মামুনুর রশীদ

বাবু বলে কাম কাম
সাহেব বলে ধরি আন
সরকার বলে লিবু পিঠের চাম
এ বাবুরাম ফাঁকি দিয়া
চালাইলি আসাম।
এ গান কার লেখা, কার সুর করা, আমি জানি না। তবে চা-বাগানের শ্রমিকদের নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং কষ্টের একটি চিত্র এর মধ্য দিয়ে ভেসে ওঠে। ধূর্ততা ও লুণ্ঠন করে ইংরেজদের এক প্রতারণার শিকার ভারতবর্ষের দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর যখন সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেল, তখনই তাঁদের সামনে তুলে ধরা হলো একটা প্রলোভন। বলা হলো, আসামের বাগানে ‘গাছ হিলায়গা তো পয়সা মিলেগা’। বেঁচে থাকার তাগিদে ইংরেজদের ছলনায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শনে এবং আড়কাঠিদের (দালাল) দৌরাত্ম্যে জনমানবহীন, দুর্গম জঙ্গল আর ভয়ংকর সব জন্তুজানোয়ারে ভরা আসামের জঙ্গলে নিয়ে আসা হলো এই অসহায় গরিব কৃষকদের। আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁরা এসেছিলেন বিহার, ওডিশা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বাঁকুড়া থেকে।
এর মধ্যে তাঁরা যে বিদ্রোহ করেননি, তা নয়, কখনো বিদ্রোহ ব্যক্তি পর্যায়ে হতো। যার ফলে নিপীড়ন বেড়ে যেত অনেক গুণ। সুরমা উপত্যকায় ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী এই সব চা-শ্রমিক সব ধরনের নিপীড়ন সহ্য করে, বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে, রেললাইন বসিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে বিভিন্ন চা-বাগানের জন্ম দেন।
এর মধ্যে একটা বড় আন্দোলন ঘটেছিল ১৯২১ সালে। পণ্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত এবং পণ্ডিত সেওশরনের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘মুল্লুকে চল অভিযান’, অর্থাৎ নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নেমে আসেন মুল্লুকে চল অভিযানে। শত শত মাইল পথ হেঁটে শ্রমিকেরা ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে এসে পৌঁছান। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নির্দেশে এই আন্দোলন চলতে থাকে।
কপর্দকহীন শ্রমিকদের কাছে কোনো পয়সা নেই। তাই জাহাজ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জাহাজে নিতে চাইল না। এদিকে মালিকশ্রেণি ও ব্রিটিশ সরকার ভয়ংকর গোর্খা বাহিনী দিয়ে শত শত শ্রমিককে হত্যা করে, সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।
এরপর কয়েক যুগ কেটে গেছে। ভারতবর্ষের মানুষেরা চা-পানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ চায়ের রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইংরেজ মালিকদের সঙ্গে এই সময়ে কিছু দেশীয় বড়লোকেরাও চা-বাগানের মালিকানায় চলে আসেন। আসাম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকায় সিলেটে চা-বাগানের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশভাগের পরেও চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। নামমাত্র মজুরিতে শুধু প্রাণিজগতের নিয়মে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ছিল চা-শ্রমিকদের। কিন্তু অন্যদিকে দেশের রপ্তানি আয়ের দিক থেকে পাটের পরেই ছিল চায়ের স্থান। কিন্তু চা-শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়নে বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনো ব্যবস্থা আজও হয়নি। মালিক কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের থাকার জন্য ঘর দেওয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ ঘর অস্বাস্থ্যকর এবং বসবাসের অযোগ্য। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে ৭ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রের মূলনীতি চারটি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান করা। ১৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক ব্যবস্থা করা হবে। ১৫ (খ)-তে যুক্তিসংগত মজুরির বিপরীতে কর্মসংস্থানের অধিকারও দেওয়ার কথা বলা আছে। এত সব ধারা সংবিধানের পাতায়ই কি শুধু থাকবে?
চা-শ্রমিকদের জন্য ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ কোন যুক্তিতে হতে পারে? একদিকে চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, অন্যদিকে চা-বাগানের মালিকদের এবং তাঁদের নিয়োজিত ব্যবস্থাপকদের জন্য সুরম্য বাংলো, বছরে একবার বিলেতযাত্রা এবং সব ধরনের জীবনের বিনোদনসহ নিশ্চয়তা বিধান করা। এই স্বল্প মজুরির চা-শ্রমিকেরা অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। জীবনের সব হতাশা নিয়ে তাঁরা আকণ্ঠ মদ্যপান করে সবকিছু ভুলতে চেয়েছেন। অপুষ্টির দেহে এই আচরণ তাঁদের মৃত্যুকেই ঘনিয়ে আনছে। চা-বাগানের মালিকেরা অবশ্য তাঁদের এসব নেশার জোগান দিয়ে আসছেন বিনা মূল্যে নয়, কখনো উচ্চমূল্যে। দিনের পর দিন টানাটানির সংসারে তাঁরা দ্রুতই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং মহাজনদের কাছে তাঁদের সর্বস্ব তুলে দেন। এর মধ্যে একটা সংগ্রামী অংশও বেড়ে উঠতে থাকে। যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
এবারে চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকে ভাঙার জন্য মালিকপক্ষ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আড়কাঠিদের নিয়োগ করেছে। শ্রমিকদের বিভক্ত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ রচনা করছে। বিভিন্ন চা-বাগানকে মালিকেরা টি রিসোর্ট হিসেবে ঘোষণা করছে এবং প্রায়ই চা-বাগানের আশপাশে বৃক্ষনিধন শুরু করেছে। চা-শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য যে স্কুল করার কথা ছিল, সেটিও তারা ঠিকমতো করেনি। এক-দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চালানোর চেষ্টা করছে। চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতাল করার কথা ছিল, সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। কোনো কোনো জায়গায় সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না। খাসিয়াদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে পান চাষ। এই পান গাছগুলোর মধ্যেই লতিয়ে বেড়ে ওঠে। যদি গাছ না থাকে তাহলে পানের অস্তিত্বও থাকবে না। বিপুল পরিমাণ খাসিয়া জনগোষ্ঠী এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে।
ফিরে আসি চা-শ্রমিকদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে। এই শ্রমিকেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি ছিল ভিন্ন। সেটাও ছিল তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা বড় বাধা এবং মালিকপক্ষ ও ইংরেজ সরকার সেটাকে নিজেদের স্বার্থে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা সেসব বাধাকে অতিক্রম করছেন, চা-শ্রমিকেরা ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন এবং লড়াই করার ক্ষমতা তাঁরা অর্জন করেছেন। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা এবং সরকারের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টি-বোর্ড যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। জেলা প্রশাসকদের দিয়ে একটা দর-কষাকষির চেষ্টা করছে।
জানা গেল, এখন ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪৫ টাকা। ৩০০ টাকার দাবি থেকে ১৪৫ টাকা কত দূর! যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মজুরি বোর্ড জীবনযাপনের মান বিবেচনা করেই ১৭ হাজার ৩৬২ টাকা নির্ধারণ করেছে, জাতীয়ভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলো ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে, সেখানে বর্তমানে চা-শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। লড়াই-সংগ্রাম করার পর যদি মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা, তাহলে চা-শ্রমিকদের মানুষ না বলে প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন এবং যত দিন পর্যন্ত নির্ধারণ না হয় তত দিন ১২০ টাকা মজুরিই থাকবে। এটিও আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা।
জেলা প্রশাসক মহোদয় সংবিধানের ধারাগুলো কি পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে সংবিধানের প্রতি আপনার আনুগত্য স্বীকার করুন। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী অতিক্রম করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা যে দাবি করেছেন, তা অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের চেয়ে অত্যন্ত কম। তাঁদের এই ন্যায়সংগত দাবি শুধু মজুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং মানবিক জীবনযাপনের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে।
বাঙালিরা চা-প্রেমী। সকালে আমরা এক কাপ ধূমায়িত চা সামনে রেখে দিন শুরু করি এবং বারবার চা-পানে আমাদের ইন্দ্রিয় সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের জন্যই এ দেশে নানান ধরনের চা উৎপাদন করছেন চা-শ্রমিকেরা। সেই চা-শ্রমিকদের বঞ্চনা আমাদের গায়েও এসে লাগুক। আমরা ভাবতে চাই না এই চা শ্রমিকের রক্তে ধোয়া।

বাবু বলে কাম কাম
সাহেব বলে ধরি আন
সরকার বলে লিবু পিঠের চাম
এ বাবুরাম ফাঁকি দিয়া
চালাইলি আসাম।
এ গান কার লেখা, কার সুর করা, আমি জানি না। তবে চা-বাগানের শ্রমিকদের নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং কষ্টের একটি চিত্র এর মধ্য দিয়ে ভেসে ওঠে। ধূর্ততা ও লুণ্ঠন করে ইংরেজদের এক প্রতারণার শিকার ভারতবর্ষের দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর যখন সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেল, তখনই তাঁদের সামনে তুলে ধরা হলো একটা প্রলোভন। বলা হলো, আসামের বাগানে ‘গাছ হিলায়গা তো পয়সা মিলেগা’। বেঁচে থাকার তাগিদে ইংরেজদের ছলনায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শনে এবং আড়কাঠিদের (দালাল) দৌরাত্ম্যে জনমানবহীন, দুর্গম জঙ্গল আর ভয়ংকর সব জন্তুজানোয়ারে ভরা আসামের জঙ্গলে নিয়ে আসা হলো এই অসহায় গরিব কৃষকদের। আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁরা এসেছিলেন বিহার, ওডিশা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বাঁকুড়া থেকে।
এর মধ্যে তাঁরা যে বিদ্রোহ করেননি, তা নয়, কখনো বিদ্রোহ ব্যক্তি পর্যায়ে হতো। যার ফলে নিপীড়ন বেড়ে যেত অনেক গুণ। সুরমা উপত্যকায় ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী এই সব চা-শ্রমিক সব ধরনের নিপীড়ন সহ্য করে, বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে, রেললাইন বসিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে বিভিন্ন চা-বাগানের জন্ম দেন।
এর মধ্যে একটা বড় আন্দোলন ঘটেছিল ১৯২১ সালে। পণ্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত এবং পণ্ডিত সেওশরনের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘মুল্লুকে চল অভিযান’, অর্থাৎ নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নেমে আসেন মুল্লুকে চল অভিযানে। শত শত মাইল পথ হেঁটে শ্রমিকেরা ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে এসে পৌঁছান। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নির্দেশে এই আন্দোলন চলতে থাকে।
কপর্দকহীন শ্রমিকদের কাছে কোনো পয়সা নেই। তাই জাহাজ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জাহাজে নিতে চাইল না। এদিকে মালিকশ্রেণি ও ব্রিটিশ সরকার ভয়ংকর গোর্খা বাহিনী দিয়ে শত শত শ্রমিককে হত্যা করে, সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।
এরপর কয়েক যুগ কেটে গেছে। ভারতবর্ষের মানুষেরা চা-পানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ চায়ের রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইংরেজ মালিকদের সঙ্গে এই সময়ে কিছু দেশীয় বড়লোকেরাও চা-বাগানের মালিকানায় চলে আসেন। আসাম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকায় সিলেটে চা-বাগানের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশভাগের পরেও চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। নামমাত্র মজুরিতে শুধু প্রাণিজগতের নিয়মে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ছিল চা-শ্রমিকদের। কিন্তু অন্যদিকে দেশের রপ্তানি আয়ের দিক থেকে পাটের পরেই ছিল চায়ের স্থান। কিন্তু চা-শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়নে বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনো ব্যবস্থা আজও হয়নি। মালিক কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের থাকার জন্য ঘর দেওয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ ঘর অস্বাস্থ্যকর এবং বসবাসের অযোগ্য। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে ৭ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রের মূলনীতি চারটি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান করা। ১৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক ব্যবস্থা করা হবে। ১৫ (খ)-তে যুক্তিসংগত মজুরির বিপরীতে কর্মসংস্থানের অধিকারও দেওয়ার কথা বলা আছে। এত সব ধারা সংবিধানের পাতায়ই কি শুধু থাকবে?
চা-শ্রমিকদের জন্য ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ কোন যুক্তিতে হতে পারে? একদিকে চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, অন্যদিকে চা-বাগানের মালিকদের এবং তাঁদের নিয়োজিত ব্যবস্থাপকদের জন্য সুরম্য বাংলো, বছরে একবার বিলেতযাত্রা এবং সব ধরনের জীবনের বিনোদনসহ নিশ্চয়তা বিধান করা। এই স্বল্প মজুরির চা-শ্রমিকেরা অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। জীবনের সব হতাশা নিয়ে তাঁরা আকণ্ঠ মদ্যপান করে সবকিছু ভুলতে চেয়েছেন। অপুষ্টির দেহে এই আচরণ তাঁদের মৃত্যুকেই ঘনিয়ে আনছে। চা-বাগানের মালিকেরা অবশ্য তাঁদের এসব নেশার জোগান দিয়ে আসছেন বিনা মূল্যে নয়, কখনো উচ্চমূল্যে। দিনের পর দিন টানাটানির সংসারে তাঁরা দ্রুতই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং মহাজনদের কাছে তাঁদের সর্বস্ব তুলে দেন। এর মধ্যে একটা সংগ্রামী অংশও বেড়ে উঠতে থাকে। যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
এবারে চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকে ভাঙার জন্য মালিকপক্ষ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আড়কাঠিদের নিয়োগ করেছে। শ্রমিকদের বিভক্ত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ রচনা করছে। বিভিন্ন চা-বাগানকে মালিকেরা টি রিসোর্ট হিসেবে ঘোষণা করছে এবং প্রায়ই চা-বাগানের আশপাশে বৃক্ষনিধন শুরু করেছে। চা-শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য যে স্কুল করার কথা ছিল, সেটিও তারা ঠিকমতো করেনি। এক-দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চালানোর চেষ্টা করছে। চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতাল করার কথা ছিল, সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। কোনো কোনো জায়গায় সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না। খাসিয়াদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে পান চাষ। এই পান গাছগুলোর মধ্যেই লতিয়ে বেড়ে ওঠে। যদি গাছ না থাকে তাহলে পানের অস্তিত্বও থাকবে না। বিপুল পরিমাণ খাসিয়া জনগোষ্ঠী এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে।
ফিরে আসি চা-শ্রমিকদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে। এই শ্রমিকেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি ছিল ভিন্ন। সেটাও ছিল তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা বড় বাধা এবং মালিকপক্ষ ও ইংরেজ সরকার সেটাকে নিজেদের স্বার্থে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা সেসব বাধাকে অতিক্রম করছেন, চা-শ্রমিকেরা ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন এবং লড়াই করার ক্ষমতা তাঁরা অর্জন করেছেন। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা এবং সরকারের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টি-বোর্ড যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। জেলা প্রশাসকদের দিয়ে একটা দর-কষাকষির চেষ্টা করছে।
জানা গেল, এখন ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪৫ টাকা। ৩০০ টাকার দাবি থেকে ১৪৫ টাকা কত দূর! যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মজুরি বোর্ড জীবনযাপনের মান বিবেচনা করেই ১৭ হাজার ৩৬২ টাকা নির্ধারণ করেছে, জাতীয়ভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলো ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে, সেখানে বর্তমানে চা-শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। লড়াই-সংগ্রাম করার পর যদি মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা, তাহলে চা-শ্রমিকদের মানুষ না বলে প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন এবং যত দিন পর্যন্ত নির্ধারণ না হয় তত দিন ১২০ টাকা মজুরিই থাকবে। এটিও আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা।
জেলা প্রশাসক মহোদয় সংবিধানের ধারাগুলো কি পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে সংবিধানের প্রতি আপনার আনুগত্য স্বীকার করুন। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী অতিক্রম করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা যে দাবি করেছেন, তা অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের চেয়ে অত্যন্ত কম। তাঁদের এই ন্যায়সংগত দাবি শুধু মজুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং মানবিক জীবনযাপনের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে।
বাঙালিরা চা-প্রেমী। সকালে আমরা এক কাপ ধূমায়িত চা সামনে রেখে দিন শুরু করি এবং বারবার চা-পানে আমাদের ইন্দ্রিয় সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের জন্যই এ দেশে নানান ধরনের চা উৎপাদন করছেন চা-শ্রমিকেরা। সেই চা-শ্রমিকদের বঞ্চনা আমাদের গায়েও এসে লাগুক। আমরা ভাবতে চাই না এই চা শ্রমিকের রক্তে ধোয়া।
মামুনুর রশীদ

বাবু বলে কাম কাম
সাহেব বলে ধরি আন
সরকার বলে লিবু পিঠের চাম
এ বাবুরাম ফাঁকি দিয়া
চালাইলি আসাম।
এ গান কার লেখা, কার সুর করা, আমি জানি না। তবে চা-বাগানের শ্রমিকদের নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং কষ্টের একটি চিত্র এর মধ্য দিয়ে ভেসে ওঠে। ধূর্ততা ও লুণ্ঠন করে ইংরেজদের এক প্রতারণার শিকার ভারতবর্ষের দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর যখন সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেল, তখনই তাঁদের সামনে তুলে ধরা হলো একটা প্রলোভন। বলা হলো, আসামের বাগানে ‘গাছ হিলায়গা তো পয়সা মিলেগা’। বেঁচে থাকার তাগিদে ইংরেজদের ছলনায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শনে এবং আড়কাঠিদের (দালাল) দৌরাত্ম্যে জনমানবহীন, দুর্গম জঙ্গল আর ভয়ংকর সব জন্তুজানোয়ারে ভরা আসামের জঙ্গলে নিয়ে আসা হলো এই অসহায় গরিব কৃষকদের। আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁরা এসেছিলেন বিহার, ওডিশা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বাঁকুড়া থেকে।
এর মধ্যে তাঁরা যে বিদ্রোহ করেননি, তা নয়, কখনো বিদ্রোহ ব্যক্তি পর্যায়ে হতো। যার ফলে নিপীড়ন বেড়ে যেত অনেক গুণ। সুরমা উপত্যকায় ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী এই সব চা-শ্রমিক সব ধরনের নিপীড়ন সহ্য করে, বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে, রেললাইন বসিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে বিভিন্ন চা-বাগানের জন্ম দেন।
এর মধ্যে একটা বড় আন্দোলন ঘটেছিল ১৯২১ সালে। পণ্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত এবং পণ্ডিত সেওশরনের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘মুল্লুকে চল অভিযান’, অর্থাৎ নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নেমে আসেন মুল্লুকে চল অভিযানে। শত শত মাইল পথ হেঁটে শ্রমিকেরা ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে এসে পৌঁছান। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নির্দেশে এই আন্দোলন চলতে থাকে।
কপর্দকহীন শ্রমিকদের কাছে কোনো পয়সা নেই। তাই জাহাজ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জাহাজে নিতে চাইল না। এদিকে মালিকশ্রেণি ও ব্রিটিশ সরকার ভয়ংকর গোর্খা বাহিনী দিয়ে শত শত শ্রমিককে হত্যা করে, সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।
এরপর কয়েক যুগ কেটে গেছে। ভারতবর্ষের মানুষেরা চা-পানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ চায়ের রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইংরেজ মালিকদের সঙ্গে এই সময়ে কিছু দেশীয় বড়লোকেরাও চা-বাগানের মালিকানায় চলে আসেন। আসাম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকায় সিলেটে চা-বাগানের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশভাগের পরেও চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। নামমাত্র মজুরিতে শুধু প্রাণিজগতের নিয়মে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ছিল চা-শ্রমিকদের। কিন্তু অন্যদিকে দেশের রপ্তানি আয়ের দিক থেকে পাটের পরেই ছিল চায়ের স্থান। কিন্তু চা-শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়নে বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনো ব্যবস্থা আজও হয়নি। মালিক কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের থাকার জন্য ঘর দেওয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ ঘর অস্বাস্থ্যকর এবং বসবাসের অযোগ্য। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে ৭ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রের মূলনীতি চারটি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান করা। ১৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক ব্যবস্থা করা হবে। ১৫ (খ)-তে যুক্তিসংগত মজুরির বিপরীতে কর্মসংস্থানের অধিকারও দেওয়ার কথা বলা আছে। এত সব ধারা সংবিধানের পাতায়ই কি শুধু থাকবে?
চা-শ্রমিকদের জন্য ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ কোন যুক্তিতে হতে পারে? একদিকে চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, অন্যদিকে চা-বাগানের মালিকদের এবং তাঁদের নিয়োজিত ব্যবস্থাপকদের জন্য সুরম্য বাংলো, বছরে একবার বিলেতযাত্রা এবং সব ধরনের জীবনের বিনোদনসহ নিশ্চয়তা বিধান করা। এই স্বল্প মজুরির চা-শ্রমিকেরা অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। জীবনের সব হতাশা নিয়ে তাঁরা আকণ্ঠ মদ্যপান করে সবকিছু ভুলতে চেয়েছেন। অপুষ্টির দেহে এই আচরণ তাঁদের মৃত্যুকেই ঘনিয়ে আনছে। চা-বাগানের মালিকেরা অবশ্য তাঁদের এসব নেশার জোগান দিয়ে আসছেন বিনা মূল্যে নয়, কখনো উচ্চমূল্যে। দিনের পর দিন টানাটানির সংসারে তাঁরা দ্রুতই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং মহাজনদের কাছে তাঁদের সর্বস্ব তুলে দেন। এর মধ্যে একটা সংগ্রামী অংশও বেড়ে উঠতে থাকে। যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
এবারে চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকে ভাঙার জন্য মালিকপক্ষ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আড়কাঠিদের নিয়োগ করেছে। শ্রমিকদের বিভক্ত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ রচনা করছে। বিভিন্ন চা-বাগানকে মালিকেরা টি রিসোর্ট হিসেবে ঘোষণা করছে এবং প্রায়ই চা-বাগানের আশপাশে বৃক্ষনিধন শুরু করেছে। চা-শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য যে স্কুল করার কথা ছিল, সেটিও তারা ঠিকমতো করেনি। এক-দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চালানোর চেষ্টা করছে। চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতাল করার কথা ছিল, সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। কোনো কোনো জায়গায় সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না। খাসিয়াদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে পান চাষ। এই পান গাছগুলোর মধ্যেই লতিয়ে বেড়ে ওঠে। যদি গাছ না থাকে তাহলে পানের অস্তিত্বও থাকবে না। বিপুল পরিমাণ খাসিয়া জনগোষ্ঠী এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে।
ফিরে আসি চা-শ্রমিকদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে। এই শ্রমিকেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি ছিল ভিন্ন। সেটাও ছিল তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা বড় বাধা এবং মালিকপক্ষ ও ইংরেজ সরকার সেটাকে নিজেদের স্বার্থে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা সেসব বাধাকে অতিক্রম করছেন, চা-শ্রমিকেরা ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন এবং লড়াই করার ক্ষমতা তাঁরা অর্জন করেছেন। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা এবং সরকারের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টি-বোর্ড যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। জেলা প্রশাসকদের দিয়ে একটা দর-কষাকষির চেষ্টা করছে।
জানা গেল, এখন ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪৫ টাকা। ৩০০ টাকার দাবি থেকে ১৪৫ টাকা কত দূর! যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মজুরি বোর্ড জীবনযাপনের মান বিবেচনা করেই ১৭ হাজার ৩৬২ টাকা নির্ধারণ করেছে, জাতীয়ভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলো ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে, সেখানে বর্তমানে চা-শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। লড়াই-সংগ্রাম করার পর যদি মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা, তাহলে চা-শ্রমিকদের মানুষ না বলে প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন এবং যত দিন পর্যন্ত নির্ধারণ না হয় তত দিন ১২০ টাকা মজুরিই থাকবে। এটিও আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা।
জেলা প্রশাসক মহোদয় সংবিধানের ধারাগুলো কি পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে সংবিধানের প্রতি আপনার আনুগত্য স্বীকার করুন। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী অতিক্রম করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা যে দাবি করেছেন, তা অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের চেয়ে অত্যন্ত কম। তাঁদের এই ন্যায়সংগত দাবি শুধু মজুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং মানবিক জীবনযাপনের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে।
বাঙালিরা চা-প্রেমী। সকালে আমরা এক কাপ ধূমায়িত চা সামনে রেখে দিন শুরু করি এবং বারবার চা-পানে আমাদের ইন্দ্রিয় সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের জন্যই এ দেশে নানান ধরনের চা উৎপাদন করছেন চা-শ্রমিকেরা। সেই চা-শ্রমিকদের বঞ্চনা আমাদের গায়েও এসে লাগুক। আমরা ভাবতে চাই না এই চা শ্রমিকের রক্তে ধোয়া।

বাবু বলে কাম কাম
সাহেব বলে ধরি আন
সরকার বলে লিবু পিঠের চাম
এ বাবুরাম ফাঁকি দিয়া
চালাইলি আসাম।
এ গান কার লেখা, কার সুর করা, আমি জানি না। তবে চা-বাগানের শ্রমিকদের নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং কষ্টের একটি চিত্র এর মধ্য দিয়ে ভেসে ওঠে। ধূর্ততা ও লুণ্ঠন করে ইংরেজদের এক প্রতারণার শিকার ভারতবর্ষের দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর যখন সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেল, তখনই তাঁদের সামনে তুলে ধরা হলো একটা প্রলোভন। বলা হলো, আসামের বাগানে ‘গাছ হিলায়গা তো পয়সা মিলেগা’। বেঁচে থাকার তাগিদে ইংরেজদের ছলনায়, রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শনে এবং আড়কাঠিদের (দালাল) দৌরাত্ম্যে জনমানবহীন, দুর্গম জঙ্গল আর ভয়ংকর সব জন্তুজানোয়ারে ভরা আসামের জঙ্গলে নিয়ে আসা হলো এই অসহায় গরিব কৃষকদের। আজীবন কাজের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাঁরা এসেছিলেন বিহার, ওডিশা, মাদ্রাজ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও বাঁকুড়া থেকে।
এর মধ্যে তাঁরা যে বিদ্রোহ করেননি, তা নয়, কখনো বিদ্রোহ ব্যক্তি পর্যায়ে হতো। যার ফলে নিপীড়ন বেড়ে যেত অনেক গুণ। সুরমা উপত্যকায় ১৮৫৪ সালে মালনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয়। প্রায় এক শতাব্দী এই সব চা-শ্রমিক সব ধরনের নিপীড়ন সহ্য করে, বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে, রেললাইন বসিয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে বিভিন্ন চা-বাগানের জন্ম দেন।
এর মধ্যে একটা বড় আন্দোলন ঘটেছিল ১৯২১ সালে। পণ্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত এবং পণ্ডিত সেওশরনের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘মুল্লুকে চল অভিযান’, অর্থাৎ নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার চা-শ্রমিক অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়ে নেমে আসেন মুল্লুকে চল অভিযানে। শত শত মাইল পথ হেঁটে শ্রমিকেরা ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের মেঘনাঘাটে এসে পৌঁছান। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নির্দেশে এই আন্দোলন চলতে থাকে।
কপর্দকহীন শ্রমিকদের কাছে কোনো পয়সা নেই। তাই জাহাজ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জাহাজে নিতে চাইল না। এদিকে মালিকশ্রেণি ও ব্রিটিশ সরকার ভয়ংকর গোর্খা বাহিনী দিয়ে শত শত শ্রমিককে হত্যা করে, সেই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়।
এরপর কয়েক যুগ কেটে গেছে। ভারতবর্ষের মানুষেরা চা-পানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ চায়ের রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইংরেজ মালিকদের সঙ্গে এই সময়ে কিছু দেশীয় বড়লোকেরাও চা-বাগানের মালিকানায় চলে আসেন। আসাম, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি এবং বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকায় সিলেটে চা-বাগানের এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশভাগের পরেও চা-শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। নামমাত্র মজুরিতে শুধু প্রাণিজগতের নিয়মে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ছিল চা-শ্রমিকদের। কিন্তু অন্যদিকে দেশের রপ্তানি আয়ের দিক থেকে পাটের পরেই ছিল চায়ের স্থান। কিন্তু চা-শ্রমিকদের জীবনের মান উন্নয়নে বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনো ব্যবস্থা আজও হয়নি। মালিক কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের থাকার জন্য ঘর দেওয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ ঘর অস্বাস্থ্যকর এবং বসবাসের অযোগ্য। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে ৭ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রের মূলনীতি চারটি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতি মানুষকে এবং জনগণের অংশগ্রহণকে সকল প্রকার শোষণ থেকে মুক্তিদান করা। ১৫ (ক) ধারায় বলা হয়েছে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক ব্যবস্থা করা হবে। ১৫ (খ)-তে যুক্তিসংগত মজুরির বিপরীতে কর্মসংস্থানের অধিকারও দেওয়ার কথা বলা আছে। এত সব ধারা সংবিধানের পাতায়ই কি শুধু থাকবে?
চা-শ্রমিকদের জন্য ১২০ টাকা মজুরি নির্ধারণ কোন যুক্তিতে হতে পারে? একদিকে চা-শ্রমিকদের মানবেতর জীবন, অন্যদিকে চা-বাগানের মালিকদের এবং তাঁদের নিয়োজিত ব্যবস্থাপকদের জন্য সুরম্য বাংলো, বছরে একবার বিলেতযাত্রা এবং সব ধরনের জীবনের বিনোদনসহ নিশ্চয়তা বিধান করা। এই স্বল্প মজুরির চা-শ্রমিকেরা অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন। জীবনের সব হতাশা নিয়ে তাঁরা আকণ্ঠ মদ্যপান করে সবকিছু ভুলতে চেয়েছেন। অপুষ্টির দেহে এই আচরণ তাঁদের মৃত্যুকেই ঘনিয়ে আনছে। চা-বাগানের মালিকেরা অবশ্য তাঁদের এসব নেশার জোগান দিয়ে আসছেন বিনা মূল্যে নয়, কখনো উচ্চমূল্যে। দিনের পর দিন টানাটানির সংসারে তাঁরা দ্রুতই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং মহাজনদের কাছে তাঁদের সর্বস্ব তুলে দেন। এর মধ্যে একটা সংগ্রামী অংশও বেড়ে উঠতে থাকে। যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
এবারে চা-শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকে ভাঙার জন্য মালিকপক্ষ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং আড়কাঠিদের নিয়োগ করেছে। শ্রমিকদের বিভক্ত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের ফাঁদ রচনা করছে। বিভিন্ন চা-বাগানকে মালিকেরা টি রিসোর্ট হিসেবে ঘোষণা করছে এবং প্রায়ই চা-বাগানের আশপাশে বৃক্ষনিধন শুরু করেছে। চা-শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য যে স্কুল করার কথা ছিল, সেটিও তারা ঠিকমতো করেনি। এক-দুজন শিক্ষক দিয়ে কোনোমতে চালানোর চেষ্টা করছে। চিকিৎসার জন্য যেসব হাসপাতাল করার কথা ছিল, সেই প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি। কোনো কোনো জায়গায় সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা-বাগানের জায়গা বিক্রি করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না। খাসিয়াদের প্রধান জীবিকা হচ্ছে পান চাষ। এই পান গাছগুলোর মধ্যেই লতিয়ে বেড়ে ওঠে। যদি গাছ না থাকে তাহলে পানের অস্তিত্বও থাকবে না। বিপুল পরিমাণ খাসিয়া জনগোষ্ঠী এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে।
ফিরে আসি চা-শ্রমিকদের বাঁচা-মরার প্রশ্নে। এই শ্রমিকেরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিলেন। তাঁদের ভাষা-সংস্কৃতি ছিল ভিন্ন। সেটাও ছিল তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা বড় বাধা এবং মালিকপক্ষ ও ইংরেজ সরকার সেটাকে নিজেদের স্বার্থে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা সেসব বাধাকে অতিক্রম করছেন, চা-শ্রমিকেরা ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন এবং লড়াই করার ক্ষমতা তাঁরা অর্জন করেছেন। মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা এবং সরকারের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টি-বোর্ড যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। জেলা প্রশাসকদের দিয়ে একটা দর-কষাকষির চেষ্টা করছে।
জানা গেল, এখন ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪৫ টাকা। ৩০০ টাকার দাবি থেকে ১৪৫ টাকা কত দূর! যেখানে সরকারি কর্মচারীদের মজুরি বোর্ড জীবনযাপনের মান বিবেচনা করেই ১৭ হাজার ৩৬২ টাকা নির্ধারণ করেছে, জাতীয়ভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলো ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছে, সেখানে বর্তমানে চা-শ্রমিকদের মজুরি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। লড়াই-সংগ্রাম করার পর যদি মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা, তাহলে চা-শ্রমিকদের মানুষ না বলে প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা যায়। জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছেন, শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন এবং যত দিন পর্যন্ত নির্ধারণ না হয় তত দিন ১২০ টাকা মজুরিই থাকবে। এটিও আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার এক ষড়যন্ত্র এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করা।
জেলা প্রশাসক মহোদয় সংবিধানের ধারাগুলো কি পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে সংবিধানের প্রতি আপনার আনুগত্য স্বীকার করুন। ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকে সুদীর্ঘ দুই শতাব্দী অতিক্রম করে চা-বাগানের শ্রমিকেরা যে দাবি করেছেন, তা অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের চেয়ে অত্যন্ত কম। তাঁদের এই ন্যায়সংগত দাবি শুধু মজুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তাঁদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং মানবিক জীবনযাপনের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে ও নিশ্চিত করতে হবে।
বাঙালিরা চা-প্রেমী। সকালে আমরা এক কাপ ধূমায়িত চা সামনে রেখে দিন শুরু করি এবং বারবার চা-পানে আমাদের ইন্দ্রিয় সজীব হয়ে ওঠে। আমাদের জন্যই এ দেশে নানান ধরনের চা উৎপাদন করছেন চা-শ্রমিকেরা। সেই চা-শ্রমিকদের বঞ্চনা আমাদের গায়েও এসে লাগুক। আমরা ভাবতে চাই না এই চা শ্রমিকের রক্তে ধোয়া।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে আদিবাসী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না।
২৫ আগস্ট ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে আদিবাসী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না।
২৫ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে আদিবাসী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না।
২৫ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে চা-বাগানগুলোর চারদিক ঘিরে আছে আদিবাসী খাসিয়াদের বসবাস। তাদের গাছপালা কেটে ন্যাশনাল পার্কের নাম করে, জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করে, তাদেরও নিপীড়ন করা হচ্ছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাছ কাটা শেষ হয় না।
২৫ আগস্ট ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫