Ajker Patrika

অপেক্ষার পরও খালি হাত

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩৫
অপেক্ষার পরও খালি হাত

‘এটে মিসছায়ানা (একটু) দাঁড়ে থাকলে বোঝার পাইমেন এত তাড়াতাড়ি তেল শ্যাষ হইল কেমন করি। একজনে তেলের বোতল নিয়া যাওছে তিনটা-চাইরটা করি। আর হামরা লাইনোত দাঁড়েও তেল পাইনো না। সউগ বেলে শ্যাষ। খালি হাতে বাড়ি যাওছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে কথাগুলো বলছিলেন বুড়িরহাট গ্রামের বিউটি বেগম। তিনি দুপুর ১২টার দিকে সেখানে টিসিবির ট্রাক থেকে স্বল্প মূল্যে তেল, ডাল ও চিনি কিনতে এসেছিলেন।

কলেজ মাঠে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছিলেন ডিলার মোজাফফর হোসেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় তেল শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতেই গাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন লোকজন। তখন শুধু চিনি ও ডাল বিক্রি চলছিল। সেগুলোও ৪টার দিকে শেষ হয়ে যায়। অনেকে অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরে যান।

বুড়িরহাটের বিউটির সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে এসেছিলেন একই গ্রামের গৃহবধূ হাসনা বানু। তিনি জানান, সারা দিন রোদে পুড়ে লাইনে দাঁড়িয়েও তেল পাননি। গাড়ির কাছে যেতেই জানলেন তেল শেষ। কম দামে এই পণ্য নিতে এসে গাড়ি ভাড়ার ২০ টাকাই জলে গেল। সঙ্গে দিনটাও মাটি হলো বলে আফসোস প্রকাশ করেন তিনি।

টিসিবির ডিলার সূত্রে জানা গেছে, প্রতি লিটার তেল ১১০, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ ও মসুর ডাল ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার দরের চেয়ে যা যথাক্রমে ৬০, ২৫ ও ৫৫ টাকা কম। প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে দুই লিটার তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও দুই কেজি চিনি প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি করা হয়।

মাঠে কথা হয় জদ্দিপাড়া গ্রামের মমেজা বেগমের সঙ্গে। পাঁচ সদস্যের সংসার তাঁর। অন্যের খেতে সরিষা তোলার কাজে গিয়েছিলেন সকালে। টিসিবির গাড়ি আসার খবর পেয়ে দুপুর ১২টায় তেল, চিনি ও ডাল কিনতে আসেন। বিকেল সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও তিনি কিছু পাননি।

আক্ষেপ করে মমেজা বলেন, ‘আইজ কপালোত মাইর আছে। তেল, চিনি কিছুই পানু না। কামের টাকাও দিবার নেয়। বাড়িত স্বামীক কী জবাব দেইম। সরকার কত কোনা তেল, চিনি দেয়? লাইনের মানুষে পায় না।’

ট্রাক আসার আগেই কুর্শা কাজীপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আমেনা বেগম তেল, চিনি ও ডাল নিতে আসেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘সকালে আসছি, ঘরের কাম থুইয়া। দিন গেল, তেল পাইলাম না।’

পণ্য না পাওয়া অন্তত ২০ জন অভিযোগ করেন, ডিলার পরিচিত লোকজনকে আগে তেল, চিনি ও ডাল দিয়েছেন। প্যাকেজ ভেঙে অনেককে শুধু তেলও দিয়েছেন। একেকজনে তিন থেকে চারটি তেলের বোতল নিয়ে গেছেন। তাই দ্রুত তেল শেষ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ডিলার মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘তেল ৬০০ লিটার, ডাল ৫০০ কেজি ও চিনি ৫০০ কেজি বরাদ্দ পেয়েছি। ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সব শ্রেণি-পেশার লোকজন টিসিবির পণ্য নিতে ভিড় করছেন, যা আগে হতো না। দেড় শতাধিক মানুষ ফিরে গেছেন। আমার কাছে যা ছিল তা শেষ। কোথা থেকে তাঁদের তেল-চিনি এনে দেব? সারা দিন বিতরণ করলেও শেষ হবে না।’

একজনে একাধিকবার তেল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার বলেন, ‘এখানে শত শত লোক, কাকে চিনে রাখব। হয়তো এমন লোক আছেন, যাঁরা একবার নিয়ে সেগুলো রেখে এসে ফের নেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত