Ajker Patrika

উৎসবে হতাশার সুর

সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
উৎসবে হতাশার সুর

দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলার ১৫ দিন চলে গেল। কিন্তু মেলার আবেদন যেন কোনোভাবেই কমছে না।

মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মুখে সেই পুরোনো হাসি, চোখমুখে আনন্দ। নতুন-পুরোনো বইয়ের প্রতি আগ্রহের কমতি নেই তাঁদের। তাঁরা ঘুরছেন, ছবি তুলছেন, গল্প করছেন, গান গাইছেন, বই পড়ছেন, কিনছেন। কিন্তু এত আয়োজনের মধ্যেও সচেতন পাঠকদের ভ্রু কিছুটা কুঞ্চিত। নীতিমালার দোহাই দিয়ে মেলা থেকে বই প্রত্যাহার করার ব্যাপারটি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

মেলা শুরুর আগেই বাংলা একাডেমি বইমেলা ‘নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ আখ্যা দিয়েছিল তিনটি বইকে। বই তিনটি হলো ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, জিয়া হাশানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ এবং ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’। বই তিনটির কারণে আদর্শ প্রকাশনীকে মেলায় স্টলও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এবার।

গত মঙ্গলবার মেলা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তরুণ লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতির আত্মজৈবনিক বই ‘জন্ম ও যোনির ইতিহাস’। বইটি পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে নালন্দা প্রকাশনীর স্টলে বিক্রি হচ্ছিল। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সেটি মেলা থেকে প্রত্যাহার করে নেয় বাংলা একাডেমি।

বইমেলার টাস্কফোর্সের সভাপতি অসীম কুমার দে জানিয়েছেন, ‘এই বইয়ে বইমেলার নীতিমালা পরিপন্থী বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তিগত আক্রমণ ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য রয়েছে। তাই বইটি মেলা থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সচেতন পাঠকেরাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিভিন্নভাবে। কবি সৈকত আমীন জানিয়েছেন, লেখক বা তাঁর লেখার সমালোচনা হতে পারে। তবে এভাবে বই প্রত্যাহার করে নেওয়া সমর্থন করেন না তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিব রহমানও প্রায় একই কথা জানিয়েছেন।

মেলা থেকে বই প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে বইমেলার সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা মেলার শুরু থেকেই বলে দিয়েছি, মেলার নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বই মেলায় বিক্রি করা যাবে না। টাস্কফোর্স প্রতিনিয়ত মেলা মনিটরিং করছে এবং সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ ব্যক্তিগত আক্রমণ, নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও কপিরাইট ইস্যুর কারণে আটটি প্রকাশনীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ বাংলা একাডেমি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলার সদস্যসচিব ডক্টর কে এম মুজাহিদুল ইসলাম।

বই প্রত্যাহারের বিষয়ে নালন্দা প্রকাশনীর প্রকাশক রেদওয়ানুর রহমান জানিয়েছেন, বইটি মেলার শুরু থেকেই বিক্রি হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার বইটি মেলায় আর প্রদর্শন না করতে টাস্কফোর্সের সদস্যরা মৌখিকভাবে জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রমণের কথা বলেছেন। নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় বইটি আর মেলায় বিক্রি না করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাঁদের বিষয়ে লেখা হয়েছে, তাঁরা হয়তো অভিযোগ করে থাকতে পারেন। এর বাইরে এ বিষয়ে আমি আর কিছু জানি না।’

এদিকে বইমেলা থেকে বই প্রত্যাহারের প্রতিবাদ চলছে মেলার প্রবেশমুখ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। সেখানে মুখে স্কচ টেপ ও পিন গাঁথা বই হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অস্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

এত কিছুর পরও গতকাল বুধবার মেলার ১৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ৮৪টি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত