Ajker Patrika

বিদ্যালয়ের পাশেই ইটভাটা

মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেরপুর
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ০৮
বিদ্যালয়ের পাশেই ইটভাটা

মেহেরপুর জেলায় বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই যত্রতত্র এ সব ইটভাটা গড়ে উঠছে। অন্যান্য শর্ত পূরণ না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ইটভাটাগুলো গড়ে তুলেছন এর মালিকেরা। ফসলি জমিতে, স্কুল–কলেজের পাশে, শহর এলাকার মধ্যে এবং সরকারি নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনি নির্মাণ ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটাগুলো।

মেহেরপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৫০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে। তবে এর মধ্য বৈধ ইটভাটা রয়েছে প্রায় ৩০টি। বাকি অন্তত ১২০টি ইটভাটাই অবৈধ।

সরেজমিন দেখা গেছে- মেহেরপুর জেলার শহর ও গ্রামের বিভিন্ন অংশে জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা গড়ে উঠছে অনেক অবৈধ ইটভাটা। মেহেরপুর-মুজিবনগর, মেহেরপুর-কাথুলী, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-বামুন্দী সড়কে এমন ইটভাটার সংখ্যাই বেশি। স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহলকে হাত করে পরিচালিত হচ্ছে অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম। এগুলোতে কয়লার বদলে প্রতিদিনই টনের পর টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এই সমস্ত ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় দূষিত করে তুলছে বায়ুকে। আবার ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত ছাই পড়ে নষ্ট হচ্ছে ফসলের মাঠ। ইটভাটার আগুনে পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে আশপাশের বৃক্ষসম্পদ। স্কুল–কলেজের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার বায়ুদূষণের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। তারপরও এই সমস্ত ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, প্রশাসন এই সমস্ত ইটভাটা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হলেও দিন কয়েক পরে আবার তা চালু হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাংনী বাবুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি ইটভাটা। বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ইটভাটার কালো ধোঁয়া প্রায়ই ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে। আবার বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় জানালা দরজা বন্ধ করে রাখা যায় না। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। অনেকে আবার স্কুল বদল করে অন্যত্র চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও কাজ হয়নি।

মেহেরপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, জেলায় বৈধ ইটভাটা রয়েছে ৩০টির মত। কিন্তু জেলায় প্রায় ১৫০টির অধিক ইটভাটা রয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জেলায় এখনো টিনের চিমনির (ব্যারেল চিমনি) ইটভাটা রয়েছে। অনেক ইটভাটা রাজস্ব ফাঁকি দিতে কাগজে–কলমে সিঙ্গেল ইটভাটা হলেও বাস্তবে দুই চিমনির ইটভাটা।

আয়কর বিভাগ এমন ইটভাটা চোখে দেখেও দেখেন না। ফলে প্রতিবছর বছর সরকার এই সমস্ত অবৈধ ইটভাটা থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মনসুর আলম খাঁন বলেন, জেলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধে শিগগিরই কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। জেলা পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অফিস না থাকায় তাৎক্ষণিক যৌথ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। শুধু তাই নয়, এই ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে অভিযান পরিচালনাকালে উচ্চপর্যায় থেকে অনুরোধ ও বাধা আসে। তারপরও প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত