Ajker Patrika

অভিযুক্তরা আবার ফিরে এলেন, মামলাও হয়নি

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
অভিযুক্তরা আবার ফিরে এলেন, মামলাও হয়নি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত অডিও কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আবার বহাল হলেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার দেড় বছর পর আবার কাজে ফিরলেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যে উচ্চ আদালতে অভিযুক্তদের করা রিটের শুনানিতে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত হলে কর্মক্ষেত্রে ফের যোগ দেন তাঁরা। অন্যদিকে অডিও কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে একটি মামলা করার জন্য সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাও বাস্তবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা না নেওয়া ও মামলা করতে প্রশাসনের অনীহার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দুই দফা চিঠি দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে দেওয়া চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত পাঁচটি ফোনালাপ গত বছরের জানুয়ারিতে ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া পাঁচটি ফোনালাপ ছিল উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের তখনকার ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকার রবীন ও হিসাব নিয়ামক দপ্তরের কর্মচারী আহমদ হোসেনের সঙ্গে দুজন নিয়োগপ্রার্থীর। এর মধ্যে একটি ফোনালাপে প্রভাষক পদের এক প্রার্থীর সঙ্গে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলতে শোনা যায়। অন্য একটি ফোনালাপে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর শীর্ষ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতেই উপাচার্যের টাকার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন কর্মচারী আহমদ হোসেন।

এ ঘটনা তদন্তে একই বছরের ৫ মার্চ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি চার মাস পর প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে খালেদ মিছবাহুল মোকার রবীনকে পদাবনতি (ডিমোশন) এবং কর্মচারী আহমদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা, মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে মামলা করাসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় প্রতিবেদনটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে দুই কর্মচারীর শাস্তির বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে সুপারিশের জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি গত ২৩ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 
দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দিয়েছি তিন মাস হতে চলল। এখন উপাচার্য এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’

দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও গোপনীয় শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফজলুল করিম বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের প্রমাণ পেলে দুটো তদন্ত কমিটি হয়। দ্বিতীয় কমিটির সুপারিশের আলোকে শাস্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি আসে। 
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর আড়াই মাসেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। মূল হোতাদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে গত শুক্র ও শনিবার কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে গত ৯ জুলাই তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘সিরাজ ভাই (দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক) প্রতিবেদন দিচ্ছেন না বলে আমরা কিছু করতে পারছি না। প্রতিবেদন দিলে সঙ্গে সঙ্গে মামলা দেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। সেটি আগামী সিন্ডিকেটে যাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত