Ajker Patrika

মহামারি, যুদ্ধ, এবার বাজেট

ফারুক মেহেদী ও আবু সাইম, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ১১: ৫২
মহামারি, যুদ্ধ, এবার বাজেট

তিন বছরের করোনা মহামারি। এতে লন্ডভন্ড বাইরের বিশ্ব, বাংলাদেশ। বেঁচে থাকার সঙ্গে অন্ন-বস্ত্র সংস্থানের লড়াইটাও কঠিন হয়ে যায় বহু মানুষের জন্য। মাজা সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরুর আগেই বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। বিশ্ব মানচিত্রের এক কোণে রাশিয়া-ইউক্রেনের সেই যুদ্ধে আবার টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাইরের মতো বাংলাদেশেও হু হু করে বেড়ে গেল জিনিসপত্রের দাম। এর মধ্যে পড়ে মানুষ যখন খাবি খাচ্ছে, তখন ঘোষণা করা হলো নতুন বাজেট।

সুন্দর কথামালায় জড়িয়ে রূপকথার গল্পের মতো ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাস্তবায়ন যা-ই হোক; টাকার অঙ্কে প্রতিবছর নিজের রেকর্ড ভাঙা স্বপ্নবিলাসী অর্থমন্ত্রী ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশে মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়ার গল্প শোনালেন। অথচ দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখন নিত্য দিনযাপনের রসদ জোগাতে প্রায় দিশেহারা। তিনি এমন সময়ে দারিদ্র্য ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা শোনালেন, যখন একটি বিরাট শ্রেণি দারিদ্র্যের বৃত্ত ভাঙতে পারছে না। তিনি এমন সময়ে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার আশা দেখাচ্ছেন, যখন তা ১০ শতাংশের কাছাকাছি। কর-জিডিপি অনুপাত ২০ শতাংশে উন্নীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, অথচ তা এখনো সাড়ে ৭ শতাংশের ঘরে আটকে রয়েছে। তিনি বলেছেন, সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্যসেবা। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। আর গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ।

অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় এভাবেই মানুষকে স্বপ্নের ঘোরে ডোবালেন। অথচ রাত পোহালেই তাঁরা মুখোমুখি হবেন নতুন বাস্তবতায়; যখন জানবেন তাঁদের কারও আয় না থাকলেও শুধু করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর থাকলেই দিতে হবে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর।

অর্থমন্ত্রী ঠিকই স্বপ্ন দেখালেন, অথচ নির্বাচনের বছরেও হাঁটলেন অজনপ্রিয় পথে। বড় বাজেটের খরচ মেটানোর জন্য তিনি আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে এমনভাবে করের জাল বিছালেন, ভোক্তাদের বাজারে গেলেই এর তাপ অনুভব করতে হতে পারে। তাঁরা জানবেন, টিস্যু পেপার থেকে থালাবাসন, কলম থেকে মোবাইল ফোন কিংবা ইট, সিমেন্টসহ প্রতিদিনের ব্যবহার্য অসংখ্য পণ্যে কর, ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে; যার ফলে সীমিত আয়ের মধ্যেও তাদের ঘাড়ে পড়বে বাড়তি খরচের চাপ।

বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এটা করদাতার জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও পরোক্ষ করের খড়্গ করদাতাকে এর চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলতে পারে।

বাজেট বক্তৃতা থেকে জানা যায়, গৃহস্থালিতে ব্যবহার করা হয় এমন পণ্যসহ টিফিন বক্স, পানির বোতল, অ্যালুমিনিয়ামের থালাবাসন, রান্নাঘরের সরঞ্জামে বাড়তি ভ্যাট বসানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ খায় এমন খেজুরের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। চশমা ও রোদচশমার শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, পেপার টাওয়েলে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। দেশে উৎপাদিত সিলিন্ডারের কাঁচামালে শুল্ক, সিগারেট, তরল নিকোটিন, বাসমতী চালের ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। আর উড়োজাহাজে ভ্রমণ করলে দিতে হবে বাড়তি কর। নতুন অর্থবছরে এসব খাত থেকে রাজস্ব আয়ে মরিয়া থাকবে এনবিআর, যার সরাসরি ভুক্তভোগী হবে ভোক্তারা।

নতুন অর্থবছরে নতুন করদাতার খোঁজে ঘরে ঘরে যাবে বেসরকারি খাতের এজেন্ট। এ বিধান করা হয়েছে বাজেটে। এজেন্ট যে কর ঠিক করে দেবে, সেটিই দিতে হবে করদাতাকে। করদাতা যেটুকু কর দেবেন, তার থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন পাবে এজেন্টরা। এ ধরনের বিধান কর খাতে হয়রানির জন্ম দেবে এবং ঘুষ ও দুর্নীতির সুযোগ বাড়াবে বলে এরই মধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

ভ্যাট আদায় বাড়াতে নতুন অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডির ব্যবস্থাপনা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ভ্যাট আদায়েও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ হলো। বিশেষজ্ঞরা এ বিধানেরও সমালোচনা করেছেন। এতেও দুর্নীতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাজেট বক্তৃতা থেকে জানা যায়, সাধ্য নেই, তবু নতুন অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করেছেন; যার পুরোটা সংস্থান করতে পারবেন না। ডলার-সংকট, টাকার দরপতন, রপ্তানি-রেমিট্যান্সে মন্দাভাব, আমদানি কড়াকড়িতে উৎপাদনে ধীরগতি, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতার মতো অসংখ্য অর্থনৈতিক সমস্যা যখন ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমিয়ে দিচ্ছে, তিনি তখন করের বোঝা বাড়িয়ে, ঘরে ঘরে কর আদায়ের এজেন্ট পাঠিয়ে, ইএফডির মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের কাজ বেসরকারি খাত দিয়ে বাড়াতে চান। আর এই করে ভর করে সংস্থান করতে চান পাঁচ লাখ কোটি টাকা। বেশির ভাগটাই এনবিআরের কর রাজস্ব থেকে নিতে চান। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা আর শুল্ক থেকে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা আদায় করবেন বলে মনে করেন। এত বিপুল করের পুরোটা আদায় হলেও এতে কুলাবে না।

বাজেটের পুরো খরচের জন্য তাঁর আরও ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। এটা তিনি ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও বিদেশি উৎস থেকে ধারকর্জ করে জোগাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। চলতি বাজেটেই ঠিকমতো রাজস্ব আয় না হওয়ায় বিপুল অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে ব্যাংক থেকে। আসছে অর্থবছরে রাজস্ব আয় না বাড়লে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়বে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়ে কর্মসংস্থান ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা।

নতুন অর্থবছরে খরচে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হলেও ২ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ১ হাজার ৩০০ প্রকল্প রয়েছে। যতই বলা হোক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না, তারপরও এসব প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে। আর নতুন-পুরোনো মেগা প্রকল্প তো রয়েছেই। এসব প্রকল্পের জন্য বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে নতুন অর্থবছরেও ঋণ নেওয়া হবে। ঋণের কিস্তি ও সুদ বাবদ বিপুল টাকা ব্যয় হবে আসছে অর্থবছরে।

আর্থিক সংকটের মধ্যে আইএমএফ থেকে শর্ত মেনে ঋণ নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হবে। অথচ অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, চাইলেও শিগগির ভর্তুকি তুলে দিতে পারবেন না। এ জন্য সময় লাগবে। তাই নতুন অর্থবছরে বরং ভর্তুকি বেড়েছে। মোট ভর্তুকি পরিকল্পনা করা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির এ টাকার বড় অঙ্কই সামাজিক নিরাপত্তা, সার, বিদ্যুৎ, জ্বালানিতে খরচ করা হবে। অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভর্তুকি কমানোর জন্য এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া সময়ে সময়ে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের একটি ফর্মুলার পথনকশা তৈরি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এ বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ নতুন পদ্ধতিতে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা যাবে। লোকসান কমাতে ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বন্ধ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় করোনা-উত্তর পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আসছে অর্থবছর অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জের হবে বলে সতর্কবাণী প্রকাশ করেছেন। তারপরও তিনি নতুন অর্থবছরে উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ব্যাপারে উচ্চাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, আগামী অর্থবছরেও সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবেন। নতুন অর্থবছরে অর্থনীতিতে অস্থিরতা থাকবে উল্লেখ করেও অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে ধরে রাখার পক্ষে আত্মবিশ্বাসী। ডলার-সংকটের কারণে অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে রিজার্ভ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

নতুন অর্থবছর থেকে সুদের হার ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হবে, খেলাপি ঋণ কমানো হবে। আর ব্যাংকের ঋণমানেও উন্নতির ব্যাপারে আশার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। অথচ এ ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আর অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণার দুদিন আগেই বিশ্বখ্যাত ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস বাংলাদেশের ব্যাংকের ঋণমান কমিয়েছে। এর অর্থ হলো ব্যাংক খাত দুর্বল ভিত্তির মধ্যে রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী দেশে গরিব থাকবে না বললেও বাজেটে গরিব মানুষ, বেকার তরুণের কর্মসংস্থানের জন্য সুস্পষ্ট রূপরেখার অনুপস্থিতি চোখে পড়েছে। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজকে প্রস্তুত করতে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছেন। অথচ ১৭ কোটি মানুষের দেশে জনসংখ্যার একটি বড় অংশই এই শ্রেণির।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাহিদার তুলনায় এ বরাদ্দ খুবই নগণ্য। বাজেটে গরিব মানুষের জন্য বিশেষ কিছু না থাকলেও এবারের বাজেটে ধনীর জন্য ঠিকই সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ধনীদের কাছ থেকে নিট পরিসম্পদের বিপরীতে সারচার্জ আদায় করা হয়। এত দিন ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত নিট পরিসম্পদ থাকলে করমুক্ত সুবিধা ছিল। এটা ১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর ফলে ধনীর পরিসম্পদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত