন স্থপতি হিসেবে, একজন নগর-পরিকল্পনাবিদ হিসেবে, সর্বোপরি এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই মৃত্যুর দায় আমি নিজেও এড়াতে পারি না। আজ থেকে ভবনসংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীর স্লোগান হোক ‘আমার নকশার ভবনে, প্রাণ যাবে না আগুনে’।
লেখক: স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবহারভেদে প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা নিয়মকানুন বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। কারণ সমাবেশ ভবন হলে যে সেটব্যাক, অগ্নিনিরাপত্তার যে বিধিবিধান প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবন থেকে আলাদা। এ ছাড়া বিএনবিসিতেও উল্লেখ করা আছে সুস্পষ্ট নিয়মনীতি ও কোড। তাহলে বারবার কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে?
একটা ভবনে যখন অনেকগুলো খাবারের দোকান একসঙ্গে থাকে, প্রতিটি দোকানের জন্য আলাদা রান্নাঘর তো থাকছেই। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক ভবনগুলো রেস্তোরাঁর এই রান্নাঘরের বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও ভবনমালিক তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে তো পারেনই না, উপরন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী।
বেইলি রোডের ভবনটি জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁ, কাপড় আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আর ভবন থেকে নিচে নামার সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে বেশি কিছু কি প্রয়োজন হয়? ভবনটিতে ছিল কেএফসি, কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন-এর মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দোকান। ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের মতো বহুল প্রচলিত গ্যাজেট শপ আর ইলিয়েনের মতো কাপড়ের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই সেই ভবনে জনসমাগম হতো প্রচুর।
আগুন ভবনের নিচের দিকে আগে লেগেছিল এবং আগুনের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী তা ওপরের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাততলা ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ বলতে ছিল একটিমাত্র সিঁড়ি এবং এর মুখে ছিল ৩৫ কেজি ওজনের একেকটা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি।ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা-ই হোক না কেন, সেখানে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার স্টেয়ার আবশ্যক, যা ভবনটিতে অনুপস্থিত ছিল।
এখন অনেক কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে, কিন্তু ঝরে গেল প্রায় অর্ধশত তাজা প্রাণ। যাঁদের প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল; অর্থাৎ আগুন লাগার পর তাঁরা নিচেও নামতে পারেননি, ওপরেও উঠতে পারেননি, ধোঁয়ায় দম আটকে মারা গেছেন। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু কী হতে পারে? প্রতিটি পলে আপনি বুঝতে পারছেন যে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করছে?
অগ্নিকাণ্ডের চারটি ধাপ সম্পর্কে আগে জেনে নিই। ইনসিপিয়েন্ট স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়, গ্রোথ স্টেজ বা আগুনের ছড়িয়ে পড়ার আগের মুহূর্ত; ডেভেলপড স্টেজ, অর্থাৎ আগুন যখন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিকে স্টেজ বা ধ্বংসপর্যায়, অর্থাৎ আগুন জ্বলতে জ্বলতে সব ধ্বংস করে তবে নেভার পর্যায়ে চলে যায় বা আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গ্রোথ স্টেজ বা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাই যত দ্রুত সম্ভব তা নিভিয়ে ফেলতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে পারা যায়।
কিন্তু যখনই আগুন ডেভেলপড স্টেজে চলে যায় তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেইলি রোডের ভবনটির ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। সেখানে এতগুলো খাবারের দোকান, এত গ্যাস সিলিন্ডার, তেল, দাহ্য বস্তু, কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি ছিল যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে সুবিধাজনক আর কোনো অবস্থাই হতে পারে না। দমকল বাহিনী এসওডি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার) অনুযায়ী, রেসপন্স করলেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অতিদ্রুত। এটা শুষ্ক মৌসুম, সঙ্গে আছে দক্ষিণ দিক থেকে আসা তীব্র বাতাস।
ফায়ার সেফটি ডিজাইন বা অগ্নিনিরাপত্তা নকশার দুটি ধাপ—১. অ্যাকটিভ ডিজাইন বা প্রত্যক্ষ নকশা এবং ২. প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। একটি ডিজাইনের মূল কাজ অগ্নিনির্বাপণ। এরপর আসে প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। এ কাজটি সম্পূর্ণ স্থপতির কাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় মিন্স অব এসকেপ বা নির্গমন পথের বিষয়টি। নির্গমন পথের এ নকশার মূল বিষয় হলো, দরজা, সিঁড়ি সংযোগকারী করিডর বা প্যাসেজ, ধোঁয়া বা আগুনমুক্তবেষ্টিত এলাকা, অগ্নিনির্বাপণ সিঁড়ি, ঝুলন্ত বারান্দা—এসবের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে সড়ক, খোলা ছাদ বা নির্দিষ্ট নিরাপদ আশ্রয়স্থলে প্রবেশ নিশ্চিত করা। লিফট এস্কেলেটর বা তৎসংলগ্ন হাঁটার রাস্তাগুলো এই নির্গমন পথ বা মিন্স অব এসকেপের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এর কারণ হলো, লিফটের শ্যাফট, খোলা সিঁড়ি, সংযোগকৃত করিডরগুলো মূলত অগ্নিকূপ হিসেবে কাজ করে। আগুন এবং এর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনের সব তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমনভাবে নির্গমন পথের নকশা করতে হয় যাতে কোনোভাবেই ভবনের বাসিন্দাদের লিফট লবি, এস্কেলেটর ইত্যাদি পার হতে না হয়।
ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথটি হতে হবে ধোঁয়ামুক্ত ও বাধাহীন। পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেওয়া থাকবে প্রতিটি ফ্লোরে যেন দশ বছরের একটি শিশুও সহজে ফায়ার এক্সিট খুঁজে পায় এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২২ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সব বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোনো ধরনের মালপত্র দিয়ে জরুরি নির্গমন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা বিএনবিসি ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা উভয়েই নির্দেশিত আছে। এসব বিষয় যেমন পেশাজীবী স্থপতি ও প্রকৌশলীদের জানা একান্ত প্রয়োজন, তেমনি কারিকুলামেও গুরুত্বসহকারে সংযুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একেবারে ছাত্রাবস্থা থেকে অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত বিষয়গুলো আত্মস্থ করে ফেললে পেশাগত জীবনে তার প্রয়োগে একধরনের নীতিগত বাধ্যবাধকতা থাকে।
তবে এতসব বিধিমালা সত্ত্বেও আমাদের দেশে প্রায় সব ভবনই শুধু অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। হয় সেই সব ভবনে জরুরি নির্গমন পথ থাকে না, অথবা থাকলেও তা কোনো কারণে বন্ধ থাকে। আমাদের সাধারণ জনগণও জানে না আগুন লাগলে প্রথম কী করতে হবে। পুরো ব্যাপারটাই আসলে একটা সমন্বয়হীনতা ও আইনহীনতার আবর্তে বন্দী হয়ে গেছে। এই যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটে এক ধরনের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপজ্জনক একটি কাজে ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, এর যথাযোগ্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না কেন? এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিএমপির এবং ভবনমালিকের।
ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগীয় সদরের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভবনমালিকদের শাস্তির আওতায় আনাও এখন সময়ের দাবি। আমাদের নীতিমালা আছে, আইন আছে, কৌশলপত্র আছে, তাহলে কেন এর প্রয়োগ নেই? আইনের প্রয়োগ এমনভাবে করতে হবে যেন ভবনমালিক, জমির মালিক, ডেভেলপার, স্থপতি, প্রকৌশলী সবাই আইন মানতে বাধ্য হন। প্রয়োজনে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একজন স্থপতি, একজন প্রকৌশলী নিয়ম মেনে ভবনের নকশা করলেও পরে তার ব্যবহার যদি বদলে যায়, তবে সে দায় কার? শুধু বেইলি রোডের এই ভবনই নয়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণ।
একটি বাণিজ্যিক স্থান যদি এক লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, তবে একটি রেস্তোরাঁর ভাড়া সে ক্ষেত্রে হয় দ্বিগুণ। এসব রেস্তোরাঁয় হয় পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, নয়তো গ্যাস সিলিন্ডার। কোনোভাবেই ভবনগুলো অগ্নিনিরাপদ তো থাকছেই না; বরং একেকটি অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠছে। কারণ এগুলোর সেভাবে নকশাই করা হয়নি। এ যেন বারুদের স্তূপের ওপর বসে জীবনের উদ্যাপন।
একেকটি আবাসিক ও অনাবাসিক হাইরাইজ ভবনের প্রত্যেক মানুষ আছে মৃত্যুঝুঁকিতে। সামান্য একটি আগুনের ছটাতেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন, স্বপ্ন, সংসার। একজন স্থপতি হিসেবে, একজন নগর-পরিকল্পনাবিদ হিসেবে, সর্বোপরি এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই মৃত্যুর দায় আমি নিজেও এড়াতে পারি না। আজ থেকে ভবনসংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীর স্লোগান হোক ‘আমার নকশার ভবনে, প্রাণ যাবে না আগুনে’।
লেখক: স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ
তাসলিহা মওলা

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবহারভেদে প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা নিয়মকানুন বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। কারণ সমাবেশ ভবন হলে যে সেটব্যাক, অগ্নিনিরাপত্তার যে বিধিবিধান প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবন থেকে আলাদা। এ ছাড়া বিএনবিসিতেও উল্লেখ করা আছে সুস্পষ্ট নিয়মনীতি ও কোড। তাহলে বারবার কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে?
একটা ভবনে যখন অনেকগুলো খাবারের দোকান একসঙ্গে থাকে, প্রতিটি দোকানের জন্য আলাদা রান্নাঘর তো থাকছেই। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক ভবনগুলো রেস্তোরাঁর এই রান্নাঘরের বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও ভবনমালিক তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে তো পারেনই না, উপরন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী।
বেইলি রোডের ভবনটি জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁ, কাপড় আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আর ভবন থেকে নিচে নামার সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে বেশি কিছু কি প্রয়োজন হয়? ভবনটিতে ছিল কেএফসি, কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন-এর মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দোকান। ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের মতো বহুল প্রচলিত গ্যাজেট শপ আর ইলিয়েনের মতো কাপড়ের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই সেই ভবনে জনসমাগম হতো প্রচুর।
আগুন ভবনের নিচের দিকে আগে লেগেছিল এবং আগুনের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী তা ওপরের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাততলা ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ বলতে ছিল একটিমাত্র সিঁড়ি এবং এর মুখে ছিল ৩৫ কেজি ওজনের একেকটা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি।ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা-ই হোক না কেন, সেখানে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার স্টেয়ার আবশ্যক, যা ভবনটিতে অনুপস্থিত ছিল।
এখন অনেক কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে, কিন্তু ঝরে গেল প্রায় অর্ধশত তাজা প্রাণ। যাঁদের প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল; অর্থাৎ আগুন লাগার পর তাঁরা নিচেও নামতে পারেননি, ওপরেও উঠতে পারেননি, ধোঁয়ায় দম আটকে মারা গেছেন। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু কী হতে পারে? প্রতিটি পলে আপনি বুঝতে পারছেন যে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করছে?
অগ্নিকাণ্ডের চারটি ধাপ সম্পর্কে আগে জেনে নিই। ইনসিপিয়েন্ট স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়, গ্রোথ স্টেজ বা আগুনের ছড়িয়ে পড়ার আগের মুহূর্ত; ডেভেলপড স্টেজ, অর্থাৎ আগুন যখন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিকে স্টেজ বা ধ্বংসপর্যায়, অর্থাৎ আগুন জ্বলতে জ্বলতে সব ধ্বংস করে তবে নেভার পর্যায়ে চলে যায় বা আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গ্রোথ স্টেজ বা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাই যত দ্রুত সম্ভব তা নিভিয়ে ফেলতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে পারা যায়।
কিন্তু যখনই আগুন ডেভেলপড স্টেজে চলে যায় তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেইলি রোডের ভবনটির ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। সেখানে এতগুলো খাবারের দোকান, এত গ্যাস সিলিন্ডার, তেল, দাহ্য বস্তু, কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি ছিল যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে সুবিধাজনক আর কোনো অবস্থাই হতে পারে না। দমকল বাহিনী এসওডি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার) অনুযায়ী, রেসপন্স করলেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অতিদ্রুত। এটা শুষ্ক মৌসুম, সঙ্গে আছে দক্ষিণ দিক থেকে আসা তীব্র বাতাস।
ফায়ার সেফটি ডিজাইন বা অগ্নিনিরাপত্তা নকশার দুটি ধাপ—১. অ্যাকটিভ ডিজাইন বা প্রত্যক্ষ নকশা এবং ২. প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। একটি ডিজাইনের মূল কাজ অগ্নিনির্বাপণ। এরপর আসে প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। এ কাজটি সম্পূর্ণ স্থপতির কাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় মিন্স অব এসকেপ বা নির্গমন পথের বিষয়টি। নির্গমন পথের এ নকশার মূল বিষয় হলো, দরজা, সিঁড়ি সংযোগকারী করিডর বা প্যাসেজ, ধোঁয়া বা আগুনমুক্তবেষ্টিত এলাকা, অগ্নিনির্বাপণ সিঁড়ি, ঝুলন্ত বারান্দা—এসবের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে সড়ক, খোলা ছাদ বা নির্দিষ্ট নিরাপদ আশ্রয়স্থলে প্রবেশ নিশ্চিত করা। লিফট এস্কেলেটর বা তৎসংলগ্ন হাঁটার রাস্তাগুলো এই নির্গমন পথ বা মিন্স অব এসকেপের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এর কারণ হলো, লিফটের শ্যাফট, খোলা সিঁড়ি, সংযোগকৃত করিডরগুলো মূলত অগ্নিকূপ হিসেবে কাজ করে। আগুন এবং এর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনের সব তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমনভাবে নির্গমন পথের নকশা করতে হয় যাতে কোনোভাবেই ভবনের বাসিন্দাদের লিফট লবি, এস্কেলেটর ইত্যাদি পার হতে না হয়।
ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথটি হতে হবে ধোঁয়ামুক্ত ও বাধাহীন। পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেওয়া থাকবে প্রতিটি ফ্লোরে যেন দশ বছরের একটি শিশুও সহজে ফায়ার এক্সিট খুঁজে পায় এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২২ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সব বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোনো ধরনের মালপত্র দিয়ে জরুরি নির্গমন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা বিএনবিসি ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা উভয়েই নির্দেশিত আছে। এসব বিষয় যেমন পেশাজীবী স্থপতি ও প্রকৌশলীদের জানা একান্ত প্রয়োজন, তেমনি কারিকুলামেও গুরুত্বসহকারে সংযুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একেবারে ছাত্রাবস্থা থেকে অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত বিষয়গুলো আত্মস্থ করে ফেললে পেশাগত জীবনে তার প্রয়োগে একধরনের নীতিগত বাধ্যবাধকতা থাকে।
তবে এতসব বিধিমালা সত্ত্বেও আমাদের দেশে প্রায় সব ভবনই শুধু অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। হয় সেই সব ভবনে জরুরি নির্গমন পথ থাকে না, অথবা থাকলেও তা কোনো কারণে বন্ধ থাকে। আমাদের সাধারণ জনগণও জানে না আগুন লাগলে প্রথম কী করতে হবে। পুরো ব্যাপারটাই আসলে একটা সমন্বয়হীনতা ও আইনহীনতার আবর্তে বন্দী হয়ে গেছে। এই যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটে এক ধরনের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপজ্জনক একটি কাজে ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, এর যথাযোগ্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না কেন? এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিএমপির এবং ভবনমালিকের।
ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগীয় সদরের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভবনমালিকদের শাস্তির আওতায় আনাও এখন সময়ের দাবি। আমাদের নীতিমালা আছে, আইন আছে, কৌশলপত্র আছে, তাহলে কেন এর প্রয়োগ নেই? আইনের প্রয়োগ এমনভাবে করতে হবে যেন ভবনমালিক, জমির মালিক, ডেভেলপার, স্থপতি, প্রকৌশলী সবাই আইন মানতে বাধ্য হন। প্রয়োজনে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একজন স্থপতি, একজন প্রকৌশলী নিয়ম মেনে ভবনের নকশা করলেও পরে তার ব্যবহার যদি বদলে যায়, তবে সে দায় কার? শুধু বেইলি রোডের এই ভবনই নয়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণ।
একটি বাণিজ্যিক স্থান যদি এক লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, তবে একটি রেস্তোরাঁর ভাড়া সে ক্ষেত্রে হয় দ্বিগুণ। এসব রেস্তোরাঁয় হয় পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, নয়তো গ্যাস সিলিন্ডার। কোনোভাবেই ভবনগুলো অগ্নিনিরাপদ তো থাকছেই না; বরং একেকটি অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠছে। কারণ এগুলোর সেভাবে নকশাই করা হয়নি। এ যেন বারুদের স্তূপের ওপর বসে জীবনের উদ্যাপন।
একেকটি আবাসিক ও অনাবাসিক হাইরাইজ ভবনের প্রত্যেক মানুষ আছে মৃত্যুঝুঁকিতে। সামান্য একটি আগুনের ছটাতেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন, স্বপ্ন, সংসার। একজন স্থপতি হিসেবে, একজন নগর-পরিকল্পনাবিদ হিসেবে, সর্বোপরি এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই মৃত্যুর দায় আমি নিজেও এড়াতে পারি না। আজ থেকে ভবনসংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীর স্লোগান হোক ‘আমার নকশার ভবনে, প্রাণ যাবে না আগুনে’।
লেখক: স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবহারভেদে প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা নিয়মকানুন বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। কারণ সমাবেশ ভবন হলে যে সেটব্যাক, অগ্নিনিরাপত্তার যে বিধিবিধান প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবন থেকে আলাদা। এ ছাড়া বিএনবিসিতেও উল্লেখ করা আছে সুস্পষ্ট নিয়মনীতি ও কোড। তাহলে বারবার কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে?
একটা ভবনে যখন অনেকগুলো খাবারের দোকান একসঙ্গে থাকে, প্রতিটি দোকানের জন্য আলাদা রান্নাঘর তো থাকছেই। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক ভবনগুলো রেস্তোরাঁর এই রান্নাঘরের বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও ভবনমালিক তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে তো পারেনই না, উপরন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী।
বেইলি রোডের ভবনটি জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁ, কাপড় আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আর ভবন থেকে নিচে নামার সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে বেশি কিছু কি প্রয়োজন হয়? ভবনটিতে ছিল কেএফসি, কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন-এর মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দোকান। ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের মতো বহুল প্রচলিত গ্যাজেট শপ আর ইলিয়েনের মতো কাপড়ের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই সেই ভবনে জনসমাগম হতো প্রচুর।
আগুন ভবনের নিচের দিকে আগে লেগেছিল এবং আগুনের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী তা ওপরের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাততলা ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ বলতে ছিল একটিমাত্র সিঁড়ি এবং এর মুখে ছিল ৩৫ কেজি ওজনের একেকটা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি।ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা-ই হোক না কেন, সেখানে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার স্টেয়ার আবশ্যক, যা ভবনটিতে অনুপস্থিত ছিল।
এখন অনেক কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে, কিন্তু ঝরে গেল প্রায় অর্ধশত তাজা প্রাণ। যাঁদের প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল; অর্থাৎ আগুন লাগার পর তাঁরা নিচেও নামতে পারেননি, ওপরেও উঠতে পারেননি, ধোঁয়ায় দম আটকে মারা গেছেন। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু কী হতে পারে? প্রতিটি পলে আপনি বুঝতে পারছেন যে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করছে?
অগ্নিকাণ্ডের চারটি ধাপ সম্পর্কে আগে জেনে নিই। ইনসিপিয়েন্ট স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়, গ্রোথ স্টেজ বা আগুনের ছড়িয়ে পড়ার আগের মুহূর্ত; ডেভেলপড স্টেজ, অর্থাৎ আগুন যখন পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিকে স্টেজ বা ধ্বংসপর্যায়, অর্থাৎ আগুন জ্বলতে জ্বলতে সব ধ্বংস করে তবে নেভার পর্যায়ে চলে যায় বা আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গ্রোথ স্টেজ বা ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাই যত দ্রুত সম্ভব তা নিভিয়ে ফেলতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে পারা যায়।
কিন্তু যখনই আগুন ডেভেলপড স্টেজে চলে যায় তা নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে। বেইলি রোডের ভবনটির ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। সেখানে এতগুলো খাবারের দোকান, এত গ্যাস সিলিন্ডার, তেল, দাহ্য বস্তু, কাপড়ের দোকান, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি ছিল যে আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে সুবিধাজনক আর কোনো অবস্থাই হতে পারে না। দমকল বাহিনী এসওডি (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অন ডিজাস্টার) অনুযায়ী, রেসপন্স করলেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে অতিদ্রুত। এটা শুষ্ক মৌসুম, সঙ্গে আছে দক্ষিণ দিক থেকে আসা তীব্র বাতাস।
ফায়ার সেফটি ডিজাইন বা অগ্নিনিরাপত্তা নকশার দুটি ধাপ—১. অ্যাকটিভ ডিজাইন বা প্রত্যক্ষ নকশা এবং ২. প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। একটি ডিজাইনের মূল কাজ অগ্নিনির্বাপণ। এরপর আসে প্যাসিভ ডিজাইন বা পরোক্ষ নকশা। এ কাজটি সম্পূর্ণ স্থপতির কাজ।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় মিন্স অব এসকেপ বা নির্গমন পথের বিষয়টি। নির্গমন পথের এ নকশার মূল বিষয় হলো, দরজা, সিঁড়ি সংযোগকারী করিডর বা প্যাসেজ, ধোঁয়া বা আগুনমুক্তবেষ্টিত এলাকা, অগ্নিনির্বাপণ সিঁড়ি, ঝুলন্ত বারান্দা—এসবের মাধ্যমে ন্যূনতম সময়ে সড়ক, খোলা ছাদ বা নির্দিষ্ট নিরাপদ আশ্রয়স্থলে প্রবেশ নিশ্চিত করা। লিফট এস্কেলেটর বা তৎসংলগ্ন হাঁটার রাস্তাগুলো এই নির্গমন পথ বা মিন্স অব এসকেপের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
এর কারণ হলো, লিফটের শ্যাফট, খোলা সিঁড়ি, সংযোগকৃত করিডরগুলো মূলত অগ্নিকূপ হিসেবে কাজ করে। আগুন এবং এর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনের সব তলায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই এমনভাবে নির্গমন পথের নকশা করতে হয় যাতে কোনোভাবেই ভবনের বাসিন্দাদের লিফট লবি, এস্কেলেটর ইত্যাদি পার হতে না হয়।
ফায়ার এক্সিট বা জরুরি নির্গমন পথটি হতে হবে ধোঁয়ামুক্ত ও বাধাহীন। পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেওয়া থাকবে প্রতিটি ফ্লোরে যেন দশ বছরের একটি শিশুও সহজে ফায়ার এক্সিট খুঁজে পায় এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২২ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮-এ ‘অগ্নিনিরাপত্তা’ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং সব বৃহদায়তন প্রকল্পের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কোনো ধরনের মালপত্র দিয়ে জরুরি নির্গমন পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা বিএনবিসি ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা উভয়েই নির্দেশিত আছে। এসব বিষয় যেমন পেশাজীবী স্থপতি ও প্রকৌশলীদের জানা একান্ত প্রয়োজন, তেমনি কারিকুলামেও গুরুত্বসহকারে সংযুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একেবারে ছাত্রাবস্থা থেকে অগ্নিনিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণসংক্রান্ত বিষয়গুলো আত্মস্থ করে ফেললে পেশাগত জীবনে তার প্রয়োগে একধরনের নীতিগত বাধ্যবাধকতা থাকে।
তবে এতসব বিধিমালা সত্ত্বেও আমাদের দেশে প্রায় সব ভবনই শুধু অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। হয় সেই সব ভবনে জরুরি নির্গমন পথ থাকে না, অথবা থাকলেও তা কোনো কারণে বন্ধ থাকে। আমাদের সাধারণ জনগণও জানে না আগুন লাগলে প্রথম কী করতে হবে। পুরো ব্যাপারটাই আসলে একটা সমন্বয়হীনতা ও আইনহীনতার আবর্তে বন্দী হয়ে গেছে। এই যে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটে এক ধরনের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বিপজ্জনক একটি কাজে ভবনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, এর যথাযোগ্য পর্যবেক্ষণ হচ্ছে না কেন? এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিএমপির এবং ভবনমালিকের।
ঢাকার বাইরের অন্যান্য বিভাগীয় সদরের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ভবনমালিকদের শাস্তির আওতায় আনাও এখন সময়ের দাবি। আমাদের নীতিমালা আছে, আইন আছে, কৌশলপত্র আছে, তাহলে কেন এর প্রয়োগ নেই? আইনের প্রয়োগ এমনভাবে করতে হবে যেন ভবনমালিক, জমির মালিক, ডেভেলপার, স্থপতি, প্রকৌশলী সবাই আইন মানতে বাধ্য হন। প্রয়োজনে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
একজন স্থপতি, একজন প্রকৌশলী নিয়ম মেনে ভবনের নকশা করলেও পরে তার ব্যবহার যদি বদলে যায়, তবে সে দায় কার? শুধু বেইলি রোডের এই ভবনই নয়, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলোতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর পেছনে রয়েছে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারণ।
একটি বাণিজ্যিক স্থান যদি এক লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়, তবে একটি রেস্তোরাঁর ভাড়া সে ক্ষেত্রে হয় দ্বিগুণ। এসব রেস্তোরাঁয় হয় পাইপলাইনের গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, নয়তো গ্যাস সিলিন্ডার। কোনোভাবেই ভবনগুলো অগ্নিনিরাপদ তো থাকছেই না; বরং একেকটি অগ্নিকুণ্ড হয়ে উঠছে। কারণ এগুলোর সেভাবে নকশাই করা হয়নি। এ যেন বারুদের স্তূপের ওপর বসে জীবনের উদ্যাপন।
একেকটি আবাসিক ও অনাবাসিক হাইরাইজ ভবনের প্রত্যেক মানুষ আছে মৃত্যুঝুঁকিতে। সামান্য একটি আগুনের ছটাতেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন, স্বপ্ন, সংসার। একজন স্থপতি হিসেবে, একজন নগর-পরিকল্পনাবিদ হিসেবে, সর্বোপরি এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই মৃত্যুর দায় আমি নিজেও এড়াতে পারি না। আজ থেকে ভবনসংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবীর স্লোগান হোক ‘আমার নকশার ভবনে, প্রাণ যাবে না আগুনে’।
লেখক: স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়।
০৩ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়।
০৩ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫